হোম > সারা দেশ > কুমিল্লা

আমার মেয়ে ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট ছিল—এটাই কি তার অপরাধ’, বিলাপ সুরে অবন্তিকার মায়ের প্রশ্ন

কুমিল্লা প্রতিনিধি

‘আমার মেয়ের কী অপরাধ ছিল। আমার মেয়ে ভালো ছাত্রী ছিল, মেধাবী ছিল, আমার মেয়ে ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট ছিল, এটাই কি তার অপরাধ? গত বছর আমার স্বামীকে হারিয়েছি। আজ মেয়েকে হারালাম। আমি মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে আজকের পত্রিকার মাধ্যমে এসব প্রশ্ন রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম।

মায়ের দাবি—অবন্তিকার বাবার মৃত্যুর আগেও মেয়েকে হয়রানি নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি তাঁরা। 

তাহমিনা শবনম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়টি আমি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। প্রক্টরকে জানিয়েছি কোনো প্রতিকার পাইনি। যে মেয়ে ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট হয়, সে কীভাবে আত্মহত্যা করার চিন্তা করে। সে মেয়ে জিডি পাইলটে টিকেছে (বেসামরিক পাইলট)। যে অল রাউন্ডার ও অল স্কয়ার হিসেবে জিডি পাইলটে টিকেছে, সে কেন আত্মহত্যা করে?’ 

মানসিকভাবে হয়রানি করে অবন্তিকাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ীদের শাস্তি দাবি করেছেন পরিবার, স্বজনেরাসহ এলাকাবাসী। 

গতকাল শুক্রবার রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয় তাঁর কুমিল্লার বাগিচাগাঁওয়ের বাসা থেকে। কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। 

তাঁরই এক সহপাঠী ও সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ এনে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার আনুমানিক এক ঘণ্টা পরই তাঁর মরদেহ উদ্ধার হয়। স্ট্যাটাসে তাঁর মৃত্যুর জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও তাঁর সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকিকে দায়ী করা হয়। 

অবন্তিকা কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। 

অবন্তিকার ভাই জারিফ জাওয়াদ অপূর্ব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও তার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকি আমার বোনকে বিভিন্ন সময় টিজ করে। বাজে আচরণ করে, মানসিক নির্যাতন করে। এ নিয়ে আমার বোন সব সময় বিষণ্নতায় থাকত।’ 

অপূর্ব আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন আপুর রুমের দরজা বন্ধ দেখে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া শব্দ পাইনি। পরে পেছনের দেয়াল টপকে জানালা দিয়ে দেখি, আপু ফ্যানের সাথে ঝুলছিল। পরে প্রতিবেশীদের সহায়তায় দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করি।’ 

অবন্তিকার কুমিল্লার বন্ধু সাইফ বাবু, হাসান জানান, অবন্তিকার বাবা তাঁদের শিক্ষক ছিলেন। অবন্তিকার বাবার কাছে পড়তে গিয়ে বিষয়টি জেনেছিলেন তাঁরা। তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে জানিয়েছিলেন, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। উল্টো হয়রানির মাত্রা বেড়ে গিয়েছিল। মেধাবী অবন্তিকা মানসিকভাবে শক্ত ছিলেন। তাঁর এই আত্মহত্যার ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তিও দাবি করেছেন তাঁরাও। 

এদিকে অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তারসহ বিচারের দাবিতে আজ শনিবার দুপুরে কুমিল্লায় মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

এই সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

নদীতে গোসলের সময় ট্রলি উল্টে এক পরিবারের ৩ নারী নিহত

গোমতীর দুই তীরে মাটি লুটের মচ্ছব

হোমনায় এসি ল্যান্ডের গাড়ির ধাক্কায় দুই বছরের শিশু নিহত

বাঁচার আকুতি ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত কুবি শিক্ষার্থী অনন্যার

ভোটের মাঠে: বিএনপি বিভক্তির সুযোগে আশা দেখছে জামায়াত

কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত হলো বুক অলিম্পিয়াড

কুমিল্লা ইপিজেডে বকেয়া বেতনের দাবিতে নাসা গ্রুপের শ্রমিকদের বিক্ষোভ

কুমিল্লায় পারিবারিক কলহ: স্বামী-স্ত্রীর বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা

মায়ের কুলখানির দিনেই একমাত্র ছেলের মৃত্যু, কুমিল্লায় একই পরিবারে শোকের ছায়া

হোমনায় ডেঙ্গু ও ঠান্ডাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব: ৫০ শয্যার হাসপাতালে রোগী ভর্তি ৭০