বিলম্ব দিয়েই শুরু হলো এবারে রেলপথে কোরবানির ঈদযাত্রা। আজ বুধবার ঈদযাত্রার প্রথম দিনে প্রথম ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যায় নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে। এরপর আরও বেশ কয়েকটি ট্রেন বিলম্বে ছেড়ে গেছে। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, বেশির ভাগ আন্তনগর সময়মতো ছাড়ছে। দু–একটি ট্রেন এই সময়ে একটু বিলম্বে ছাড়বেই।
ঈদে বাড়ি যাওয়ার জন্য যারা গত ২ জুন অগ্রিম টিকিট কেটেছিলেন, তাঁরাই গতকাল ট্রেনে বাড়ি ফিরেছেন।
কমলাপুর স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, যাত্রার প্রথম দিন সকাল ১০টা ও দুপুর ২টায় দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের ভিড়। গন্তব্যের ট্রেনের জন্য অনেককে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।
অপেক্ষমাণ যাত্রী ও স্টেশনের একাধিক কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল থেকেই ট্রেন ছাড়তে বিলম্ব হচ্ছে। এবারও পূর্বের ঈদযাত্রার মতন প্ল্যাটফর্মে যেন টিকিটবিহীন যাত্রী প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্ল্যাটফর্ম এলাকায় প্রবেশের মুখে র্যাব, পুলিশ এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছে।
আজ ঈদ যাত্রার প্রথম ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে ছেড়ে গেছে নির্ধারিত সময়ে ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট দেরিতে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রথম ট্রেন রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ভোর ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশন ত্যাগ করেছে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ঈদ যাত্রার প্রথম দিনের গন্তব্যমুখী যাত্রীদের।
এ ছাড়া সিলেটের পারাবত এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জের এগারো সিন্ধুর এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ছাড়তে দেরি করায় প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে বহু যাত্রীদের।
ঈদ যাত্রার প্রথম দিনের দ্বিতীয় ট্রেন ছিল পর্যটক এক্সপ্রেস। ট্রেনটি ৩৫ মিনিট বিলম্বে ছেড়ে যায়। আর তৃতীয় ট্রেন ২ ঘণ্টা বিলম্বে স্টেশন ত্যাগ করে। পর্যটক এক্সপ্রেস ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে স্টেশন ত্যাগ করার কথা থাকলেও সেটি ৬টা ৫০ মিনিটে ছেড়ে যায়। তৃতীয় ট্রেন সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৬টায় ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ঢাকা স্টেশন ছেড়েছে সকাল সাড়ে ৮টায়।
প্রথম দিনে এতগুলো ট্রেন বিলম্বে ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ট্রেনগুলো ঢাকায় সময়মতো আসলে সময়সূচি মেনে ঢাকা ত্যাগ করতে পারে। এগুলো ট্রেন ঢাকায় দেরি করে প্রবেশ করেছে।’ দেরিতে ঢাকায় প্রবেশের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেতুর দুই পাশে কাজ চলছে, এর জন্য সেখানে প্রায় ৪০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা দেরি হয়। ঢাকায় পৌঁছার পর পরিষ্কার করতে প্রত্যেকটা ট্রেনে অন্তত এক ঘণ্টা সময় লাগে।’
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, আজ ঈদযাত্রার প্রথম দিন কমলাপুর স্টেশন থেকে ৬৬ জোড়া ট্রেন ছেড়ে যাবে। আর ঈদ স্পেশাল ট্রেন ছাড়বে একটি। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন ট্রেনের সঙ্গে ২৫ টির মতো বাড়তি বগি যুক্ত করা হয়েছে। আজ ট্রেনের রেকগুলোতে কোচ সংযোজনে ভুল হওয়ার কারণেও কিছুটা বিলম্ব হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক রেলকর্মী।
এদিকে বঙ্গবন্ধু রেলসেতু চালু হওয়ার আগে পর্যন্ত পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনগুলো শিডিউল জটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতু ট্রেন চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নতুন করে বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণকাজ চলছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার রেললাইন পার হতে ট্রেনগুলোর প্রায় ২০ মিনিট সময় লেগে যায়। আর নতুন সেতুর ক্রসিং তৈরির জন্য প্রতিটি ট্রেনের আরও ২০ মিনিট লেগে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সেতু সিঙ্গেল লাইন হওয়ায় এ সময় অন্য ট্রেনকে স্টেশনে ৪০–৫০ মিনিট অপেক্ষা করতে হচ্ছে।