১০০ বছর পেরিয়েছে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের শ্রী কানাইলাল কুঞ্জমেলার। এ বছর মেলাটি ১০১ বছরে পদার্পণ করল। দুই দিনের এই মেলা বসে ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে। আশপাশের জেলার মানুষ সেই প্রাচীনকাল থেকে এই মেলায় অংশ নিতে আসেন।
জানা গেছে, উপজেলার চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের কানাইলাল মন্দির কমিটির উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী কুঞ্জমেলার আয়োজন করা হয়। কুঞ্জমেলার প্রথম দিন খাদ্যসামগ্রী ও দ্বিতীয় দিন মাছ বিক্রেতারা দেশি-বিদেশি মাছ নিয়ে বসেন মেলা প্রাঙ্গণে।
এ সময় সনাতন ধর্মের লোকজন টানা ১৫ দিন নিরামিষ খায়। মেলার শেষ দিন আমিষ খাদ্য গ্রহণ ও পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় তাদের আনুষ্ঠানিকতা। মেলায় মেয়েজামাই ও আত্মীয়স্বজনকে আমন্ত্রণ করে আপ্যায়নের রেওয়াজও চলে এসেছে সেই প্রাচীনকাল থেকে। বাড়িতে বাড়িতে বানানো হয় খই, মুড়কি, নারিকেল ও চালের নাড়ু। মেলা থেকে দই কিনে নিয়ে মুড়কি দিয়ে খাওয়ার রেওয়াজটিও ধরে রেখেছেন স্থানীয়রা।
গতকাল শুক্রবার সকালে মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেছে, পণ্যের পসরা নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন শতাধিক ব্যবসায়ী। মিষ্টান্ন, খেলনা, চুড়ি, ফিতা, আলতা থেকে ঘরগৃহস্থালির বিচিত্র জিনিস। মেলায় নিমকি-মুড়কি, ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়ি, চানাচুর, মিষ্টি ও জিলাপি বিক্রি করা হচ্ছে ৫০টিরও বেশি দোকানে। বিক্রিও হচ্ছে বেশ। মেলায় দর্শনার্থীরা নিমকি-মুড়কি, ফুচকা-চটপটি, ঝালমুড়ি-চানাচুর খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া মেলায় এসে ঘরে ফেরার পথে মিষ্টি ও জিলাপি এবং ফল কিনেই বাড়ি ফিরছে অনেকে। চলছে নাগরদোলা। আরও আছে হাতি, ঘোড়া, নৌকা ও নিশান টার্গেট।
ঢাকার ডেমরা থেকে সাহেরা বেগম কুঞ্জ মেলায় চুড়ি নিয়ে এসেছেন। তিনি জানান, এবার তিনি প্রথম এই কুঞ্জমেলায় এসেছেন। বিভিন্ন জনের কাছে এই কুঞ্জমেলার কথা শুনে তার এখানে আসা। অনেক লোক এবং বেচাকেনাও ভালো। তবে মেলায় নারী ও শিশু ক্রেতাই বেশি বলে জানান তিনি।
মেলায় আসা স্যুটারম্যান জানান, এবার নিয়ে চার বছর ধরে তিনি মেলায় আসেন। প্রচুর মানুষ দেখে তার খুব ভালো লাগে। তার এখানে মূলত শিশু-কিশোর ও তরুণ বয়সের লোকজন বেশি আসে। পাঁচ স্যুট ১০ টাকা।
মেলায় নরসিংদী থেকে খেলনার দোকান নিয়ে এসেছেন আফজাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি বেশ কয়েক বছর ধরে এখানে আসি। পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এখানকার কুঞ্জমেলা। বেচাকেনা যা-ই হোক, একসঙ্গে এত দর্শনার্থী দেখে ভালোই লাগে।’
উপজেলার জাঙ্গালীয়ার রয়েন থেকে শুভাস চন্দ্র দাস মাটির তৈরি তৈজসপত্র নিয়ে এসেছেন। তাঁদের দোকানে পিঠা ও রুটি তৈরির পাতিল কিনতে ভিড় করেছেন তুমলিয়া ইউনিয়নের দড়িপাড়া গ্রামের গৃহবধূ শিখা সরকার, লিপি সরকার ও দিনা সরকার।
মেলায় বাঁশ-বেতের তৈরি নানা রকম জিনিস নিয়ে আকবর আলী (৪৯) এসেছেন জামালপুর জেলা থেকে। তার সঙ্গে আসেন একই এলাকার ধীরেন্দ্র (৪৮)। তাঁরা প্রতি বছর এই মেলায় আসেন। আগে বাপ-চাচারা আসতেন। বয়স হওয়ায় তাঁরা এখন আর আসেন না। তাই বংশপরম্পরায় তাঁরা আসেন।
কানাইলাল মন্দির ও মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি মুকুল চন্দ্র দে বলেন, ১০১ বছরে পড়ল কুঞ্জমেলা। মূলত পৌষ মাসের শেষের দিকে এই কুঞ্জমেলা বসে। মেলা থেকে যে আয় হয়, তা মন্দিরের কল্যাণ ট্রাস্ট্রে জমা হয়।