হোম > নারী

নারীর প্রতি বৈষম্যের শেষ কোথায়

অর্চি হক, ঢাকা 

নারীবিদ্বেষী বক্তব্য প্রদানকারী এবং নারী অবমাননা, লাঞ্ছনা ও কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের বিক্ষোভ সমাবেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গত ১৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনের বিভিন্ন সুপারিশ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে নানা আলোচনা। এর মধ্যে হেফাজতে ইসলামসহ সমমনা কয়েকটি গোষ্ঠী এই কমিশন এবং তাদের প্রতিবেদন বাতিলের দাবিতে সমাবেশ করেছে। এতে নারীবিদ্বেষী বক্তব্য দিয়েছেন নেতারা। সমাবেশে নারীবিষয়ক কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হকের ছবিতে জুতার মালা পরিয়ে রাখতে দেখা যায়। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে নারীর প্রতিকৃতিতে চড়াও হন কেউ কেউ।

মানবাধিকারকর্মীরা মনে করেন, কমিশনের সুপারিশ ঘিরে এ ধরনের সহিংস আচরণ সভ্য দেশের পরিচয় বহন করে না। সুপারিশকে কেন্দ্র করে কয়েকটি গোষ্ঠী নারীবিদ্বেষী প্রচারণা চালাচ্ছে বলে জানান তাঁরা। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ্যে নারীবিদ্বেষী বিভিন্ন বক্তব্য এবং সহিংস কর্মকাণ্ডের পরও সরকারের নিশ্চুপ থাকা আশ্চর্যজনক বলেও মনে করে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।

মানবাধিকারকর্মী ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘নারী কমিশন এবং তাদের প্রস্তাব বাতিলের দাবিতে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে এবং রাজু ভাস্কর্যের সামনে নারী জাতির প্রতি যে চরম অসম্মানজনক, বর্বরোচিত, ন্যক্কারজনক আচরণ সংঘটিত হয়েছে; তা আমাদের সমগ্র নারীসমাজকে স্তম্ভিত করেছে।

এ ধরনের বর্বরোচিত আচরণ ও বক্তব্য কোনো সভ্য দেশ ও সমাজের পরিচয় বহন করে না।’

নারী কমিশন তাদের প্রতিবেদনে ৪৩৩টি সুপারিশ তুলে ধরে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীদের জন্য বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিতে অধ্যাদেশ জারি করা, বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জোর করে যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে ফৌজদারি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা, নারীবিদ্বেষী বয়ান, বক্তব্য ও ছবি পরিবেশন থেকে বিরত থাকা, শ্রম আইন সংশোধন করে যৌনকর্মীদের মর্যাদা ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা, সব প্রতিষ্ঠানে মাতৃত্বকালীন ৬ মাস ছুটি দেওয়া, জাতীয় সংসদে ৬০০ আসন করে তার বিপরীতে অর্ধেক আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত রাখা ইত্যাদি।

আমরা সুপারিশে মুসলিম পারিবারিক আইনকে বাতিল করতে বলিনি। ঐচ্ছিক আইন চেয়েছি। আমরা বলেছি, পারিবারিক আইন যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকবে। তবে, যারা ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইনের অধীনে বসবাস করতে চায় না, নারী-পুরুষ সমতাভিত্তিক আইনের মধ্যে বসবাস করতে চায়, তাদের জন্য একটা সিভিল আইনের অপশন তৈরি করতে হবে। শিরীন পারভিন হক নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান

এগুলোর মধ্যে কিছু সুপারিশ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বিভিন্ন পক্ষ; বিশেষ করে পারিবারিক আইন বিষয়ে কমিশনের সুপারিশ নিয়ে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো নেতিবাচক বক্তব্য দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলুপ্তির লক্ষ্য সামনে রেখে এই সুপারিশগুলো করেছি। সুপারিশগুলো সবার কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য না-ও হতে পারে। এগুলো নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে কোনো ধরনের সহিংস আচরণ কাম্য নয়। আমরা সুপারিশে মুসলিম পারিবারিক আইনকে বাতিল করতে বলিনি। ঐচ্ছিক আইন চেয়েছি। আমরা বলেছি, পারিবারিক আইন যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকবে। তবে, যারা ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইনের অধীনে বসবাস করতে চায় না, নারী-পুরুষ সমতাভিত্তিক আইনের মধ্যে বসবাস করতে চায়, তাদের জন্য একটা সিভিল আইনের অপশন তৈরি করতে হবে।’

বৈষম্যবিরোধী স্লোগান নিয়েই গত বছর সংগঠিত হয়েছিল জুলাই আন্দোলন। অথচ এখন সেই আন্দোলনের অনেক নেতা নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ প্রশ্নে বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছেন বলে মনে করেন মানবাধিকারকর্মীরা। তাঁরা জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির একাধিক নেতা প্রকাশ্যে নারীবিদ্বেষী বক্তব্য দিচ্ছেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

তবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সম্মুখসারির যোদ্ধা উমামা ফাতেমা কমিশনের প্রতিবেদন বাতিলের দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘অভ্যুত্থানের পর দেশের ৫০ শতাংশ জনগণের অধিকারের প্রশ্ন যাদের কাছে উটকো ঝামেলা লাগে, তারা আসলে কোন ধরনের রাজনীতি করতে চায়, তারাই জানে। নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে। কিন্তু জনসম্মুখে সভা-সমাবেশ করে যেসব বক্তৃতা ঝাড়া হচ্ছে, তাতে আপনাদের বিরোধের পরিবর্তে নারীবিদ্বেষটাই বেশি প্রকাশ পায়।’

মানবাধিকারকর্মী ও সংগঠনগুলো মনে করছে, কমিশনের সুপারিশ নিয়ে ধর্মীয় অজুহাতে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। জাতীয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরাম তাদের বিবৃতিতে বলেছে, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাতিলের দাবি তোলা অযৌক্তিক এবং নারীবিদ্বেষী মনোভাবের প্রকাশ। ৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম সামাজিক প্রতিরোধ জোট তাদের বিবৃতিতে বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং ইতিমধ্যে ১০টি সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করেছে। শুধু নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে নারীবিরোধী গোষ্ঠীগুলো নারী কমিশন এবং তাদের প্রস্তাব বাতিলের দাবির নামে নারীর সমতার অধিকারের বিরুদ্ধে সহিংস হয়ে উঠেছে।

সংগঠনটি মনে করে, নারীর প্রতি অন্যায়, বর্বরতা ও নৃশংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যা সরকারের দায়বদ্ধতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

বড়দিনের বিখ্যাত গানগুলোর নেপথ্যের নারীরা

উদ্যোক্তা মেলা: সংখ্যা কমলেও আশাবাদী নারী উদ্যোক্তারা

রোজের ফুটে ওঠার গল্প

আন্তর্জাতিক নারী: অন্ধকার আকাশ যাঁর ল্যাবরেটরি

অধিকারের পক্ষে মার্থার লড়াই

‘মেয়েদের ফুটবলে বাধা দিতে খোঁড়া হয়েছিল মাঠ’

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মন্ত্রণালয় ও সংসদে আসনের দাবি

জটিল প্রক্রিয়ার কারণে অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েও অভিযোগ করতে পারেন না নারীরা

ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে শাহেলীর লড়াই

১১ মাসে নির্যাতনের শিকার ২,৫৪৯ নারী ও কন্যাশিশু