গুম-খুন-দুর্নীতি আওয়ামী লীগের রাজনীতি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। আজ শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই মন্তব্য করেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর এলাকায় পদযাত্রার পর এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
এ সময় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘২০১৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডরের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছিল। সেখানে সেই প্রতিনিধি বলেছিলেন,প্রেজেন্টস প্রাইম মিনিস্টার নিড অ্যা কম্ফোর্টেবল এক্সিট। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী ১৭ সালে আরামদায়ক প্রস্থানের পথ খুঁজছিলেন। তাঁর লোকজনের নিরাপত্তা চাচ্ছেন। আমরা এর কারণ জানতে চাইলে বলেন, আমরা-আপনারা কিছুই জানি না। কেবল তিনিই জানেন তিনি কী করেছেন।’ অর্থাৎ শেখ হাসিনাই জানে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন থেকে শুরু করে যত গুম-খুন হয়েছে, সবই তিনি জানেন। লক্ষকোটি টাকা কীভাবে বিদেশে গেছে, কীভাবে শেয়ার মার্কেট লুট হয়েছে, সবই তিনি জানেন। তাঁর আছে তিনটা গুণ—গুম, খুন আর দুর্নীতি। এটাই হচ্ছে শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের রাজনীতি। এই রাজনীতি করার জন্য দেশের মানুষ যুদ্ধ করেনি। তাঁর একটা পাগল আছে, নাম ওবায়দুল কাদের। আপনারা যদি পদযাত্রাকে ভয় না পান, তাহলে এত হইচই করেন কেন? নীরব পদযাত্রাকে যারা ভয়, তাদের অবস্থা বুঝে নিতে হবে কী হালে আছেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘২০১৮ সালে নয়ছয় করে জিতেছেন। ২০১৪ সালে তো ভোটের আগেই ১৫৩ আসনে বিনা ভোটে জয়লাভ করেছেন। ফলে বাকি আসনে নির্বাচন হলো কী হলো না—সেটা বিষয় না। ’১৮ সালের নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে দিয়েছেন। প্রতিযোগিতায় নামল পুলিশেরা, কে কত ভোট দিতে পারে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কখনো ৭০ পার্সেন্টও ভোট পড়েনি। কিন্তু ১৮ সালের নির্বাচনে ১১৭ শতাংশ, ১০২ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। মরা মানুষ, প্রবাসী মানুষও ভোট দিয়েছে। মানুষ মশকরা করে বলল—কবর থেকে ভোট দিতে আইল, আমরা দেখতে পারলাম না। শেষ দেখা যদি দেখতাম। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের ভোটের নমুনা। জনগণের সঙ্গে এই ধরনের মশকরা সাংবিধানিক অপরাধ। আমরা একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন চাই। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হলে সর্বপ্রথম প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন ঘোষণার পর কখনই পার্লামেন্ট বলবৎ থাকে না। আসন শূন্য না হলে সঠিক নির্বাচন হয় না। এই অবৈধ পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করতে হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করার মতো যোগ্যতা রাখে না। তারা সরকারের ফরমায়েশ পালন করার জন্য এই কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশনকে পদত্যাগ করতে হবে।’
নতুন রাষ্ট্রপতি প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা দাবি তুলছি, কেয়ারটেকার সরকারে বিএনপি থেকে কাউকে নিতে হবে না। দেশে অনেক শিক্ষিত এবং নিরপেক্ষ লোক আছে। তাদের নিয়ে সরকার গঠন করে আপনি মাঠে আসেন, নির্বাচন করেন। সেই নির্বাচনে বিএনপিসহ সবাই অংশ নেবে। আপনি সংবিধান পরিবর্তন করেন, আমাদের আর আন্দোলনের দরকার নাই। আমরা যথাসময়ে নির্বাচনে অংশ নেব। যাকে নতুন রাষ্ট্রপতি বানিয়েছেন, তাঁর হাতে দায়িত্ব দিয়ে পদত্যাগ করেন, আমরা নির্বাচনে আসব।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, বিদ্যুৎ খাতে যত অপকর্ম আছে—সেসব ঢাকতে ইনডেমনিটি বিল পাস করেছেন। অর্থাৎ যা করেছেন সেই বিষয়ে কেউ প্রশ্ন বা মামলা-মোকাদ্দমা করতে পারবে না। এবার আরেকটা বিল পাস করেন যে ক্ষমতা থেকে নামলে আপনাকে ধরাছোঁয়া যাবে না। তারপর একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে ক্ষমতা থেকে নামেন। খামাখা মানুষকে আর কষ্ট দিয়েন না। আর যদি সেই পথে না হাঁটেন, তাহলে দেশ যেভাবে স্বাধীন হয়েছে, সেভাবেই গণতন্ত্র আবার প্রতিষ্ঠিত হবে। সেদিন আর কোনো ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ থাকবে না।’
ভারতের আদানি প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে নাকি তিনি ভর্তুকি দিতে পারবেন না। কার টাকা আপনি দেবেন না? শেয়ার মার্কেটের টাকা কই? কুইক রেন্টাল আর ক্যাপাসিটি ট্যাক্স দেন, অথচ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় না। নতুন করে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আনবেন, তা-ও ভারত সরকার থেকে না। শেখ হাসিনার যেমন দরবেশ আছে, ভারতের তেমন আদানি আছে। এই আদানির সঙ্গে চুক্তি করেছে, ২৫ বছরে ক্যাপাসিটি ট্যাক্স দেবেন ১ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ দিক বা না দিক টাকা দেবে হবে। যেমন এখানে শিকদারেরা করেছে কুইক রেন্টালে। তাদের ট্যাক্স দিয়ে যাওয়া হচ্ছে জনগণের টাকায়। আদানির কথা ভারতীয় পার্লামেন্টেও ঝড় উঠেছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য দ্বিগুণ অর্থ নিচ্ছে। এর মানে যদি ২০০ ডলারে এক টন কয়লা পাওয়া যায়, সেখানে বাংলাদেশকে দিতে হবে ৪০০ ডলার। এটা কি মগের মুল্লুক? দেশের টাকা এভাবেই পাচার হয়। দেশের ব্যবসায়ীরা আজকে স্বস্তিতে নেই। এলসি খুলতে পারছে না। ব্যাংক টাকা দিতে পারে না। ব্যাংকের টাকা এই দুই বোনের কাছে। শেখ হাসিনা ও রেহানার কাছে। এই কথা সবাই জানে। এর জন্য তথ্যপ্রমাণের দরকার নেই। আমরা রাজপথ থেকেই আমরা আমাদের অধিকার আদায় করব।’
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় সহআন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান প্রমুখ।