চাঁদপুর জেলা সদরসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার। ক্রেতার সহজলভ্যতার জন্য এই বিক্রির অনুমোদন থাকলেও মানা হচ্ছে না বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কোনো নিয়মনীতি। অধিকাংশ দোকানে একই সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি সিলিন্ডার ও জ্বালানি তেল। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে শহরে বঙ্গবন্ধু সড়কে একই দোকানে এলপিজি ও জ্বালানি তেল বিক্রির অনিয়মের কারণে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে চারজন দগ্ধ হয়ে মারা যায়। ওই ঘটনার পর প্রশাসন কিছুটা নড়েচড়ে বসলেও বর্তমানে তাদের ভূমিকা নীরব। তবে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে সদর উপজেলা প্রশাসন।
সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদপুর জেলার আঞ্চলিক, উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক এবং বাজারগুলোতে মুদি, ফোন, চায়ের দোকান, সার-কীটনাশক এমনকি টেইলারিং দোকানেও গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। গুরুতর বিষয় হলো, এসব দোকানে পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে জ্বালানি তেলও। ব্যবসায়ীরা জানান, তাঁরা সিলিন্ডার বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন বা বিস্ফোরক পরিদপ্তরের নিয়মকানুন সম্পর্কে অবগত নন। তাঁরা রাস্তার পাশে বা দোকানের সামনে প্রচণ্ড তাপমাত্রায় সিলিন্ডার সাজিয়ে রাখেন, যাতে ক্রেতাদের চোখে পড়ে। একটি দোকানে কী পরিমাণ সিলিন্ডার রাখা যাবে—এসব নিয়মের কিছুই জানেন না ব্যবসায়ীরা।
এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির বিষয়ে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের নিয়ম হচ্ছে, একটি দোকানে ১২ লিটারের সর্বোচ্চ ৮টি এবং বড় আকারের হলে ৩টি সিলিন্ডার লাইসেন্স ছাড়া বিক্রি করা যায়। তবে সিলিন্ডার অবশ্যই রোদে না রেখে ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে। অতিরিক্ত মজুত করলে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক।
সদর উপজেলার চান্দ্রা চৌরাস্তার স্যানিটারি মালপত্র বিক্রি করেন ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম। তিনি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারও বিক্রি করেন। তবে বিক্রির জন্য অনুমোদনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি বলেন, ‘এলাকার অনেক দোকানে বিক্রি হয়। আমিও তাদের মতো বিক্রি করি। কী পরিমাণ সিলিন্ডার মজুত রাখা যাবে—এমন প্রশ্নের জবাবে জানান, এই বিষয়ে তিনি অবগত নন।
সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের ফরক্কাবাদ বাজারের মোটর গ্যারেজে বিক্রি হয় গ্যাস সিলিন্ডার ও জ্বালানি তেল। দোকানের মালিক সুমন দাস বলেন, কোনো নিয়ম জানা নেই বিক্রির জন্য। দুর্ঘটনা হলে কী করণীয়, সেটাও বলতে পারেননি এই ব্যবসায়ী।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া বাজার, ভাটিয়ালপুর, নয়ারহাট, রামপুর, গোয়ালভাওর এলাকার দোকানগুলোতে দেখা গেছে প্রায় দোকানে ২০ থেকে ২৫টি করে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার মজুত। অনেক দোকানি রোদের মধ্যে রেখেছেন সিলিন্ডার।
রামপুর বাজারের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, সিলিন্ডার দোকানের সামনে না রাখলে ক্রেতারা জানবে কীভাবে। এ জন্য রোদে রাখা হায়।
সিলিন্ডারের নির্দিষ্ট মেয়াদের বিষয়ে জানতে চাইলে শহরের বাসিন্দা আল-ইমরান শোভন, মাইনুল ইসলাম, শাহজাহান বলেন, ‘এ বিষয়টি জানতাম না। মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহারে আগামীতে সতর্ক থাকব।’
ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই গ্যাস সিলিন্ডারের নির্দিষ্ট মেয়াদ সম্পর্কে অজ্ঞ। শহরের নিউ ট্রাক রোডের ব্যবসায়ী শামীম, সেলিম খান ও সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করি। কিন্তু এটির মেয়াদ থাকে জানা ছিল না। এখন থেকে মাল ক্রয়ের সময় মেয়াদ দেখে নিতে হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডারের ওপরের অংশে একটি কোড থাকে (যেমন A-২০২৫)। ‘A’ মানে জানুয়ারি-মার্চ, ‘B’ মানে এপ্রিল-জুন, ‘C’ মানে জুলাই-সেপ্টেম্বর এবং ‘D’ মানে অক্টোবর-ডিসেম্বর। এই অক্ষর এবং তার পরের সালটি সিলিন্ডারের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ নির্দেশ করে। সিলিন্ডারের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ হিসেবে লেখা থাকবে ‘এ’-২০২৫, অর্থাৎ এটির মেয়াদ শেষ ২০২৫ সালের মার্চ মাসে।
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম এন জামিউল হিকমা বলেন, ‘গ্যাস সিলিন্ডার ও জ্বালানির বিক্রির বিষয়টি অবগত হলাম। শিগগির অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
বিস্ফোরক পরিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ভোক্তার সহজলভ্যতার কারণে স্থানীয় দোকানগুলোয় বিক্রির জন্য অনুমোদন লাগে না। তবে যেকোনো দোকানে ১২ লিটারের ৮-১০টির বেশি সিলিন্ডার রাখতে পারবে না। ১২ লিটারের বেশি ওজনের হলে ৩ থেকে ৪টি রেখে বিক্রি করতে পারবে। অতিরিক্ত মজুত করলে অবশ্যই বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্স লাগবে। রাস্তার ওপর রেখে বিক্রি করতে পারবে না। ঠান্ডা জায়গায় সিলিন্ডার রাখতে হবে।