ইসলামবাগ থেকে নিজেদের বাড়ির কাজের জন্য স্যানিটারি পণ্য কিনতে এসেছিলেন মমিনুল ইসলাম ও নদী বেগম দম্পতি। গুলিস্তানের যে পাঁচতলা ভবনে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেটির নিচতলায় ছিল স্যানিটারি পণ্যের দোকান। পণ্য কিনে আর বাড়ি ফেরা হয়নি তাঁদের। দুজনের রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত লাশ এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। লাশ গ্রহণের দাপ্তরিক কাজ সারছেন ঘটনার আকস্মিকতায় হতবিহ্বল স্বজনেরা।
হাসপাতালের এ-ঘর ও-ঘর দৌড়াদৌড়ি করছেন নিহত দম্পতির স্বজন আব্দুর রহিম। তিনি আজকের পত্রিকার এ প্রতিবেদককে বলেন, 'দুপুরে স্যানিটারি মালামাল কিনতে আসে তারা। বিস্ফোরণের সময় ঘটনাস্থলেই মারা যায় নদী। তার লাশ মেডিকেলে আছে খবর পেয়ে এখানে আসি। নদী আমার ভাস্তে বউ, তাকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে করতেই খবর পাই আমার ভাস্তে মমিনুলের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। এখন আমরা লাশ বুঝিয়ে নেওয়ার কাজ করছি।'
মমিনুল ঢাকায় সিসি ক্যামেরা ও অন্যান্য ইলেকট্রনিকস সামগ্রীর ব্যবসা করতেন। মর্গে তাঁদের ক্ষতবিক্ষত লাশ দেখে অস্থির হয়ে পড়েছেন স্বজনেরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে তাঁদের আহাজারিতে অন্যদেরও চোখ ভিজে উঠছে।
গুলিস্তানে বহুতল ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মরদেহ এসেছে বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, অন্তত ৯০ জন বিভিন্নভাবে হতাহত হয়ে এখানে চিকিৎসাধীন। অনেকের অবস্থায় আশঙ্কাজনক মনে হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে নয়জনের পরিচয় পাওয়া গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে। নদী (৩৫) ও মমিনুল (৩৮) বাদে বাকিরা হলেন- বংশাল সুরিটোলার সুমন (২১),যাত্রাবাড়ীর শেখদির মনসুর হোসাইন (৪০), কেরানীগঞ্জ চুনকুটিয়ার রাহাত (১৮), চাঁদপুর মতলবের আল আমীন (২৩), কলাবাগান গ্রিন রোডের ইশহাক মৃধা (৩৫), বংশাল আলু বাজারের ইসমাইল (৪২) এবং কদমতলী মাতুয়াইলের মাইনুদ্দীন(৫০)।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। অনেকেই মরদেহ বুঝে নেওয়ার জন্য সজল নয়নে অপেক্ষা করছেন। অনেকেই উদ্ভ্রান্তের মতো এ-ওয়ার্ড সে-ওয়ার্ড থেকে মর্গে খুঁজে ফিরছেন স্বজনদের।
এখন পর্যন্ত কোনো মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেনি কর্তৃপক্ষ।