হোম > সারা দেশ > ঢাকা

১১ বছরেও শেষ হয়নি রানা প্লাজা ধসের মামলা, ইমারত নির্মাণ বিধিমালার মামলাও স্থবির

আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা

১১ বছর আগের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৬ জন পোশাকশ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার শেষ হয়নি এখনো। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সেই ভবন নির্মাণে ত্রুটি থাকার অভিযোগে করা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা আইনের মামলাটির বিচারেও অগ্রগতি নেই।

প্রতিবছর এই দিন এলেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্মরণ করা হয় ওই ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, নিহত শ্রমিকদের স্বজনরা দাবি তোলেন বিচারের। কিন্তু বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় কিন্তু বিচার মেলে না।

ত্রুটিপূর্ণ ভবনে কাজ চালিয়ে যেতে থাকায় দায়িত্বে অবহেলায় ১৩৬ জন শ্রমিকের মৃত্যু ও হাজারের বেশি শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের হয় একটি মামলা। মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এখনো বিচারাধীন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই।

পরে সাক্ষীর পর্যায়ে এসে থেমে যায় মামলার কার্যক্রম। হাইকোর্টের আদেশে পাঁচ বছরে স্থগিত থাকে মামলাটি। পরে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়। ওই বছর ৩১ জানুয়ারি মামলার বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। বিচার শুরুর গেরো খোলে। এ মামলায় অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয়েছে ৫৯৪ জনকে। এর মধ্যে ১০০ জনের মতো সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে মাত্র।

রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পিপি বিমল সমাদ্দার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘১০০ জনের মতো সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। শ্রমিকদের মৃত্যুসংক্রান্ত মামলা দীর্ঘদিন স্থগিত থাকায় বিচার বিলম্বিত হয়েছে। পরে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হওয়ার পর, সাক্ষ্য গ্রহণ চলমান রয়েছে।’

সরকারি এ আইনজীবী আরও বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ৬ মাসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি ওই সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করার।’

মামলার নথি থেকে জানা যায়, এই মামলায় কারাগারে থাকা রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাকে হাইকোর্ট জামিন দেওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে জামিন স্থগিতের আবেদন জানায়। ওই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে এ বছর ১৫ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৪ বিচারপতির বেঞ্চ সোহেল রানার জামিন স্থগিত করেন। একই সঙ্গে ছয় মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন বিচারিক আদালতকে।

আদালত সূত্র বলছে, রানা প্লাজা ধস হত্যা মামলায় ৪১ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন একজন। তিনি হলেন রানা প্লাজা ভবনের মালিক সোহেল রানা। জামিনে আছেন ৩২ আসামি। পলাতক ছয়জন। মারা গেছেন দুই আসামি।

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় হত্যা মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে সাভার থানার পুলিশ। এরপর তদন্ত করে ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। সবশেষ পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার বিজয় কৃষ্ণ কর আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টায় সাভারের রানা প্লাজা ভবনের তৃতীয় তলায় পিলার ও দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়। খবর পেয়ে বিজিএমইএর কর্মকর্তারা রানা প্লাজা ভবনে আসেন। গার্মেন্টস মালিকদের পরামর্শ দেন, বুয়েটের ভবন বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করা পর্যন্ত সব কার্যক্রম যেন বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু পাঁচ গার্মেন্টস মালিক এবং তাঁদের লোকজন ভয়ভীতি দেখিয়ে পরদিন (২৪ এপ্রিল) শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেন। এর সঙ্গে যোগ দেন রানা প্লাজা ভবনের মালিক খালেক ও সোহেল রানা। সোহেল রানা সেদিন বলেছিলেন, ‘আগামী ১০০ বছরেও রানা প্লাজা ভেঙে পড়বে না।’ অথচ সেই ২৪ এপ্রিল ভেঙে পড়ে রানা প্লাজা। পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, রানা প্লাজা ভবন তৈরির প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ম ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছিলেন ভবনটির মালিক খালেক এবং তাঁর ছেলে সোহেল রানা। যা রানা প্লাজা ভবনকে একটি মৃত্যুকূপে পরিণত করে।

ঘটনার দিন সকাল ৯টায় রানা প্লাজায় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন একসঙ্গে পোশাক কারখানাগুলো তিনটি জেনারেটর চালু করে। ঠিক তখনই রানা প্লাজা ভবন বিকট শব্দ করে ধসে পড়ে।

ইমারত নির্মাণ বিধিমালার মামলা

ইমারত নির্মাণ বিধিমালার মামলাটি ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন ছিল। ওই আদালতের অতিরিক্ত পিপি আনোয়ারুল কবির বাবুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই মামলায় অভিযোগ গঠন করার পর আসামিপক্ষের মামলা বাতিলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেন। এরই মধ্যে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ নথি তলব করে গত বছর ২৩ নভেম্বর তাঁর আদালতে নিয়ে যান। কিন্তু স্থগিতাদেশ থাকায় ওই মামলার আর অগ্রগতি হয়নি।’ 

ইমারত আইনের মামলা ইমারত বিধিমালা না মেনে ভবন নির্মাণের অভিযোগে ওই সময় সোহেল রানাসহ ১৩ জনকে আসামি করে সাভার মডেল থানায় আরেকটি মামলা করেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল আহমেদ। সিআইডি তদন্ত শেষে এ মামলায় সোহেল রানা ও তাঁর বাবা-মাসহ ১৮ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।

১৯৫২ সালের ইমারত নির্মাণ আইনের ১২ ধারায় এ চার্জশিট দাখিল করে। এ মামলায় ১৮ আসামির মধ্যে সোহেল রানা কারাগারে রয়েছেন। পাঁচ আসামি পলাতক আর বাকিরা জামিনে আছেন।

আরও যত মামলা

রানা প্লাজা বিপর্যয়ের পর মোট ১৪টি মামলা হয়। এর মধ্যে অবহেলাজনিত মৃত্যুর জন্য হত্যা মামলাটি করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অপর মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ভবন নির্মাণসংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে।

অন্যদিকে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরই ১১টি মামলা দায়ের করে বলে জানা যায়। এ ছাড়া সোহেল রানার বিরুদ্ধে সম্পত্তির হিসাব না দেওয়ায় দুদক আইনে আরেকটি মামলা হয়। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় সোহেল রানার মায়ের বিরুদ্ধেও একটি মামলা হয়।

এ সব মামলার মধ্যে সম্পদের হিসাব দাখিল না করা সংক্রান্ত মামলায় ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট সোহেল রানার তিন বছর কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালত। ওই মামলায় তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ মার্চ রানার মা মর্জিনা বেগমের ছয় বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে তার প্রায় সাত কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেন আদালত।

শহীদ জিয়ার কবরের পূর্ব পাশে খোঁড়া হচ্ছে নতুন কবর

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

রাষ্ট্রীয় শোক: ঢাকায় ৩ দিন আতশবাজি, পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ

খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে বাড়ানো হলো মেট্রোরেলের ট্রিপ

হাদি হত্যা মামলা: সিবিউন-সঞ্জয়ের তৃতীয় দফায় রিমান্ড, ফয়সাল নামে আরও একজন রিমান্ডে

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে জাবিতে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ফোরামের কালো ব্যাজ ধারণ

রাজধানীর রামপুরায় অটোরিকশার ধাক্কায় বৃদ্ধের মৃত্যু

গয়েশ্বর চন্দ্রের আসনে বিএনপির বিদ্রোহী তিন বড় নেতাসহ ১৬ প্রার্থী, শক্ত লড়াইয়ের আভাস

খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর শুনে এভারকেয়ারের সামনে ভিড়, পুলিশের ব্যারিকেড

হারিয়ে যাওয়া কনাই নদ উদ্ধার উদ্‌যাপন