হোম > সারা দেশ > কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জে বিএনপির ৭ বিদ্রোহী প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল, চিন্তিত তৃণমূল নেতা-কর্মীরা

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জে মনোনয়নপত্র জমা দেন বিএনপির এক বিদ্রোহী প্রার্থী। ছবি: আজকের পত্রিকা

কিশোরগঞ্জ জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে বিএনপির সাতজন বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে এতে চিন্তিত তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা মনে করছেন, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের বিপরীতে নিজ দলের অন্য নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ালে তা শেষ পর্যন্ত পুরো দলের জন্যই বিপদ ডেকে আনতে পারে। কারণ, দলের ভেতর এমন বিভক্তির সুযোগ নিতে পারে অন্যরা। এসব আসনে প্রার্থিতা নিয়ে বিরোধের অবসান ঘটলে বিএনপির জয় নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।

কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম। তিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে তিনি জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আসলাম মোল্লার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এই আসনে মনোনয়ন না পেয়ে একই দিন বিএনপির চার বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁরা হলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হিলালী, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ রেজাউল করিম খান, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি রুহুল হোসাইন ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ।

বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বলছেন, আসনটিতে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন-বিক্ষোভ হয়েছে। নেতারা একে অন্যের বিষোদ্‌গার করেছেন। হয়েছে বাক্‌যুদ্ধ। প্রকাশ্য সমাবেশে বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে সমালোচনা করছেন। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা জানান, নেতাদের এমন অবস্থান নিয়ে চিন্তিত তাঁরা। ভেদাভেদ ভুলে সবাই একসঙ্গে দলীয় রাজনীতি করবেন, এটাই চান তাঁরা।

বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘সদর ও হোসেনপুর উপজেলার জনগণের ভালোবাসায় ও প্রেশারে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছি। নির্বাচনে যাব কি যাব না, তা আগামী ২০ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন আলোচনা করে আপনাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।’

কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে আইনজীবী মো. জালাল উদ্দীনকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনি সোমবার দুপুরে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। জালাল উদ্দীন পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক। এই আসনে অবশ্য দলীয় কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। তাই অনেকটা নিশ্চিন্তে রয়েছেন তিনি।

কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. মুহাম্মদ ওসমান ফারুক সোমবার দুপুরে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ওসমান ফারুক বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান। এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা। এর আগে ওসমান ফারুকের মনোনয়নের বিরোধিতা করেছেন জাহাঙ্গীর আলম। ১২ ডিসেম্বর জেলা শহরের স্টেশন রোডে একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীর আলম ওসমান ফারুকের বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কথা জানিয়ে তিনি প্রার্থী হতে সক্ষম কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ ছাড়া মনোনয়ন চেয়ে বিশাল শোডাউনও করেন জাহাঙ্গীর আলম।

জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা বলেন, ‘বিগত দিনে দলের ক্রান্তিকালীন ও দুর্যোগপূর্ণ সময়ে নেতা-কর্মীদের পাশে আমি ছিলাম। দল আমাকে কীভাবে মূল্যায়ন করল সেটা বড় বিষয় নয়, আগামীতেও নেতা-কর্মীদের পাশে থাকব। এই কথা সত্য, দল আমাকে পরিচিতি দিয়েছে, সেই দলেই আমার শেষ ঠিকানা। এটার মধ্যেই আমি বিশ্বাস রাখতে চাই।’

অন্যদিকে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনে আলোচিত বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। গত রোববার তিনি ইটনায় নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়ন না পাওয়া বিএনপি নেতা সাবেক জেলা প্রশাসক আবদুর রহিম মোল্লাও একই দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তবে জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম জানিয়েছেন, আবদুর রহিম মোল্লার বিএনপিতে প্রাথমিক সদস্যপদও নেই। তিনি বিএনপির কেউ নন।

কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনে বাংলাদেশ জাতীয় দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগদান করা সৈয়দ এহসানুল হুদাকে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনিও সোমবার দুপুরে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এই আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে এদিন দুপুরে বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। যদিও এই আসনে বিএনপি থেকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল শেখ মজিবুর রহমানকে। কিন্তু ২২ ডিসেম্বর নিজের দল বিলুপ্ত করে সৈয়দ এহসানুল হুদা বিএনপিতে যোগদান করায় তাঁকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হন মজিবুরের অনুসারীরা। ২৪ ডিসেম্বর বাজিতপুরের সরারচর রেলস্টেশনে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন মজিবুরের কর্মী-সমর্থকেরা। পরে ২৬ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কারণে এক দিন বিরতি দিয়ে ফের বিক্ষোভ করেন তাঁরা। ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ মিছিল ও মশাল মিছিল করেন তাঁরা।

কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমি মনোনয়নপত্র দাখিল করিনি। আমার পক্ষে বাজিতপুর নিকলীর বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণ মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাঁদের আবেগ-অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি প্রার্থী হয়েছি।’

সোমবার দুপুরে কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে বিএনপি থেকে মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম। এই আসনে দলের মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকায় নির্ভার রয়েছেন তিনি।

বিদ্রোহী প্রার্থী ও দলীয় বিভক্তি নিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম বলেন, ‘মনোনয়ন দেওয়া হয় দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে এসেছেন। জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে আমি বিষয়টি কেন্দ্রে জানাব। দলের সভাপতি হিসেবে আমি চাই না কেউ বিদ্রোহী থাকুক। দলটা সবাইকে নিয়েই করতে হবে।’

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ৬১ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আগামী শুক্র ও শনিবার মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে।

জমি অধিগ্রহণ: ক্ষতিপূরণ মেলেনি ছয় বছরেও

তীব্র শীতে শীতার্তদের পাশে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন, রেলস্টেশনে কম্বল বিতরণ

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার মিলল পৌনে ১২ কোটি টাকা

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার রেকর্ড ৩৫ বস্তা টাকা, চলছে গণনা

মুরগি কেনার সিরিয়াল নিয়ে তর্ক, বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যা

সুদানে ড্রোন হামলায় শহীদ পাকুন্দিয়ার সেনাসদস্য জাহাঙ্গীর আলমের দাফন

বিয়ের তিন বছরের মাথায় স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ

নরসুন্দার তীর থেকে ৪ শতাধিক গ্রিল উধাও

বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপির দলীয় স্লোগান, নিষেধ করায় তোপের মুখে ইউএনও

যুবদল নেতার মামলায় আসামি মৃত ব্যক্তি, হাজতি ও প্রবাসী