শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে নেওয়া ঋণ গরু বিক্রির টাকায় শোধ করে এক মণ দুধ দিয়ে গোসল করেছেন শহিদুল ইসলাম (৩৫) নামের এক রাজমিস্ত্রি। গোসল সেরে তিনি শপথ নিয়েছেন জীবনে আর কোনো দিন সমিতি বা এনজিও থেকে ঋণ নেবেন না।
দুধ দিয়ে গোসল করার ঘটনাটি গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নালিতাবাড়ী উপজেলার জাঙ্গালিয়াকান্দা গ্রামে ঘটে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। শহিদুল ইসলাম ওই গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি।
শহিদুলের পরিবার ও স্থানীয় লোকজন জানান, সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজমিস্ত্রির কাজ করে তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার শহিদুলের। এক বছর আগে স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন তিনি। ওই ঋণের টাকা সাপ্তাহিক কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা থাকলেও সংসারের টানাটানিতে তিনি নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছিলেন না। এতে ওই এনজিও কর্মকর্তাদের চাপের মুখে পড়ে হাঁস-মুরগি বিক্রি করে কিস্তির টাকা দিচ্ছিলেন।
এদিকে রাজমিস্ত্রির কাজ নিয়মিত না থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন শহিদুল। এতে ঋণের কিস্তির চাপে তাঁর কাজকর্মেও মন বসছিল না। অনেকটা অসহায় হয়ে ঋণ পরিশোধ করতে সবশেষে সিদ্ধান্ত নেন তার একমাত্র ষাঁড়-গরু বিক্রি করে দেওয়ার। এরপর গরু বিক্রির টাকায় ঋণ পরিশোধ করে গতকাল বিকেলে দুধ দিয়ে গোসল করেছেন। এ সময় শহিদুল জীবনে কোনো দিন ঋণ বা সুদে টাকা ধার না নেওয়ার শপথ নেন বলে জানান শহিদুলের পরিবার ও স্থানীয় লোকজন জানান।
এ বিষয়ে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। আমি গরিব মানুষ। ঠিকমতো কিস্তি দিতে পারি না। রাজমিস্ত্রির কাজ করি, একদিন কাজ থাকলেও আরেক দিন কাজ থাকে না। তখন বসে থাকতে হয়। তাঁদের কিস্তির চাপে পড়ে শেষ সম্বল গরুটি বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করলাম। দুধ দিয়ে গোসল করে শপথ নিলাম, জীবনে আর কখনো কোনো জায়গা থেকে সুদে টাকা নেব না।’