টানা লকডাউনের কারণে বিপাকে পড়েছেন ময়মনসিংহে নিম্ন আয়ের মানুষজন। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তাঁরা। অনেকে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। কেউ বা একবেলা আধ পেট খেয়ে চলছেন। এমন দুর্ভোগের সময় কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সরকারের সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
ময়মনসিংহের ঋষিপাড়ার বাসিন্দা পরেশ দাস (৫৯) বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে মুচির কাজ করছি। সংসারে আমি, আমার স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলেরাও বিয়ে করেছে। দুই ছেলেকে নিয়ে একান্ন পরিবারে বসবাস করি। বড় ছেলে পরিতোষ দাস কাচারিঘাট এলাকায় চটপটির দোকান করে। ছোট ছেলে হরিচরণ দাস ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকায় তারা এখন বেকার। ফলে দুই ছেলে এখন আমার আয়ের ওপরেই চলে।’
পরেশ দাস আরও বলেন, ‘লকডাউনের আগে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা রোজগার করতে পারতাম। লকডাউন দেওয়ার পর থেকে সেখানে ৭০ থেকে ৮০ টাকার রোজগার হয়। অপরদিকে, এক দিনে আমার পরিবারের খরচ আছে সর্বনিম্ন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। কিন্তু আয় না থাকায় দিনে একবেলা খেয়ে থাকি। মাঝে মাঝে না খেয়েই দিন কাটাতে হয়।’
হেনা আক্তার বলেন, ‘লকডাউনের আগে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার চা-পান বিক্রি করতাম। এখন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বিক্রি করতে পারি। ৫০০-৬০০ টাকা বিক্রি করে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা লাভ হয়। এ টাকায় সংসার চলে না। শুনেছি ডিসি, পুলিশ থেকে খাদ্যসহায়তা করা হচ্ছে। যদি তাঁরা খোঁজ নিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিত, তাহলে প্রকৃত অভাবীরা সমানভাবে সরকারি সহায়তা পেত।’
একই বস্তির মিনা বেগম (৬০)। স্বামী মারা গেছেন ২৫ বছর আগে। ২০ বছর ধরে মানুষের বাসায় কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। লকডাউন দেওয়ার পর থেকে এখন তাঁকে আর বাসায় কাজে নিচ্ছে না। এক ছেলে বিয়ে করে আলাদা থাকেন। ফলে নিজের খরচ নিজেকেই চালাতে হয়। কিন্তু আয় না থাকায় কয়েক দিন আগেও তাঁকে টানা তিন দিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে।
মিনা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, ‘গতকাল রাতে একজন ভাত দিয়েছিল। রাতে খাওয়ার পর কিছু ভাত ছিল। পানি দিয়ে রেখে সকালে আবার খেয়েছি। যদি আজ রাতে আবার কেউ খাবার দেয় তাহলে খাওয়া হবে, না হলে হবে না। আমাদের মতো অভাবীদের কেউ খোঁজখবর নেয় না। শুধু শুনি সরকার গরিব লোকদের সহযোগিতা দিচ্ছে। কিন্তু আমি তো এখন পর্যন্ত পেলাম না।’
সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, ‘শ্রেণিভেদে সব মানুষকেই বিভিন্ন সময়ে ত্রাণসামগ্রী দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখনো বিভিন্নভাবে নিম্ন আয়ের মানুষকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো মানুষ না খেয়ে থাকবে না।’