‘ডিপ্লোমা কোটা’র বিরুদ্ধে লাল কার্ড প্রদর্শন করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় বুয়েট শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
কর্মসূচিতে বুয়েটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদীন আবরার বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। ডিপ্লোমাধারীদের জন্য ১০ম গ্রেডে শতভাগ কোটা আর ৯ম গ্রেডে ৩৩ শতাংশ প্রমোশন কোটা রাখা হয়েছে। এটি উচ্চতর ডিগ্রিধারীদের প্রতি অবমাননা।’
তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের পর ২০২৫ সালেও আমরা কোটা প্রথাকে লাল কার্ড দেখাচ্ছি। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রকৌশল খাত সংস্কার চাই।
আরেক শিক্ষার্থী মারুফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। চট্টগ্রামে ৪ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় মহাসমাবেশ হবে। ইতিমধ্যে রংপুরে সমাবেশ সফল হয়েছে। সামনে সিলেট, রাজশাহী ও শেষে ঢাকায় জাতীয় মহাসমাবেশ হবে।’
এদিকে প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাকিবুল হক লিপু বলেন, ‘গত বুধবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পুলিশের হামলায় বুয়েটের ২০২০ ও ২০২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী শাদিদ ও রাফিদ গুরুতর আহত হন। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত বুয়েটে কমপ্লিট শাটডাউন চলবে।’
এর আগে প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা গত মঙ্গলবার রাজধানীর শাহবাগে তিন দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে যাত্রার চেষ্টা করলে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ও লাঠিপেটায় অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। এর প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার থেকে দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটডাউন ঘোষণা করা হয়। পরে গতবার রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার এস. এম. সাজ্জাত আলীর সঙ্গে বৈঠকের পর সারা দেশে শাটডাউন প্রত্যাহার করা হলেও বুয়েটে কর্মসূচি চলমান থাকে।
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবিগুলো ছিল নবম গ্রেড সহকারী প্রকৌশলী পদে কেবল পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ এবং ন্যূনতম যোগ্যতা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার করা, দশম গ্রেডে বর্তমানে কেবল ডিপ্লোমাধারীরা আবেদন করতে পারেন—সেখানে উচ্চ ডিগ্রিধারীরাও যেন আবেদন করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা এবং শুধু বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্নকারীরাই যেন নামের সঙ্গে ‘ইঞ্জিনিয়ার’ লিখতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।
বর্তমানে সরকারের প্রকৌশল বিভাগের ১০ম গ্রেডের (উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান) শতভাগ পদ ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের জন্য সংরক্ষিত। এই কোটাপ্রথা চালু করা হয় ২০১৩ সালে। বিএসসি প্রকৌশলীরা এই পদে আবেদনই করতে পারেন না। অন্যদিকে, ৯ম গ্রেডের (সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান) ৩৩ শতাংশ পদ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। এই পদগুলো পূরণ করা হয় ১০ম গ্রেডে দুই বছর চাকরি করা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের থেকে। দুই বছর চাকরির পরই তাদেরকে অটোপ্রমোশন দিয়ে ৯ম গ্রেডে নিয়ে আসা হয়।