সাঈদ আহমদকে নাটকের লোক বলেই চেনে মানুষ। কিন্তু নাটক, চলচ্চিত্র নিয়ে কত যে অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর!
ভালো গান করতেন। তাঁর বড় ভাই হামিদুর রাহমানও ভালো গান করতেন। কবি শামসুর রাহমানের ‘রাহমান’টা যোগ হয়েছে হামিদুর রাহমানের কারণে। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, সে সময় সাঈদ আহমদের বড় ভাই নাজির যোগ দিলেন রেডিওতে, নাসির শুরু করলেন ব্যবসা, হামিদ শুরু করলেন ছবি আঁকা। সাঈদ ভাবলেন, এখন তিনি কোন পথে যাবেন? ঠিক করলেন, সেতার বাজাবেন। বাহাদুর হোসেন খাঁ ছিলেন তাঁর বন্ধু। তাঁর কাছেই তালিম নিতেন। ১৯৫১ সালে সাঈদ আহমদরা পাড়াতেই একটা অর্কেস্ট্রা গড়ে তুললেন।
সে সময় সাঈদ আহমদ আর শামসুর রাহমান রেডিওর জন্য কাজ করেছেন অনেক। সাঈদ আহমদ স্ক্রিপ্ট লিখতেন, শামসুর রাহমান সুর করতেন। ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন তখন হয়ে গেছে। সে সময় করাচি থেকে সাঈদ আহমদকে ডেকে পাঠানো হলো। রেডিওতে ‘প্রোগ্রাম অব দ্য উইক’ এবং ‘প্রোগ্রাম অব দ্য মান্থ’ বলে দুটো অনুষ্ঠান হতো। করাচি থেকে সে অনুষ্ঠান রিলে করে শোনানো হতো। সাঈদ আহমদের মনে তখন ভাষা আন্দোলন। তিনি কম্পোজ করে দিলেন ভাষা আন্দোলনের ওপর। স্বভাবতই সেটা নাকচ হয়ে গেল। বলা হলো, স্টোরি পরিবর্তন করে দিতে হবে।
কী করা যায়! ফন্দি আঁটলেন রেডিওকে জব্দ করবেন। এমনভাবে পরিবর্তন আনলেন, যেন বোঝা না যায়—এটার সঙ্গে ভাষা আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক আছে। লিখে শামসুর রাহমান আর হাসান হাফিজুর রহমানকে দেখালেন। নাম ছিল ‘নির্ভীক যাত্রী’। পরিবর্তনটা আনলেন এভাবে: মরুভূমির ওপর দিয়ে এক কাফেলা যাচ্ছে...। মরুভূমি আছে, কাফেলা আছে, মুসলমান মুসলমান গন্ধ! ব্যস! পাস হয়ে গেল।
যাঁরা শুনলেন, তাঁরা বুঝতে পারলেন—সেটা ছিল ভাষা আন্দোলন ঘিরেই।
সূত্র: সাঈদ আহমদের সাক্ষাৎকার, থিয়েটারওয়ালা, সংখ্যা: ১৭