মৎস্য, খনিজ সম্পদ আর পর্যটন থেকে সেন্ট মার্টিনের চেয়ে বেশি আয় দেশের আর কোনো পর্যটন এলাকা থেকে আসে না। জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখলেও এ দ্বীপের নিরাপত্তার জন্য এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি বেড়িবাঁধ ও চারদিকে সড়ক নির্মাণ। কিন্তু আশ্বাসের পর আশ্বাস দিয়েও এখনো এসব বাস্তবায়ন করা যায়নি। বেড়িবাঁধ না থাকায় দুর্যোগে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এখানকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেড়িবাঁধ নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে অনেকবার জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। কিন্তু শুধু আশ্বাস পেয়েছি, বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। এই দ্বীপে চারদিকে সড়ক ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলে পর্যটকের পাশাপাশি এখানকার মানুষ নিরাপদ থাকত।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সামান্য ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস দ্বীপটিতে পানি ঢুকে পড়ে। যার কারণে অনেক এলাকায় লবণপানি ঢুকে পড়াতেই সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিম অর্থাৎ সমুদ্রঘেঁষা দ্বীপের চারপাশে এ সংকট বেশি। সুপেয় পানির অভাব দেখা দেওয়ায় দ্বীপের সাধারণ বাসিন্দারা পড়ছে বিপাকে। চারপাশের লোকজনের মাঝে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি আঘাত হানা মোখার প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস হলে সেন্ট মার্টিন তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা ছিল বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
গত বছরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সেন্ট মার্টিন দ্বীপে আঘাত হানে এবং সাগরে অতিরিক্ত জোয়ারের ফলে লবণাক্ত পানি উপকূলে উঠেছিল। এতে দ্বীপের চারপাশের নিম্নাঞ্চল ডুবে যায়। টিউবওয়েল ও পুকুরগুলোতে লবণাক্ত পানি ঢুকেছিল। তখন থেকে ধীরে ধীরে মিষ্টি পানির টিউবওয়েলগুলো থেকে লবণ পানি আসে। পুকুরের পানিও হয়েছে লবণাক্ত।
স্থানীয় বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ ও জসিম উদ্দিন শুভ জানান, একসময় দ্বীপের চারপাশে কেয়াবন ও সামুদ্রিক পাথর দ্বারা প্রাকৃতিক বাঁধ ছিল। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কেয়াবন কেটে স্থাপনা তৈরি করেছে। পাথরগুলো সেই স্থাপনার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এখন কোনো কেয়াবন নেই। সামুদ্রিক পাথরও আগের মতো দেখা যায় না।
তাঁরা বলেন, টেকসই বাঁধের মাধ্যমে সেন্ট মার্টিনকে বাঁচানো যেতে পারে। অন্যথায় শিগগিরই সেন্ট মার্টিন তলিয়ে যেতে পারে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ বলেন বলেন, ‘সেন্ট মার্টিনের বেড়িবাঁধ নির্মাণের বিষয়ে আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত নেই। সরকার অনুমতি দিলে তবেই করা যাবে।’
পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, পুরো কক্সবাজার জেলায় সবুজ বেষ্টনীর আওতায় আনা দরকার। এতে মানুষও রক্ষা পাবে, জীববৈচিত্র্যও ঠিক রাখা যাবে।