চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে লিটন কুমার চৌধুরী নামের এক সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনি আহত হয়েছেন। এ সময় তাঁর কাছে থাকা টাকা এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সীতাকুণ্ড পৌর সদরের রেলগেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত সাংবাদিক লিটন কুমার চৌধুরী দৈনিক জনকণ্ঠের সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি এবং সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। সীতাকুণ্ড পৌর সদরের রেলগেট এলাকার দক্ষিণ মহাদেবপুর এলাকার বাসিন্দা তিনি।
সাংবাদিক লিটন জানান, রাতে নিজ বাসার সামনে এক বন্ধুর সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন তিনি। এ সময় আসাদুজ্জামান ওরফে আসাদ নামের এক ব্যক্তি কয়েক যুবককে সঙ্গে নিয়ে তাঁর সামনে আসেন। এ সময় তাঁরা অশালীন ভাষায় গালমন্দ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন। হামলাকারীরা মারধরের পাশাপাশি মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেন। পরে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের অশালীন স্লোগান দিয়ে মারতে মারতে সীতাকুণ্ড থানায় নিয়ে যান। এ সময় আসাদ ও সহযোগীরা লিটনকে সীতাকুণ্ড থানায় নিয়ে পুলিশকে গ্রেপ্তার করতে বলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের জানিয়ে দেয়, তাঁর বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই। পরে সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবের সাংবাদিকেরা পুলিশের সহায়তায় তাঁকে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
হামলাকালে বাবাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন সাংবাদিক লিটন চৌধুরীর ছেলে রাকেশ চৌধুরী ও তাঁর ভাতিজা দিব্য চৌধুরী। রাকেশ বলেন, ‘বাবার ওপর হামলাকারী সবাই ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী। তাঁরা পরিকল্পিতভাবে বাবার ওপর হামলা করেছে। মারধরের পাশাপাশি তাঁরা বাবার কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে মোবাইল ফোন ও টাকা।’
এদিকে হামলার পর ‘সীতাকুণ্ড সম্মিলিত নাগরিক কমিটি’ নামের একটি ফেসবুক পেজে হামলার ভিডিও চিত্র প্রচার করা হয়। এতে দেখা যায়, আসাদসহ বেশ কয়েকজন যুবক সাংবাদিক লিটনকে ঘিরে রেখেছেন। তাঁদের মধ্যে দু-তিনজন লিটনকে মারধরের পাশাপাশি অশালীন ভাষায় মন্তব্য করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা তাঁকে টেনেহিঁচড়ে থানার দিকে নিয়ে যান।
এদিকে সোমবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মেসেঞ্জারে স্ক্রিনশট-সদৃশ একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, ‘আসাদ ভাইয়ের সমর্থক’ নামের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে সাংবাদিক লিটনের ওপর হামলার পরিকল্পনাসংক্রান্ত আলোচনা করা হচ্ছে।
সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবের সভাপতি সৈয়দ মো. ফোরকান আবু মব বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে হামলাকারীদের স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু পুলিশ এখন পর্যন্ত তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। উদ্ধার করতে পারেনি সাংবাদিক লিটনের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোন ও টাকা। তিনি হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, হামলা করার পর রক্তাক্ত অবস্থায় কয়েক যুবক আহত লিটন চৌধুরীকে থানায় নিয়ে আসেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকায় তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। হামলার বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।