রাঙামাটির নানিয়ারচরে চেঙ্গি নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির কাজ শেষ। বাকি শুধু উদ্বোধন। এর মাধ্যমে শত বছরের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে নানিয়ারচরবাসীর। এত দিন রাঙামাটি থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল নানিয়ারচর উপজেলা। রাঙামাটির সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌপথ। সেতুটি নির্মিত হওয়ায় সংযুক্ত হয়েছে সড়ক।
নানিয়ারচর সেতু দিয়ে লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলাসহ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাজেকে যাওয়ার পথও হবে সহজ।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নানিয়ারচরের চেঙ্গি নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। ঘোষণার দুই বছর পর ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় এবং ২০২১ সালে পুরোপুরি কাজ সম্পন্ন হয়।
পার্বত্যাঞ্চলের সবচেয়ে দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণ হওয়ায় তিন উপজেলার চার লক্ষাধিক মানুষ সহজেই রাঙামাটি জেলা সদরের সঙ্গে সড়কে যাতায়াতের সুযোগ পাচ্ছে। রাঙামাটি থেকে বাঘাইছড়িতে সড়কপথে যেতে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। বাস সার্ভিস চালু না থাকায় সময় লাগে প্রচুর। একইভাবে রাঙামাটি থেকে সড়কপথে লংগদু প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। এই উপজেলার সঙ্গেও বাস সার্ভিস চালু নেই। নৌপথই একমাত্র ভরসা দুই উপজেলার। তবে এই নানিয়ারচরের সেতুর মাধ্যমে সেই দুর্গম পরিস্থিতি অনেকটাই ঘুচতে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, একসময় নানিয়ারচর উপজেলা সদরে যাওয়ার মতো সরাসরি কোনো সড়কও ছিল না। নৌপথে যেতে তিন ঘণ্টা সময় লাগত। এখন অটোরিকশাযোগে সদর থেকে সরাসরি রাঙামাটি যেতে সময় লাগে মাত্র এক ঘণ্টা।
সেতুটি যোগাযোগব্যবস্থায় যে হারে অবদান রাখছে, ঠিক সেভাবেই হয়ে উঠেছে পর্যটন স্পষ্ট। পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হচ্ছে এই তিন পার্বত্য জেলার সর্ববৃহৎ সেতু নানিয়ারচর সেতু। উদ্বোধনের আগেই সেতুটি দেখতে তিন পার্বত্য জেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় করছেন। দূরদূরান্ত থেকে সেতুটি দেখতে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, ট্রলারসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে দর্শনার্থীরা আসছেন এখানে।
সেতুটি দেখতে আসা কিছু পর্যটক জানান, দীর্ঘ এই সেতু মনোরম দৃশ্যে আবৃত, প্রচণ্ড রোদের তাপে দুপুরেও সেতু দর্শনে কাটাচ্ছেন আনন্দমোহর সময়।
এ ছাড়া সেতুটি বাস্তবায়নের ফলে এই উপজেলা অর্থনৈতিক সফলতার মুখ দেখছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আনারসে বিখ্যাত নানিয়ারচর উপজেলার আনারস ব্যবসায়ীরা যোগাযোগের সুবিধার্থে পাবেন আরও লাভজনক আয়।
স্থানীয় এক অটোরিকশাচালক বলেন, `আগের তুলনায় যাতায়াতব্যবস্থা অনেক ভালো হয়েছে, আগের তুলনায় অনেক বাড়তি ভাড়াও পাচ্ছি।'
স্থানীয় চেঙ্গী রেস্টুরেন্টের মালিক জানান, আগে দুর্গম নানিয়ারচরে তেমন কোনো রেস্টুরেন্ট ছিল না। সেতুটি বাস্তবায়ন হওয়ায় পর্যটক ভিড় করছে এবং নানিয়ারচরে ভালো মানের রেস্টুরেন্ট ও ব্যবস্থা হয়েছে এবং বাণিজ্যিকভাবে অনেকটা সচল হচ্ছে উপজেলা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য প্রিয়তোষ দত্ত জানান, দুর্গম এই পাহাড়ের মাঝেও সরকারের উন্নয়ন বাকি নেই, একসময়ের নানিয়ারচরবাসীর স্বপ্ন ছিল এই সেতু, তা আজ বাস্তবে রূপ নিল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলি রহমান তিন্নি জানান, সেতুটি নানিয়ারচরের মানুষের দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন ছিল, তা পূরণ হয়েছে। সেতুটি যোগাযোগ, অর্থনীতির সুবিধাসহ কর্মসংস্থান ও কৃষিপণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই সেতুর মাধ্যমে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এলাকার যোগাযোগ, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এর পাশাপাশি নানিয়ারচর থেকে লংগদুর সড়কটির কাজ করা হলে সহজেই আমরা এর সুফল ভোগ করব।'
উল্লেখ্য, সেনাবাহিনীর ২০ ইসিবি এই সেতুর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে।