বাবার কপালে চুমু দিয়ে স্কুলে গিয়েছিল সারিয়া আক্তার। আর মাকে সালাম করে বিদায় নিয়েছিল জুনায়েত হাসান। হাসিমুখে স্কুলে যাওয়া এই দুই শিশু দিনশেষে ঘরে ফেরে লাশ হয়ে। সম্পর্কে তারা চাচাতো ভাই-বোন। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ‘সেকশন ক্লাউডের’ শিক্ষার্থী ছিল তারা। বাংলা মাধ্যমের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত এই দুই ভাই-বোন। তাদের দাফন হয়েছে একই সঙ্গে।
গতকাল বুধবার সকালে কথা হয় সারিয়ার বাবা রফিক মোল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘ও খুব আবেগপ্রবণ ছিল। বাপকে চুমু না দিয়ে ও ঘর থেকে বের হতো না। সেদিনও আমাকে ঘুম থেকে তুলে চুমু দিয়ে বের হয়েছিল।’
জুনায়েতের সকালটাও ছিল অনেকটা একই রকম। প্রতিদিনকার মতো সেও স্কুলের জন্য তৈরি হয়ে মাকে সালাম করে বাসা থেকে বের হয়েছিল। বাবার মোটরসাইকেলে চড়ে স্কুলে গিয়েছিল সে। স্নেহপ্রবণ বাবা জানতে চেয়েছিলেন, স্কুলব্যাগ ভারী লাগছে কি না। উত্তরে মাথা নেড়ে ‘না’ বলেছিল জুনায়েত। ছোট্ট জুনায়েতকে বেশি করে পানি খেতে বলে বিদায় নিয়েছিলেন বাবা মোহাম্মদ আসলাম। বাবা-ছেলের সেটাই ছিল শেষ কথোপকথন।
সারিয়া ও জুনায়েত—দুজনের বাবাই পেশায় ব্যবসায়ী। সারিয়ার বাবা রফিক মোল্লাহর ফুফাতো ভাই হন জুনায়েতের বাবা মোহাম্মদ আসলাম। তুরাগ থানার অধীনে নয়ানগরের স্থানীয় বাসিন্দা তাঁরা। মাইলস্টোন স্কুলের দিয়াবাড়ি ক্যাম্পাস থেকে তাঁদের বাড়ি কাছেই। তাই এই পরিবারের বেশির ভাগ ছেলেমেয়েই মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থী। বর্তমানে এই পরিবারের আরও একটি শিশু দগ্ধ অবস্থায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।
রফিক মোল্লাহ জানান, তাঁর আরেক ভাইয়ের ছেলে নাবিল মোল্লাহর সঙ্গে স্কুলে যাওয়া-আসা করত সারিয়া। নাবিলকে কফি আর চিপস আনতে পাঠিয়েছিল সারিয়া। ঠিক তখনই স্কুলভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয় যুদ্ধবিমানটি। কফি আনতে যাওয়ায় বেঁচে যায় নাবিল। আর দগ্ধ হয় সারিয়া।
জুনায়েতের বাবা মোহাম্মদ আসলাম জানান, তাঁর বড় ছেলে রাকিবুল হাসানও মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে সে। প্রতিদিন সকাল ৭টায় দুই ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যেতেন তিনি। দুই ছেলে একই ক্যাম্পাসের হলেও তাদের ক্লাস হতো আলাদা ভবনে। জুনায়েত যে ভবনে ক্লাস করত, সেটির ওপরেই বিধ্বস্ত হয়েছিল বিমানটি।