অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় রান্না করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হন গৃহবধূ জুলি আক্তার (২০)। তাঁকে উদ্ধার করে রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিন দিন পর জন্ম নেয় তাঁর মেয়ে সন্তান। এরপর থেকে অবস্থার আরও অবনতি হয়, অবশেষে মৃত্যুবরণ করেন জুলি আক্তার।
গতকাল বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় জুলি আক্তারের। তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদণ্ডী গ্রামের মুফিজুর রহমানের স্ত্রী। আজ শুক্রবার সকালে গ্রামের বাড়িতে জুলিকে আক্তারকে দাফন করা হয়।
জুলির পরিবার বলছে, গত ১১ নভেম্বর (শুক্রবার) দুপুরের রান্না করতে গিয়ে চুলার আগুনে দগ্ধ হন জুলি। এ সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক ওই দিনই তাঁকে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়ার পরামর্শ দেয়। পরে তাঁকে সেখানে নেওয়া হয়। জুলির শরীরের ৬৫ ভাগ পুরে গেছে বলে জানায় হাসপাতালের চিকিৎসক। চিকিৎসা চলাকালীন তিন দিন পর গত মঙ্গলবার সিজারের মাধ্যমে একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন তিনি। কিন্তু তাঁর জ্ঞান ফেরে পরদিন বুধবার। এরপর তিনি সন্তানের মুখ দেখেন। সেই সঙ্গে তাঁর শরীরের অবস্থার অবনতি হতে শুরু করলে নেওয়া হয় ওই হাসপাতালের আইসিইউতে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় জুলি আক্তারের।
আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিনে জুলি আক্তারের বাড়িতে দেখা যায়, স্বজনেরা তিন দিনের মেয়ে সন্তানটিকে নিয়ে আহাজারি করছে। সবার নজর জুলি আক্তারের রেখে যাওয়া শিশু সন্তানটির দিকে। কিছুক্ষণ পরপর কেঁদে ওঠে, কোলে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করলে থেমে যায় কান্না। চোখ মেলে সবার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে। তিন দিন আগে জন্ম নেওয়া শিশুটির পরিস্থিতি দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না কেউই। শিশুটির ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তা করছেন অনেকেই।
জুলি আক্তারের বড় ভাই মুহাম্মদ ফরহাদ বলেন, ‘বোনকে বাঁচানোর জন্য সব ধরনের চেষ্টা করেও আমরা ব্যর্থ হয়েছি। গত এক সপ্তাহে ২০ ব্যাগ রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছে আমার সহপাঠীরা। ঘটনার ৫ দিন পর মঙ্গলবার ভাগনির জন্ম হয়। বুধবার হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে নেওয়া হয়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মারা যায় আমার বোন। আমার ভাগনির ভবিষ্যৎ নিয়ে কিচ্ছু ভাবতে পারছি না।’