ঢাকার কেরানীগঞ্জে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীসহ দুই পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।
আজ শুক্রবার সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন জিনজিরা এলাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির জনসমাবেশের আগে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানান কেরানীগঞ্জে মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশিদ জানান।
সকালে উপজেলার জিনজিরা বাস রোড এলাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা জেলা বিএনপি। বিএনপির দাবি সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই বেলা পৌনে ১১টার দিকে সমাবেশকে ঘিরে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন।
অন্যদিকে বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ দাবি করে, বিএনপি সমাবেশ না করে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা করেছে। এতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আজাহার বাঙ্গালীসহ অন্তত ১৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
আহতেরা স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে বিএনপি নেত্রী নিপুণ রায়কে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। এদিকে বেলা সোয়া ১১টার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে সাড়ে ১১টার দিকে পূর্বনির্ধারিত স্থানেই বিএনপি সমাবেশ শুরু করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেলা পৌনে ১১টার দিকে যুবদলের একটি মিছিল জিনজিরা ছাটগাঁও এলাকা থেকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে দিয়ে সমাবেশস্থলের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ দুই পক্ষের নেতা–কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এদিকে বিএনপির নেতা–কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায় পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক বলেন, ‘আমরা সকাল ৮টা থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। বেলা পৌনে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা আমাদের নেতা–কর্মীদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। তাঁদের ছোড়া ইটের আঘাতে নিপুণ রায়সহ আমাদের ১০-১৫ জন নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। হামলার পরে আমাদের প্রধান অতিথি এলে আমরা আমাদের সমাবেশ সম্পন্ন করি।’
এদিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ দাবি করেন, ‘শান্ত কেরানীগঞ্জকে অশান্ত করার মিশন নিয়ে কাজ করছে বিএনপি। তাঁরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে সমাবেশের নামে আমাদের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেছে। তাঁদের হামলায় আমাদের সহসভাপতি আজাহার বাঙ্গালীসহ অন্তত ১৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। আজকের এই হামলার প্রতিবাদে শনিবার বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করার পাশাপাশি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম বলেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে। বিএনপির কিছু অতি উৎসাহী কর্মী আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা করেন। এর আগে সংঘর্ষে ও ইটের আঘাতে দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।