পদ্মা সেতুর নাট খুলে টিকটকে ভিডিও আপলোড করা যুবকের নামে পদ্মাসেতু দক্ষিণ থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত বায়েজিদ তালহাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি। প্রাথমিকভাবে কাজটি একটি ‘অন্তর্ঘাতমূলক কাজ’ বলে মনে করছে পুলিশের এই বিশেষায়িত শাখাটি।
আজ সোমবার রাজধানীর মালিবাগের সিআইডি সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ।
মাসুদ জানান, বায়েজিদকে গতকাল (রোববার) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আটক করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ১১টার মধ্যে।
ঘটনার বর্ণনায় পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘বায়েজিদ ও কাউছার দুই বন্ধু গাড়িতে করে যান। বায়েজিদ গাড়ি চালাচ্ছিলেন। যাওয়ার সময় নেমেছেন। আবার আসার সময় জাজিরা প্রান্তের দিকে খুব সম্ভবত ৩০ থেকে ৩৫ নম্বর পিলারের মাঝে তাঁরা নেমে পদ্মা সেতুর নাট-বল্টু খুলে ফেলেন। সেই সঙ্গে পদ্মা সেতুকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অবজ্ঞা, অসম্মান, ব্যঙ্গোক্তি করেন এবং মানুষের আবেগ, অনুভূতিতে তাঁরা আঘাত করেন। প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এটা একটা অন্তর্ঘাতমূলক কাজ। এটা একটা স্যাবোটাজের (নাশকতা) মতো মনে হয়েছে। এ জন্য তাঁকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় তাঁর নামে মামলা করা হয়েছে।’
কোন কোন ধারায় কী কী অভিযোগ আনা হয়েছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রেজাউল করিম বলেন, ‘বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ এর ৩ ধারায় মামলা করা হয়েছে। সহযোগী হিসেবে আরেকটা ধারা এসেছে। যেহেতু বায়েজিদের সঙ্গে একজন সঙ্গী ছিলেন এবং এমন আরও বেশ কয়েকটি ভিডিও আমরা দেখেছি, তাই ২৫ এর ঘ ধারা এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, ‘তাঁকে গ্রেপ্তারের সময় তাঁর কাছ থেকে একটা মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। তাঁর আগের কার্যক্রম, তাঁর কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছে, এটা একটা অন্তর্ঘাতমূলক কাজেরই একটা অংশ।’
কী টুল ব্যবহার করে নাট-বল্টু খুলেছে, ওই এলাকার কোনো সিসিভিটি ফুটেজ পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। তবে বলেন, ‘এটা (নাট) কোনো ইনস্ট্রুমেন্ট ছাড়া হাত দিয়ে খোলা কোনোভাবেই সম্ভব না। তাহলে ধরে নিতে হবে যে এ কাজটা তাঁরা অন্যভাবে করেছেন, তাঁদের সহযোগী আছে, তাঁদের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সেটা এখনি আমরা আপনাদের দিতে চাচ্ছি না।’
বায়েজিদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সিআইডি কর্মকর্তা রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় থাকতে পারে। কিন্তু আমরা দেখার চেষ্টা করছি তাঁর ভেতরে “গিলটি মাইন্ড” এবং “ক্রিমিনাল ইনটেনশন” আছে কি না।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত কী বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার কথার ওপর ভিত্তি করে তো সবকিছু হবে না। এই জিনিসটা তো এভাবে হাত দিয়ে খুলতে পারার কথা না। এত বড় একটা স্থাপনার নাট-বল্টু হাত দিয়ে খোলার কথা না। প্রাসঙ্গিক অপ্রাসঙ্গিক অনেক কিছু আসবে। সবকিছু বিবেচনায় আমরা মনে করছি এ কাজটা সেই করেছে, তাঁর একটা পরিকল্পনা ছিল। বাকিটা আমরা তদন্ত করব।’
সিআইডির এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সাধারণ নাগরিক হিসেবে যদি এত বড় একটা স্থাপনার কোনো কিছু নষ্ট থাকে বা অকেজো থাকে তাহলে তাঁর উচিত হবে কর্তৃপক্ষকে জানানো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জানানো। এটাকে ভিডিও করে, পুঁজি করে ভাইরাল করেছে এবং মানুষের আবেগকে আঘাত দিয়েছে এটা আমাদের কাছে মনে হচ্ছে অনেক বড় অপরাধ।’