গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম হলেও একেবারে কম নয়। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। এসব এলাকার ১২ ভাগ বাসাবাড়িতেই এডিস মশার বিস্তার সবচেয়ে বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের করা যৌথ সমীক্ষায় এই চিত্র উঠে এসেছে।
আজ বুধবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমীক্ষার তথ্য তুলে ধরেন অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।
ডিএনসিসির ৪০টি ওয়ার্ডের ৪৮টি এলাকা এবং ডিএসসিসির ৫৮টি ওয়ার্ডের ৬২টি এলাকাসহ মোট ১১০টি এলাকার ৩ হাজার ১৫০টি বাড়িতে ১১ থেকে ২৩ আগস্ট এই সমীক্ষা চালানো হয়।
সমীক্ষা তুলে ধরে অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৩টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৪টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুতে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। সমীক্ষা চালানো বাসাগুলোর মধ্যে ২ হাজার ৭৫৮টিতে নেগেটিভ এলেও ৩৯২ টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। শতকরায় যা ১২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। মোট পজেটিভ আসা বাড়িগুলোর মধ্যে ১৭৭টি ডিএনসিসির এবং ২১৫টি বাড়ি ডিএসসিসির।
জরিপে দেখা গেছে, দুই সিটিতে পড়ে থাকা বা ফেলে রাখা ভেজা পাত্রে সবচেয়ে বেশি ২১ দশমিক ৬১ শতাংশ মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঘর বা ভবনের মেঝে প্লাস্টিকের ড্রাম বা প্লাস্টিকের নানা ধরনের পাত্রেও এই লার্ভা পাওয়া যায়। ঢাকা দক্ষিণ করপোরেশনের ২৬ শতাংশ এ ধরনের পাত্রে ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২২ শতাংশ পাত্রে মশার এই লার্ভা পাওয়া গেছে।
গবেষণায় ১ হাজার ৩৩৭টি ভেজা পাত্র দেখেছিলেন জরিপকারীরা, যার প্রায় ২২ শতাংশে এডিসের লার্ভা মিলেছে। মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে ৮ নম্বর ওয়ার্ড (কমলাপুর ও মতিঝিল), ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড (নবাবপুর ও বংশাল) এবং ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে (ওয়ারী ও নারিন্দা)।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘এখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। নিয়মিত বৃষ্টি হলে পানি জমে থাকে, ফলে এডিস মশার জন্ম হয়। ঢাকায় প্রচুর মানুষ ডাব খেয়ে থাকে, এগুলো অনেক সময় পরিষ্কার করা হয় না। এতে এডিস মশার প্রকোপ বাড়ে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ আমাদের কাজ না, আমরা সেবা দিয়ে থাকি। হয়তো সব সময় সবকিছু হয় না, কিন্তু চেষ্টা করা হয়। তবে সবাইকে প্রতিরোধের কাজটা করতে হবে। এর জন্য আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। প্রথম দিকে যদি চিহ্নিত করা যায়, তাহলে চিকিৎসা দেওয়া অনেক সহজ হয় ৷’
আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ডাম্পিং স্টেশনগুলোতে নজর দিতে হবে। ২০১৯ সালে যে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছিল, তা বলার মতো নয়। সিটি করপোরেশনকে অনেক দৌড়াতে হয়েছে। এর জন্য আমাদের নিজেদের সচেতনতার বিকল্প নেই। বিশেষ করে আবাসিক এলাকাগুলোর বাগানের ছাদে যাতে পানি না জমে, সেটি কমিউনিটিকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত।’
এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘কোনো মৃত্যুই আমাদের কাম্য নয়। অধিকাংশ রোগী ভর্তির প্রয়োজন না হলেও অনেকে হচ্ছেন। কিন্তু পুরো কাজের জন্য জনবল ও অর্থ লাগে। করোনাকালীন যেসব রোগীকে আমরা সেবা দিতে পারিনি, তারা এখন বেশি আসছে। ফলে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়াটা অনেক চ্যালেঞ্জের।’