চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার আশিয়া ইউনিয়নের মল্লাপাড়া এলাকায় একটি মাদ্রাসার দখল নিয়ে বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধের জেরে রুহুল আমিন (৫৬) নামে একজন খুন হয়েছেন। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে খুনের ঘটনাটি ঘটে।
জানা গেছে, নিহত রুহুল আমিন উপজেলার আশিয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মৃত শফিউর রহমানের ছেলে।
নিহতের স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আশিয়া মল্লাপাড়ার মুন্সি পুকুর পাড় এলাকায় আশিয়া মল্লাপাড়া আহমদিয়া রহমানিয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসার জন্য ১৯৮০ সালে কবির আহমদ চৌধুরী, রুহুল আমিন ও নুরুল আমিন জমি দান করেন। তৎকালীন আবুল বাড়ির বংশের লোকেরা মাদ্রাসাটি পরিচালনা করছিলেন। পরে পরামর্শের মাদ্রাসাটি এলাকার জামাল উদ্দিনকে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে কমিটি না থাকায় ও সঠিক পরিচালনার অভাবে মাদ্রাসা ভবন বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় কবির আহমদ চৌধুরীর চার ছেলে জামাল উদ্দিন চৌধুরী, কামাল উদ্দিন চৌধুরী, জালাল উদ্দিন চৌধুরী ও মো. বেলাল উদ্দিন চৌধুরী এবং রুহুল আমিন ও তাঁর ভাই নুরুল আমিন নতুন করে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন।
বেশ কিছুদিন ধরেই কামাল উদ্দিন ও তাঁর ছেলে রাসেলসহ তাঁদের লোকজন মাদ্রাসাটি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। যে কোনো সময় মাদ্রাসার দখল নিয়ে কামাল উদ্দিন গ্রুপ ও রুহুল আমিন গ্রুপ সংঘর্ষে জড়াতে পারেন এমন আশঙ্কা থেকে আজ শুক্রবার বাদ জুমা বৈঠক ডাকা হয়। এ অবস্থায় সকাল ১১টার দিকে মুন্সি পুকুর পাড় মাদ্রাসা এলাকায় রুহুল আমিন আসেন। তাঁকে প্রতিপক্ষ গ্রুপ গালিগালাজ করতে থাকেন। তখন উভয় পক্ষের লোকজনের হাতাহাতির মধ্যে রুহুল আমিন আহত হন। তাঁকে উদ্ধার করে পটিয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রণব ঘোষ বলেন, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রুহুল আমিন নামের একজনকে হাসপাতালে আনা হয়। আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। ধারণা করা হচ্ছে, হাসপাতালে আনার পথে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
নিহতের ভাতিজা ইফতেখার চৌধুরী সুজন বলেন, আশিয়া মল্লাপাড়া ভূমিদস্যু কামাল ও তাঁর পরিবার থেকে বহুদিন ধরে রুহুল আমিন চাচা নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছিলেন। নিজের জমি দানসহ প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার সংস্কারের কাজ করার জন্য কথা বলতে গিয়ে প্রাণ হারাতে হলো তাঁকে। ভূমিদস্যু কামাল ও তাঁর পরিবার মাদ্রাসাটি বন্ধ ও মালের গুদাম এবং বিটা থেকে চলাচলের রাস্তায় হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল বহুদিন ধরে। আমরা আশিয়া ইউনিয়নের জনগণ এর ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
নিহতের চাচাতো ভাই নাসির হাজারি বলেন, এমন ঘটনার জন্য আমি বিস্মিত। এ ধরনের ঘটনা এলাকাই কখনো আশা করি নাই। এজন্য আমি লজ্জিত। প্রতিবেশীর এমন আচরণ কখনো আশা করিনি। আমি সুষ্ঠু একটা সমাধান এলাকাবাসীর কাছ থেকে আশা করছি।
পটিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার জানান, ঘটনার পর আমি নিজে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমি জানতে পেরেছি মুন্সি পুকুর পাড় এলাকায় একটি মাদ্রাসার নামকরণ নিয়ে বিরোধিতা চলছিল। এর জেরেই ঘটনাটি ঘটেছে। উভয় পক্ষের লোকজনের কথা-কাটাকাটির সময় রুহুল আমিন থামাতে গেলেই একপর্যায়ে সে মাথা ঘুরে পড়ে যায়। এ সময় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ধারণা করা হচ্ছে তিনি স্ট্রোক করেছেন।
রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষ হতে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিব। মরদেহটি এখনো পটিয়া হাসপাতালে রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর রুহুল আমিন, নুরুল আমিন ও কবির আহমেদ দখলদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগে তাঁরা বলেছেন, এই জমি তাঁরা মাদ্রাসার নামে ওয়াকফ করে দিয়েছেন।