কৃষকের ক্ষতি
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার এলজিইডির সড়ক প্রশস্তকরণ ও দৃঢ়ীকরণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি এ প্রকল্পের কাজে নিম্নমানের উপকরণ, সঠিকভাবে সেতু (সাঁকো) নির্মাণ না করা, এমনকি তিন ফসলি জমির মাটি খননযন্ত্র দিয়ে কেটে রাস্তার সাইড ফিলিং করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নের মোলামগাড়ী হাট থেকে ধাপের হাট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার রাস্তায় এই কাজ চলছে। জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এলজিইডির আরডিআইআরডব্লিউএসপি প্রকল্পের আওতায় ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৭০ হাজার ৯৫১ টাকায় এ কাজ বাস্তবায়ন করছে চুয়াডাঙ্গার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাকাউল্লাহ অ্যান্ড ব্রাদার্স লিমিটেড। কাজটি শুরু হয়েছে চলতি বছরের ১ এপ্রিল। শেষ হওয়ার কথা ১১ নভেম্বর, ২০২৫।
প্রকল্প এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরোনো রাস্তার কার্পেটিং ও ব্রেডের খোয়া তুলে শুধু পাথর সমতল করে রোলার দিয়ে চেপে দেওয়া হচ্ছে। তার ওপর খোয়া ছিটিয়ে পিচ ঢালার প্রস্তুতি চলছে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, এভাবে কাজ করলে রাস্তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। অভিযোগ রয়েছে, রাস্তায় ব্যবহারের জন্য নিম্নমানের খোয়া এনে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় ওবায়দুর রহমান নামের এক বাইসাইকেল আরোহী বলেন, ‘রাস্তায় যে খোয়া রাখা হয়েছে, এগুলো গড়াই ইট। মান ঠিক নেই, কাজও টেকসই হবে না।’
এ ছাড়া জানা গেছে, প্রকল্পে বরাদ্দে তিনটি কালভার্ট নির্মাণের কথা থাকলেও পুরোনো বড় একটি কালভার্টের কাজ বন্ধ করে নতুন সেতু নির্মাণের কথা বলা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার ও এলজিইডির প্রকৌশলীর যোগসাজশে বড় কালভার্টটি বাদ দিয়ে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তির জমির কারণে অন্যত্র কালভার্ট নির্মাণের পাঁয়তারা চলছে। এখনো বড় কালভার্টটি দৃশ্যমান হয়নি।
বরাদ্দে ওই সড়কের নানাহার গ্রামের বসনাহার মাঠের পশ্চিম পাশে ‘ভাই ভাই নার্সারি’-সংলগ্ন উত্তর পাশে একটি, এর প্রায় ১০০ মিটার দূরত্বে দ্বিতীয়টি এবং আরও ৮০ মিটার দূরত্বে দক্ষিণ পাশে তৃতীয়টিসহ মোট তিনটি কালভার্ট রয়েছে। পুরোনো বড় কালভার্টটি তুলে নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তির জমির মুখে সেতু পড়ায় প্রকৌশলী ও ঠিকাদার যোগসাজশে কালভার্ট অন্যত্র সরানোর চেষ্টা করছেন। এতে জলাবদ্ধতায় ফসলহানি হচ্ছে বলে কৃষকেরা অভিযোগ করেন।
তিন ফসলি জমি কাটার অভিযোগের বিষয়ে ঢাকুড়িয়া গ্রামের কৃষক গোলাপ হোসেন, সিরাজুল ইসলাম, সাহাজুলসহ অনেকে বলেন, তাঁদের জমি থেকে অনুমতি ছাড়াই খননযন্ত্র দিয়ে দুই থেকে আড়াই ফুট গভীর করে মাটি কেটে রাস্তার পাশে ফেলা হয়েছে। এতে জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মাহবুব আলম বলেন, ‘এলজিইডির ডিজাইন ও শিডিউল অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। মাটি সড়কের পাশে রাখা হলেও খননযন্ত্র দিয়ে সেগুলো আবার তুলে নেওয়া হয়েছে। খোয়াগুলোর মান ল্যাবে পরীক্ষিত।’
এলজিইডির কালাই উপজেলা প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষকেরা যে কালভার্ট বন্ধের কথা বলছেন, সেটি এলজিইডি বা ঠিকাদার করেননি। কে বন্ধ করেছেন জানি না। জমির মাটি কাটার ব্যাপারে যাঁরা বাধা দেননি, তাঁদের জমি থেকে মাটি নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ নিয়ম মেনে করা হচ্ছে। এলজিইডির পক্ষ থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।’