পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে ফের সংঘর্ষ জড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক পৌনে ৮টার দিকে দুই পক্ষের কর্মীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির জের ধরে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে তা শাহজালাল ও শাহ আমানত হলে ছড়িয়ে পড়ে। এই নিয়ে গত ২১ ঘণ্টায় তিন দফায় সংঘর্ষে জড়ালেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
এবারের বিবদমান পক্ষ দুটি হলো—সিএফসি ও সিক্সটি নাইন। সিএফসি পক্ষের কর্মীরা নিজেদের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং সিক্সটি নাইন পক্ষের কর্মীরা সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন।
এর আগে, আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বুদ্ধিজীবী চত্বরে বিজয় পক্ষের এক কর্মীকে সিক্সটি নাইনের কর্মীরা মারধর করলে দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরবর্তী সময় বেলা ১টার দিকে তা শাহজালাল ও সোহরাওয়ার্দী হলে ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে দেড় ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এর আগে, গতকাল বুধবার রাতে এক কর্মীর পক্ষ ত্যাগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই দুই পক্ষের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানায়, রাত পৌনে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন চত্বরে সিএফসি পক্ষের এক কর্মীর সঙ্গে সিক্সটি নাইন পক্ষের কর্মীদের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এ ঘটনা জানাজানি হলে সিএফসি পক্ষের কর্মীরা শাহ আমানত হল ও সিক্সটি নাইন পক্ষের কর্মীরা শাহজালাল হলে অবস্থান নিয়ে একে অপরের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। রাত সাড়ে ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বড়ির সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএফসি পক্ষের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মির্জা খবির সাদাফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিক্সটি নাইনে কোনো নেতা নেই। তাঁদের কেউ কাউকে মানে না। বিজয় পক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা না মিটতেই তাঁরা স্টেশনে আমাদের এক কর্মীকে মারধর করেছেন। আমরা সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’
তবে এ ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন সিক্সটি নাইন পক্ষের নেতা ও সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাঈদুল ইসলাম সাঈদ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিএফসি ইচ্ছাকৃতভাবে গায়ে পড়ে এই ঝামেলা বাধিয়েছে। আমরা বিজয় পক্ষের সঙ্গে ঝামেলা মেটাচ্ছিলাম। এর মধ্যেই তারা এটা ঘটিয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নাজেমুল আলম মুরাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছাত্ররা থেমে থেমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছে। আমরা দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করছি। তারা না থামলে আমরা কঠোর অবস্থান নেব।’
এর আগে এক কর্মীর পক্ষ ত্যাগকে কেন্দ্র করে বিজয় ও সিক্সটি নাইন পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল। গত রোববার পক্ষ ত্যাগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পক্ষত্যাগী কর্মী কামরুলকে মারধর করেন সিক্সটি নাইনের কর্মীরা। এই মারধরের জেরে গতকাল রাত ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী হলের দিকে সিক্সটি নাইন পক্ষের এক কর্মী রাতের খাবার খেতে এলে কামরুলের সঙ্গে তাঁর হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর বিজয়ের কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে আর সিক্সটি নাইনের কর্মীরা শাহজালাল হলের সামনে অবস্থান নেন। পরে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এ সময় দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরাই একে অপরের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরবর্তী সময় পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তায় রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আজ বিজয় পক্ষের এক কর্মীকে মারধরের ঘটনায় সংঘর্ষ পুনরায় শুরু হয়। ওই ঘটনায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১৮ জন আহত হন।