একসময় ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ছিলেন এমদাদুল হক মানিক। মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে সফলভাবে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তবে নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি ও পেশিশক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এক মেয়াদে চেয়ারম্যান থাকা সত্ত্বেও আর অংশ নেননি কোনো নির্বাচনে। এই সময়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন একজন আদর্শ কৃষক হিসেবে।
ত্রিশালের হরিরামপুর ইউনিয়নের মাগুর জোড়া গ্রামের সন্তান এমদাদুল হক মানিক পরিশ্রমী ও উদ্যমী একজন কৃষক। কর্মদক্ষতা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি কৃষি খাতে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সাবেক চেয়ারম্যান হয়েও কৃষিকাজকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি।
ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি ছিল তার গভীর আগ্রহ। চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায়ও কৃষিকাজ চালিয়ে গেছেন এবং চেষ্টা করেছেন আধুনিক ও বিষমুক্ত নিরাপদ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর পুরোপুরি কৃষির সঙ্গে যুক্ত হন এবং বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদনে মনোযোগী হন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে তিনি কৃষিকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু প্রচলিত পদ্ধতিই নয়, আধুনিক প্রযুক্তি, জৈব সার ও প্রাকৃতিক বালাইনাশক ব্যবহার, উন্নত সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়েছেন তিনি। তার খামারে বিভিন্ন ধরনের সবজি, ফলমূলসহ নানান ফসল চাষ হচ্ছে।
শুরুর দিকে কৃষিকাজে নানা বাধার সম্মুখীন হলেও নিজের অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের ফলে তিনি সফলতা অর্জন করেন। তাঁর উৎপাদিত কৃষিপণ্য স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকাতেও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ফেসবুকে তিনি নিয়মিত কৃষি বিষয়ক উপদেশমূলক ভিডিও প্রকাশ করেন, যা দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হচ্ছেন এবং আধুনিক নিরাপদ কৃষিপদ্ধতি অনুসরণে আগ্রহী হচ্ছেন।
এমদাদুল হক মানিক প্রমাণ করেছেন—সঠিক পরিকল্পনা ও পরিশ্রম থাকলে কৃষি খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন সম্ভব। তার এই সাফল্যের গল্প নতুন প্রজন্মের কৃষকদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘জনগণ আমাকে ভালোবেসে এক মেয়াদে চেয়ারম্যান বানিয়েছিল। পরবর্তীকালে নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি ও পেশিশক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় আর আগ্রহ পাইনি। কৃষিকাজে আমার ভীষণ ভালো লাগে, তাই এখন কৃষি নিয়েই আছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বালাইনাশক হিসেবে আমি শ্যাম্পু, সাবানের গুঁড়া, গুল, কেরোসিন তেল ও হলুদের গুঁড়া ব্যবহার করি—যা সহজলভ্য ও প্রাকৃতিক। ছত্রাক দমনে তুঁতে ও চুন দিয়ে তৈরি বোর্দো মিশ্রণ, আর ভাইরাস প্রতিরোধে পেঁয়াজ ও রসুনের রস ব্যবহার করি। এ ছাড়া নিমপাতা, বিষকাটালি পাতার রস, মেহগনির বীজের রসও ব্যবহার করি। অতিরিক্ত ছত্রাক ও ভাইরাস দেখা দিলে আমি বায়ো-এনভির ও বায়ো-এলিন মতো জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করি।’
তবে স্থানীয় কৃষি অফিসের মাঠকর্মীদের প্রতি কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে ফোন করলেও অনেক সময় মাঠকর্মীকে পাওয়া যায় না। তারা খোঁজও নেয় না। তাই আমি নিজেই বিভিন্ন উৎস থেকে জেনে-বুঝে কাজ করি।’
এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহানূর আলম অপু অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলার সময় তার বক্তব্যে কিছু অসংগতি দেখা যায়, যা দায়িত্ব পালনে গাফিলতির ইঙ্গিত দেয়।