আমার কাজকে শীর্ষতম সম্মানে ভূষিত করার জন্য সুইডিশ একাডেমিকে ধন্যবাদ। এটা ঠিকই যে, অন্য কৃতী লেখকদের টপকে আমাকে এই সম্মান দেওয়া নিয়ে আমার নিজের মনেই এখনো সংশয় রয়েছে। সেই সব লেখককে টপকে, যাঁদের আমি অত্যন্ত সম্মান ও সম্ভ্রম করি। কিন্তু এটাও তো বলতেই হবে, এই পুরস্কার আমার কাছেও গৌরবের এবং আনন্দের।
সাহিত্যের প্রকৃতি ও অভিমুখ নিয়ে এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে পুরস্কার প্রাপক কিছু বলবেন, এটাই প্রথার মধ্যে পড়ে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে, সাহিত্য রচয়িতাদের প্রবল দায়িত্বভারের দিকটিকে মনে করিয়ে দেওয়ার, অনুধাবন করার প্রয়োজন রয়েছে। নোবেল পুরস্কারের মঞ্চগরিমা এতটাই যে, এখানে দাঁড়িয়ে একটি কৃতজ্ঞ ইঁদুরের মতো নাকিকান্নার কোনো কারণ নেই। বরং আমার পেশায় যেসব মহৎ মানুষ বছরের পর বছর কাজ করে এসেছেন, তাঁদের গর্বে সিংহের মতো ডাক ছাড়াই তো কর্তব্য!
সাহিত্য কোন দিকে বাঁক নেবে বা তার চরিত্র কেমন হবে—কোনো ফাঁকা গির্জায় দাঁড়িয়ে একজন পাদ্রির নিষ্প্রাণ বক্তৃতা তা নির্ধারণ করে না। সবজান্তা কোনো সমালোচকের হাতের খেলাও নয় তা। বিশেষ করে সেই সব সমালোচক, যাঁরা সবকিছুতেই নৈরাশ্য খুঁজে নিজেদের বিরাট বড় কিছু প্রমাণ করতে চান। মুখের কথার মতোই তো বয়স সাহিত্যের। মানুষের প্রয়োজন থেকেই তার জন্ম। যে প্রয়োজন দিনে দিনে বেড়েছে বই কমেনি। গীতিকবি, চারণকবি, কথক, সাহিত্যিক—এঁরা একে অন্যের থেকে পৃথক বা আলাদা কিছু নন। সেই উষালগ্ন থেকেই তাঁদের কাজকর্ম, তাঁদের দায়িত্ব আমাদের এই মানব প্রজাতিকে গঠন করেছে।
মানবিক বোধ এখন বিভ্রান্তির এক ধূসর ও শূন্যগর্ভ সময়ের মধ্য দিয়ে চলেছে। এর আগে এই মঞ্চে আমার মহান পূর্বসূরি উইলিয়াম ফকনার এ বিষয়ে বলে গেছেন। তিনি একে উল্লেখ করেছেন বিশ্বজনীন আতঙ্ক বা ত্ৰাস হিসেবে। অনেকের চেয়ে ফকনার মানুষের দুর্বলতা ও শক্তিকে ভালো বুঝতেন।
মার্কিন সাহিত্যিক জন স্টাইনবেক ১৯৬২ সালে নোবেল পুরস্কার পান।