হোম > বিশ্লেষণ

যে সব কারণে শ্রীলঙ্কার এমন দুর্দশা 

১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকে স্মরণকালের ভয়াবহতম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে শ্রীলঙ্কা। নিয়মিত দীর্ঘ ব্ল্যাকআউট, খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র ঘাটতি দেশটির জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। চলতি সপ্তাহে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে দেশটিতে সহিংস আন্দোলন শুরু হয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির এই দুর্দশার জন্য বেশ কয়েকটি কারণ দেখিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।  ওই বিশ্লেষণে দেখানো কারণগুলোর মধ্যে শুরুতেই রাখা হয়েছে চীনা ঋণ। এ ছাড়া কৃষি ও অর্থনীতিতে সরকারের ভুল নীতে, এর মধ্যে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসা কোভিড মহামারির কারণে পুরো ব্যবস্থাই সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে এএফপির বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে।

শ্রীলঙ্কার বিপর্যয়ের অন্যতম প্রধান কারণ হলো চীনের কাছ থেকে বিপুল ঋণ নিয়ে বড় বড় প্রকল্পে হাত দেওয়া। ২০১০ সালে নভেম্বরের চীনা ঋণে হামবানটোটা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে শ্রীলঙ্কা। এ বন্দরে ছয় বছরে ৩০ কোটি ডলার লোকসান হয়। এই সমুদ্রবন্দর ছাড়াও চীনের ঋণে শ্রীলঙ্কা বিশাল কনফারেন্স সেন্টার নির্মাণ করেছিল। এটি চালুর পর থেকেই অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে। চীনের কাছ থেকে নেওয়া ২০ কোটি ডলার ব্যয়ে একটি বিমানবন্দর চালু করা হয়েছিল। একপর্যায়ে বিমানবন্দরটি থেকে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার মতো টাকাও আয় করতে পারছিল না শ্রীলঙ্কা সরকার। 

প্রকল্পগুলো ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা রাজাপক্ষ পরিবারের একক সিদ্ধান্তে হয়েছে। এই পরিবারটি দুই দশক ধরে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে আছে। 

২০১৫ সালে প্রেসিডেন্টের পদ হারান মাহিন্দা রাজাপক্ষে। তখন তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।  ওই বছর রাষ্ট্রপতির নির্বাচনকালে মাহিন্দার ভাই গোতাবায়া রাজাপক্ষে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। পাশাপাশি ভ্যাট অর্ধেক করার প্রতিশ্রুতি দেন। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এটা ছিল তাঁর মরিয়া প্রচেষ্টা। তাঁর ধারণা ছিল, জনগণ বেশি বেশি কেনাকাটা করলে অর্থনীতি চাঙা হবে। ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর শ্রীলঙ্কায় ভ্যাট কমিয়ে দেওয়া হয়। এর কয়েক মাস পরই শুরু হয় করোনা। ফলে গোতাবায়ার পরিকল্পনা খুব বেশি কাজে লাগেনি। 

শ্রীলঙ্কার রাজস্ব আয়ের একটি বড় খাত পর্যটন। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তারের কারণে আন্তর্জাতিক পর্যটক আগমন শূন্যে নেমে আসে। বিদেশে কর্মরত শ্রীলঙ্কানদের কাছ থেকে রেমিট্যান্সের প্রবাহও কমে যায়। এ দুটি অর্থনৈতিক স্তম্ভের ওপরই শ্রীলঙ্কা সরকারের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা নির্ভরশীল ছিল। 

আয়ের ওই উৎসগুলো বন্ধ হওয়ার পর রাজাপক্ষে প্রশাসন ঋণ পরিশোধে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহার করতে শুরু করে। উদ্বেগজনক হারে রিজার্ভ খরচ করছিল সরকার। পরে বাধ্য হয়ে ২০২১ সালে কর্তৃপক্ষ অনেকগুলো পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করে। 

আরেকটি বড় বিপর্যয় ছিল সরকারের কৃষিনীতি। নির্বাচনকালে গোতাবায়া প্রতিশ্রুতি দেন, শ্রীলঙ্কা হবে জৈব কৃষির দেশ। এটি বাস্তবায়নে ১০ বছরের পরিকল্পনা নেন তিনি। কিন্তু ক্ষমতায় এসে হঠাৎ করে সিনথেটিক সার ও কীটনাশক নিষিদ্ধ করেন। কৃষি নীতিতে এই রাতারাতি পরিবর্তন উৎপাদনে ভয়ানক প্রভাব ফেলে। চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশটি চাল সংকটে পড়ে। ধানের উৎপাদন ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে যায়। এই ঘাটতি পূরণে সরকারকে ৪৫ কোটি ডলারের চাল আমদানি করতে হয়। চা উৎপাদনে বিখ্যাত শ্রীলঙ্কা। সেখানেও ধস নামে। শ্রীলঙ্কায় খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ২০২১ সালে এই কৃষিনীতি বাতিল করা হয়। 

এক দিকে ঋণ পরিশোধ ও আমদানিতে অপরিকল্পিতভাবে রিজার্ভ খরচ, অন্যদিকে পর্যটন খাতের মতো আয়ের প্রধান উৎসগুলোতে করোনার ধাক্কা শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়।

২০১৯ সালে পর্যটন খাত থেকে শ্রীলঙ্কার আয় ছিল ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে সেটি নেমে আসে ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে। আমদানি করার জন্য বৈদেশিক মুদ্রা পেতে ব্যবসায়ীদের হিমশিম খেতে হয়। চাল, মসুর, চিনি এবং গুঁড়া দুধের মতো খাবারগুলো শ্রীলঙ্কার বাজার থেকে উধাও হতে শুরু করে। এরপর গ্যাস স্টেশনগুলোতেও পেট্রল এবং কেরোসিন ফুরিয়ে যেতে শুরু করে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত তেল কিনতে পারেনি। এতে শ্রীলঙ্কায় বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে নিয়মিত ব্ল্যাকআউটে দেখা দেয়। ফিলিং স্টেশনগুলোতেও গাড়ির দীর্ঘ সারি নিয়মিত দৃশ্যে পরিণত হয়।

গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন প্রধান নিয়োগ দেন। তিনি ৫১ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে শ্রীলঙ্কার অক্ষমতার কথা সরাসরি ঘোষণা করেন। কিন্তু এ পদক্ষেপ শ্রীলঙ্কার ক্ষয়িষ্ণু অর্থের ঘাটতি মেটাতে ব্যর্থ হয়। মে মাসের শুরুতে দেশটির ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রা ছিল মাত্র ৫০ কোটি ডলার। 

ঋণ পেতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। গত সোমবার তীব্র গণ আন্দোলনের মুখে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার (১২ মে) শপথ নিয়েছেন নতুন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহে।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান নন্দলাল ওয়েরাসিংহে বুধবারই বলেছেন, নতুন প্রশাসন শিগগিরই দায়িত্ব গ্রহণ না করলে দেশ অর্থনৈতিক পতনের মুখোমুখি হবে।

‘ভেনেজুয়েলা সংকট’ কীভাবে আন্তর্জাতিক সংঘাতের রূপ নিচ্ছে

ভেনেজুয়েলার তেল আমাদের সম্পদ—ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবি কি যৌক্তিক

চীন চাইলে এক দিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, কিন্তু কীভাবে

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খান—ক্রিকেট বিশ্বের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

ইরান ও ইসরায়েলে সমানতালে চলছে যুদ্ধের প্রস্তুতি

পাকিস্তানকে এফ-১৬ আধুনিকীকরণের প্যাকেজ, ভারতকে কী বার্তা দিতে চান ট্রাম্প

ডার্ক ফ্লিট: নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেভাবে চলে ইরান ও ভেনেজুয়েলার তেল পাচার

এআই চাকরি কেড়ে নিচ্ছে আমেরিকায়, কিন্তু নিয়োগ বাড়াচ্ছে ভারতে—কীভাবে

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ না সম্ভাবনা

শত বছর আগে জাপানের কাছে হারের বদলা চান সি চিন পিং!