রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য সহকারী সনজিত কুমার তনচংগ্যা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে তাঁর দায়িত্ব পড়ে ৪ নম্বর কাপ্তাই ইউনিয়নের ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন দুর্গম হরিনছড়া, ভাইয্যাতলী এবং বারুদগৌলা মৌজায়। কাপ্তাই ইউনিয়নের সবচেয়ে প্রত্যন্ত ও দুর্গম এলাকা এটি। তিন হাজার পাহাড়ি সম্প্রদায়ের বসবাস এইখানে। কাপ্তাইয়ের জেটিঘাট হতে নৌপথে এর দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এই পথ পাড়ি দিয়ে বিরামহীনভাবে ইপিআই ও টিটি টিকা সেবা দিয়ে আসছেন স্বাস্থ্য সহকারী সনজিত কুমার তনচংগ্যা।
রোদ কিংবা মহা দুর্যোগেও থেমে নেই তাঁর এই কার্যক্রম। এই সব এলাকায় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, খেয়ে না খেয়ে, এক পাহাড় হতে আরেক পাহাড়ের চূড়ায় উঠে বছরের পর বছর ধরে সরকারের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমকে প্রান্তিক জনগণের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি।
গত মঙ্গলবার কাপ্তাই জেটিঘাট এলাকায় কথা হয় সনজিতের সঙ্গে। তিনি জানান, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা দুর্যোগ যা হোক না কেন আমাদের সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকে না, নিয়ম অনুযায়ী টিকা দিতে হয়। দুর্গম এই এলাকাটির কাপ্তাই জেটিঘাট হতে দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটারেরও বেশি। বাহন একমাত্র ইঞ্জিন চালিত নৌকা, কোন সড়ক যোগাযোগ নেই বললেই চলে। এক কথায় বলা যায় একেবারে বিচ্ছিন্ন এলাকা। ইপিআই শিশু টিকা, টিটি টিকাসহ অন্যান্য সেবা দিতে সঠিক সময়ে বোট না পাওয়ায় বিভিন্ন সময় টিকা সেবা দিতে গন্তব্যস্থানে পৌঁছাতে বা আসতে নিজ খরচে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয় বলে জানান এই স্বাস্থ্যকর্মী।
সনজিত জানান, কাপ্তাই ইউপি এলাকার ১,২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গম পাড়াগুলো মধ্যে রয়েছে ভাইবোনছড়া, হরিণছড়া (হেডম্যানপাড়া), মোহনলাল পাড়া, লক্ষীধন কার্বারী পাড়া, নোয়াপাড়া, গুড়াছড়া মুখ পাড়া, তাইতংপাড়া, ভাঙ্গামুড়া বড়পাড়া, বেচারাম পাড়া, পাংখোয়া পাড়া, নোয়ামনি মেম্বার পাড়া, বেথাল পাংখোয়াপাড়া, অংগইয়্যা পাড়া, গাছকাটা ছড়া (কুদুকছড়ি), হেডম্যানপাড়া, কিলাছড়ি ভাবনা কেন্দ্র পাড়া, গোলক ধনপাড়া, হাতিমারা শুভধন পাড়া, নারশ্য পাড়া ও বারুদগৌলা মৌনপাড়া। প্রতিটি পাড়ার দূরত্ব অনেক, এক পাহাড় হতে অন্য পাহাড় আবার নৌকা বা ইঞ্জিন চালিত নৌকায় গিয়ে সেবা দিতে অনেক সময় লেগে যায়।
এলাকার ইউপি সদস্য নবীন মেম্বার, সুইপ্রু মারমা ও এলাকাবাসী বরণা তনচংগ্যা, সাচিংমা মারমা ও বিশন তনচংগ্যা জানান, স্বাস্থ্য কর্মী সনজিত নিরলসভাবে তাঁদের প্রতিটি দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে টিকাসহ সকল স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁদের। তাঁর সেবার মান খুব উন্নত বলে জানান তাঁরা।
কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ওমর ফারুক রনি জানান, প্রান্তিক পর্যায়ে সরকারের স্বাস্থ্য সেবা, মেসেজ গুলো পৌঁছাতে স্বাস্থ্য সহকারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। সনজিত সহ আরও ২৭ জন স্বাস্থ্য সহকারী উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করে আসছেন বলে জানান তিনি।