হোম > সারা দেশ > ঢাকা

কোভিড বর্জ্য নিয়ে সঠিক ব্যবস্থাপনা নেই, বাড়ছে ঝুঁকি

আজাদুল আদনান

ঢাকা: রাজধানীতে চলার পথে হরহামেশাই যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা যায় করোনা সুরক্ষা সামগ্রী মাস্ক। আবার সারাদিন ব্যবহার করা সেই মাস্ক ঘরে ফিরে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে ময়লার ঝুড়িতে। সেখান থেকে যাচ্ছে ডাস্টবিনে। শুধু মাস্ক নয়, হাসপাতালের ব্যবহৃত বর্জ্য, বাসা–বাড়িতে করোনা রোগীদের ব্যবহৃত বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে ময়লার ভাগাড়ে। কোভিডের এমন সুরক্ষা সামগ্রীর অব্যবস্থাপনা ও অসচেতন ব্যবহারে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও জন্ডিসের মতো জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাজধানীর রামপুরা–বনশ্রীতে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন সোহেল রানা (২৬)। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, প্রায় সব বাসায় সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে মাস্ক, গ্লাভসসহ অন্যান্য সামগ্রী পাওয়া যায়। গত বছর করোনার শুরুতে অনেকে আলাদা করে এসব বর্জ্য রাখলেও এখন সবাই একই সাথে রাখে। আমরাও সেভাবে নিয়ে আসি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে করোনাক্রান্তদের অধিকাংশই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাই বাসা বাড়িতেই সবচেয়ে বেশি কোভিড বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতাল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা হলেও বাসা বাড়ির এসব বর্জ্যের এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারেনি দুই সিটি করপোরেশন।

কোভিড বর্জ্য আলাদা করতে না পারা ও ময়লা পোড়ানোর ব্যবস্থা না থাকায় সব বর্জ্য একসঙ্গেই ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়। অথচ এসব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা আছে। কিন্তু মানছে না দুই সিটি করপোরেশন। এতে করে দীর্ঘ মেয়াদে রোগ জীবাণু বাসা বাঁধার আশঙ্কা প্রকট হচ্ছে।
ব্র্যাকের গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে কোভিড–১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসা বর্জ্যের মাত্র ৬ দশমিক ৬ ভাগের সঠিক ব্যবস্থা হয়। বাকি ৯৩ দশমিক ৪ ভাগ বর্জ্যই সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় নেই।

গবেষণায় দেখা যায়, সারাদেশে চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৪৮ টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। যার মাত্র ৩৫ (১৪ দশমিক ১ শতাংশ) টন সঠিক নিয়মে ব্যবস্থাপনার আওতায় আছে। এর অধিকাংশই আবার রাজধানী ঢাকা শহরে সীমাবদ্ধ। বর্জ্য আলাদা করার ব্যবস্থাপনা থাকলেও, তা বিনষ্ট বা শোধন করার নিজস্ব কোনো ব্যবস্থাপনা নেই কেন্দ্রগুলোতে।

বাসা–বাড়ির কোভিড বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছে প্রিজম বাংলাদেশ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। গৃহস্থালি থেকে আলাদা করে কোভিড বর্জ্য সংগ্রহ করে তা ধ্বংসের প্রস্তাব দিয়েছিল দুই সিটি করপোরেশনকে।

প্রিজমের নির্বাহী পরিচালক খোন্দকার আনিসুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমরা যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম উত্তর সিটি করপোরেশন সম্মতি দিলেও অন্যটি থেকে পাইনি। উত্তরের পাঁচটি জোন কোভিড বর্জ্য রাখে। আমরা সেগুলো ধ্বংসের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। যে পরিমাণ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী আসার কথা তা আসছে না। এখন সাধারণ ও মেডিকেল বর্জ্য মিশে যাচ্ছে। বর্তমানে গড়ে দৈনিক দশ থেকে বার টন বর্জ্য আমরা সংগ্রহ করি। এর মধ্যে মেডিকেল বর্জ্য থাকে চার টনের মতো।

দেশে করোনাকালীন সময়ে চালানো বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) সমীক্ষা মতে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সুরক্ষা সামগ্রীর বর্জ্য ও মেডিকেল বর্জ্যের মাত্র ৬ দশমিক ৬ শতাংশ সঠিক ব্যবস্থাপনার আওতায় এসেছে। একবার ব্যবহৃত দ্রব্য থেকে গত বছর এপ্রিলে এক মাসে দেশে ১৪ হাজার ১৬৫ জন টন ক্ষতিকর প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়েছে। যার ১২ দশমিক ৭ শতাংশ এসেছে সার্জ্যিক্যাল ফেইস মাস্ক থেকে।

ওই সময়ে প্রায় সাড়ে ৪৫ কোটি সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করা হয়েছে। যা থেকে অন্তত ১ হাজার ৫৯২ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়েছে। অন্য শহরের তুলনায় ঢাকায় এর পরিমাণ বেশি। এ বছরের সেই সংখ্যা দ্বিগুণ না হলেও আগের তুলনায় বাড়বে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

তবে সিটি করপোরেশন বলছে, সঠিক তথ্য না থাকায় কোভিড বর্জ্য নিয়ে কাজ করা খুব কঠিন। অধিক কোভিডভুক্ত এলাকা চিহ্নিত করতে পারলে এ কাজে গতি আনা যেত।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে কোভিড বর্জ্যের পার্থক্য থাকলেও আমার কাছে কোন কোন এলাকায় কি পরিমাণ করোনা রোগী আছে সেই তালিকা নেই। তাহলে কীভাবে আমি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। পাশাপাশি আমাদের সচেতন হওয়ার প্রয়োজন আছে। আমরা যেখানে সেখানে মাস্ক, গ্লাভস ফেলছি। একবারও ভাবছি না এটি আমাদের জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।

বদরুল আমিন বলেন, কোভিড বর্জ্য সংগ্রহ নিয়ে আগামী সপ্তাহে নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। পৃথকভাবে যাতে এসব করা যায়, সেই চেষ্টা হচ্ছে।

তবে কোভিড বর্জ্য নিয়ে দুই সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইসডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন।

আজকের পত্রিকাকে মুশতাক হোসেন বলেন, সাধারণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনাই আমাদের ভালো না। এটি ঠিকঠাক করা গেলে কোভিডও ভালো হতো। সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে কোনোভাবেই কোভিড বর্জ্য একসঙ্গে করা যাবে না। কিন্তু এখন তো সব একাকার করা হচ্ছে। অব্যবস্থাপনার প্রধান কারণ হচ্ছে এই খাতে পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে না। পাশাপাশি আরো জনবল দরকার। তাদেরকে বারবার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ঢাকা শহরের অধিকাংশই প্রান্তিক অঞ্চল থেকে ওঠে আসা মানুষ। অথচ তাদের বর্জ্য কোথায় ফেলবে তা নিয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই।

এই উপদেষ্টা বলেন, বর্জ্য ধ্বংসে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নেই, আবার যতটুকু অর্থ বরাদ্দ হয়, সেটিও ঠিকমতো খরচ হয় না। বর্জ্য নিষ্কাশনে যদি আমরা অর্থ বরাদ্দ করি তাহলে আমরা অনেক জটিল রোগ বালাই থেকে মুক্তি পাব।

শহীদ জিয়ার কবরের পূর্ব পাশে খোঁড়া হচ্ছে নতুন কবর

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

রাষ্ট্রীয় শোক: ঢাকায় ৩ দিন আতশবাজি, পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ

খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে বাড়ানো হলো মেট্রোরেলের ট্রিপ

হাদি হত্যা মামলা: সিবিউন-সঞ্জয়ের তৃতীয় দফায় রিমান্ড, ফয়সাল নামে আরও একজন রিমান্ডে

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জাবিতে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ফোরামের কালো ব্যাজ ধারণ

রাজধানীর রামপুরায় অটোরিকশার ধাক্কায় বৃদ্ধের মৃত্যু

গয়েশ্বর চন্দ্রের আসনে বিএনপির বিদ্রোহী তিন বড় নেতাসহ ১৬ প্রার্থী, শক্ত লড়াইয়ের আভাস

খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর শুনে এভারকেয়ারের সামনে ভিড়, পুলিশের ব্যারিকেড

হারিয়ে যাওয়া কনাই নদ উদ্ধার উদ্‌যাপন