পদ্মা সেতু ও ঢাকা-ভাঙ্গা বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে পারাপারে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেম (ইটিসি) পদ্ধতি চালু করলেও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চলছে সনাতন পদ্ধতিতে। ব্যস্ততম শহরে এমন অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের। প্রথম দুই দিনে গাড়ি সংখ্যা কম থাকায় তেমন সমস্যা হয়নি। তবে এখন বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা। হাতে হাতে লেনদেন করায় তৈরি হচ্ছে যানজট।
আজ বুধবার রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকার কাওলা টোল প্রান্ত, তেজগাঁও ও বনানী প্রান্তে টোলের কারণে যানজটের দৃশ্য দেখা গিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢাকার মধ্যে ম্যানুয়াল টোল আদায় নিয়ে চলছে আলোচনা ও সমালোচনা
পদ্মা সেতু ও ঢাকা-ভাঙ্গার বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে পদ্মা সেতু এলাকায় ইটিসি পদ্ধতিতে টোল ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা দিচ্ছে কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি)। তবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইটিসি নিয়ে আলোচনা চলছে। এটির লেন কার্যকর করতে হলে একটা অডিট লাগবে। খুব শিগগির এটা কার্যকর করা হবে।’
এদিকে প্রথম দুই দিনের তুলনায় তৃতীয় দিনে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বেড়েছে গাড়ির চাপ। ব্যক্তিগত গাড়িগুলো এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করায় নিচের সড়কগুলোতে গাড়ির চাপ অন্যদিনের তুলনায় কম ছিল বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার।
প্রকল্প পরিচালক জানান, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় গাড়ি চলাচল করেছে ৩০ হাজার ৯১৯ টি। এতে টোল আদায় হয়েছে ২৫ লক্ষ ৬ হাজার ৮০০ টাকা। এর মধ্যে বিমানবন্দর থেকে বনানী, মহাখালী ও ফার্মগেট গিয়েছে ১৫ হাজার ৬৯০টি গাড়ি। কুড়িল থেকে বনানী ও মহাখালী গিয়েছে ৩ হাজার ৬১৯টি গাড়ি। বিপরীতে বনানী থেকে কুড়িল গিয়েছে ২ হাজার ৮৯৮টি গাড়ি। তেজগাঁও থেকে মহাখালী, কুড়িল, বনানী ও বিমানবন্দর গিয়েছে ৮ হাজার ৭১২টি গাড়ি।
এ রাস্তায় চলাচলকারীরা বলছেন, অধিকাংশ গাড়ি উঠছে বিমানবন্দরের কাওলা র্যাম্প দিয়ে, যা এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা মোট গাড়ির অর্ধেক। ফলে হাতে টোল নেওয়ার কারণে বেড়েছে গাড়ির দীর্ঘ সারি।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার বলেন, আপাতত ম্যানুয়াল পদ্ধতি দিয়ে চলতে হবে। মাত্র শুরু হয়েছে। পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। খুব শিগশির এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) সিস্টেমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টোল সংগ্রহ করা হয়। রেজিস্ট্রেশনের পর বিআরটিএ কর্তৃক গাড়ির সামনের গ্লাসে একটি আরএফআইডি ট্যাগ সংযোজন করে দেওয়া হয় এবং ব্যবহারকারীকে একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া হয়। টোল প্লাজা অতিক্রমকালে উক্ত আরএফআইডি ট্যাগ ব্রিডিং এর মাধ্যমে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) লেন ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট থেকে ঢোলের টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নেওয়া হয়।
গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের সময় সামনের গ্লাসে (উইন্ডশিন্ডে) বিআরটিএ থেকে লাগানো ভারএফআইডি ট্যাগ ব্যবহার করে ইটিসির জন্য রেজিস্ট্রেশন করার মাধ্যমে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) সেবা পাওয়া যাবে।
বর্তমানে পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায়ে তিন ধরনের পদ্ধতি চালু আছে। প্রথমটি টোল বুথে নগদে পরিশোধ, দ্বিতীয়টি কার্ড হাতে নিয়ে বুথের মেশিনে পাঞ্চ করে পরিশোধ ও তৃতীয়টি গাড়িতে লাগানো স্বয়ংক্রিয় সেন্সর কার্ড। এর মধ্যে তৃতীয় পদ্ধতিতেই সবচেয়ে ঝামেলামুক্ত ও কম সময়ে টোল পরিশোধ করা যায়।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ বলছে, র্যাম্পগুলোতে ওঠানামায় নগরবাসী অভ্যস্ত হলেই বাড়বে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল, ধীরে ধীরে মিলবে আরও সুফল। কারণ, উড়াল পথের র্যাম্পগুলোর সঙ্গে চালকেরা পরিচিত হলে চাপ বাড়বে নতুন পথে, এতে নিচের সড়কে ফিরবে স্বস্তি।
এর আগে গত শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) এই অংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চালু হওয়া অংশে ওঠা-নামার জন্য মোট ১৫টি র্যাম্প আছে। এর মধ্যে এয়ারপোর্ট দুইটি, কুড়িল তিনটি, বনানীতে চারটি, মহাখালী তিনটি, বিজয় সরণি দুইটি ও ফার্মগেট একটি। বুধবার থেকে ১৩টি র্যাম্প যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি এ প্রকল্পের প্রথম চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। এই প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।