সাতক্ষীরার তালায় আমন মৌসুমে সরকারি ধান-চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে গত ১৯ ডিসেম্বর। এক মাস ১২ দিন পার হলেও এক ছটাক ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি উপজেলা খাদ্য বিভাগ। তবে নির্ধারিত পরিমাণের প্রায় অর্ধেক চাল সংগ্রহ হয়েছে। এমন অবস্থায় ধান সংগ্রহে ব্যর্থতার জন্য কেনার দামের ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তালা উপজেলা খাদ্য কার্যালয় জানায়, উপজেলা এবার আমন মৌসুমে ৫৩১ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৪৭১ টন। তবে আজ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত খাদ্যগুদামে এক ছটাক ধানও সংগৃহীত হয়নি। এ সময়ের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৩৭৭ টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।
চলতি মৌসুমে প্রতি কেজি আমন ধানের দাম ধরা হয়েছে ২৮ টাকা ও চাল ৪২ টাকা। ধান-চাল সংগ্রহ শেষ হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি।
কৃষকেরা জানান, ২৮ টাকা দরে সরকারিভাবে ধানের সংগ্রহমূল্য প্রতি মণ ১ হাজার ১২০ টাকা। অন্যদিকে হাট-বাজারে বর্তমানে প্রতি মণ ধান প্রকারভেদে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষক ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবসায়ীরা ধান কিনে রেখেছেন। কৃষকের কাছে ধানই নেই।
একদিকে সরকারি দামের চেয়ে ধানের বাজারদর বেশি, অন্যদিকে চালের সরকারি মূল্য প্রতি কেজি ৪২ টাকা হলেও বাজারে এ দরে কোনো চাল নেই বলে জানান কৃষকেরা।
স্থানীয় কৃষক মামুন শেখ জানান, সরকারি গুদামগুলোয় নানা ধরনের নিয়ম রয়েছে। এগুলো বাড়তি ঝামেলা। এরপর রয়েছে পরিবহন ব্যয়। ব্যবসায়ীদের কাছে অনেক সময় বাড়িতে বসেই ধান বিক্রি করা যায় এবং সেটা নগদ টাকায়। তাই কৃষকেরা মোকাম বা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।
কৃষক মামুন শেখ বলেন, সরকারি গুদামে বিক্রির পর টাকা পেতেও কয়েক ধাপের প্রক্রিয়া পার করতে হয়।
উপজেলা মিল মালিক সমিতির সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন রঞ্জু বলেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে প্রতি কেজি চাল দাম তিন থেকে চার টাকা বেশি। বর্তমান বাজারে যে দামে ধান বিক্রি হচ্ছে তা থেকে চাল তৈরি করলে সর্বনিম্ন দাম দাঁড়ায় ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। কিন্তু সরকার নির্ধারণ করেছে ৪২ টাকা। ফলে কেজিতে ৪-৬ টাকা লোকসান গুনে কীভাবে চাল দেওয়া সম্ভব!
তালার পাটকেলঘাটা খাদ্যগুদাম (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা আবুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কৃষকের কাছ থেকে কোনো ধান সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। কারণ সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় কৃষক গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নন।’