‘ছোটবেলায় দাদির কোনো কাজ করে দিলে পুরস্কার হিসেবে এক টুকরা আমের আচার পেতাম। সেটা অনেক মূল্যবান ছিল আমাদের জন্য। আজকাল বাসায় তেমন আচার বানানো হয় না। যতটুকু আচার খাওয়া হয়, সেটা বাইরে থেকে কিনেই খাওয়া হয়।’
আজ শনিবার জাতীয় ফল মেলার প্রাঙ্গণে আচারের স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই ছোটবেলার আচার খাওয়ার স্মৃতির কথা শোনান নাজনিন নাহার।
খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের (কেআইবি) আয়োজনে প্রতিবারের মতো এবারও আয়োজিত হচ্ছে জাতীয় ফল মেলা ২০২২। প্রথম দুই দিন বৃষ্টির কারণে বিক্রি তেমন না হলেও তৃতীয় দিনে ক্রেতাদের পদচারণে মুখর হয়েছে ফল মেলার আঙিনা।
বিক্রেতা ইসমাইল হোসেন দুলাল বলেন, ‘প্রথম দুই দিন তেমন বিক্রি করতে পারিনি। আজ সকাল থেকেই বিক্রি ভালো হচ্ছে।’
মেলায় বিভিন্ন ফলের পাশাপাশি দেখা মিলছে মধু, আচার, বিভিন্ন বীজ ও কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন বই। মা ফুড প্রোডাক্টস আচার ঘরের রেখা মিত্র বলেন, ‘আমি চেষ্টা করি গুণগত মান বজায় রাখার। জিনিসের দামও তো বেড়ে যাচ্ছে, তাও আমি আচারের দামটা বাড়াইনি।’
ক্রেতা শরিফা পারভিন বলেন, ‘বাইরের তুলনায় এখানে অনেক ফ্রেশ জিনিস পাচ্ছি। অনেকেই আছে পাহাড় থেকে সেখানের ফল নিয়ে এসেছেন। আমি বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৯ কেজি আম কিনেছি।’
বিক্রেতারা বলছেন মেলায় আনা হয়েছে বাছাই করা সব পণ্য। বর্তমান সময় অনুযায়ী বাইরের তুলনায় দাম কমই এখানে।
সরকারি কৃষি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে প্রদর্শনীর জন্য বিভিন্ন ধরনের ফল রাখা হয়েছে মেলায়। মেলায় আসা সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তৌহিদ হাসান বলেন, ‘এমন অনেক ফল এখানে দেখছি যার নামও আগে কখনো শুনিনি। অথচ এই ফলগুলো আমাদের দেশের পাহাড়েই হয়। বইতেও এই ফলের নাম কখনো পড়িনি। আমার কাছে ফল কেনার চেয়ে দেখতেই বেশি ভালো লাগছে।’
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার মোছা মারুফা খাতুন বলেন, ‘আমাদের এখানে বিভিন্ন ধরনের আমের জাত আছে যা আমাদের গবেষণাগারে তৈরি করা হয়েছে। সেখান থেকে কৃষকদের মাঝে সেই বীজ ও চারা আমরা দিয়েছে। এখানে বিভিন্ন জাতের লেবু আছে। আমরা চাই দেশের মাটিতে দেশীয় ফলের চাষ আরও বাড়ুক। এ জন্য আমরা কৃষকদের ট্রেনিংও করাই।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার কামরুল ইসলাম ভূইয়া জানান, মেলা আরও দুদিন অর্থাৎ আগামী ২০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। প্রথম দুদিন বৃষ্টির কারণে বেশি দর্শনার্থী আসতে না পারায় এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।