হোম > নারী

পৃথিবীকে এগিয়ে দিয়ে নোবেল পেলেন তাঁরা

মইনুল হাসান 

এ বছর নোবেল পুরস্কার বিজয়ী তিন নারীকে নিয়ে এই বিশেষ আয়োজন। লিখেছেন মইনুল হাসান। 

৫৪ বছরে তৃতীয় নারী
কৈশোরে স্বপ্ন দেখেছিলেন, ভবিষ্যতে প্রত্নতত্ত্ববিদ হবেন। কিন্তু পল ডি ক্রুইফেরের ‘দ্য মাইক্রোব হান্টার্স’ বইটি পড়ার পর অণুজীববিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চাইলেন। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে তাঁকে আকৃষ্ট করল অর্থনীতি। শেষ পর্যন্ত সে বিষয়ে গবেষণা করেই ৭৭ বছর বয়সে তিনি নোবেল পুরস্কার পেলেন। অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার প্রবর্তনের ৫৪ বছরের ইতিহাসে মার্কিন অর্থনীতিবিদ ক্লাউডিয়া গোল্ডিন তৃতীয় নারী হিসেবে এ পুরস্কার পেলেন।

পৃথিবীতে নারী শিক্ষার হার বাড়া এবং পৃথিবীকে এগিয়ে দিয়ে নোবেল পেলেন তাঁরা। কর্মক্ষেত্রে নারীদের উপস্থিতি আধুনিক শ্রমবাজারে সবচেয়ে বড় সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলোর মধ্যে অন্যতম। একই কাজের জন্য পুরুষ সহকর্মীর চেয়ে কম বেতন পাওয়া, শীর্ষ পদগুলো একচেটিয়াভাবে পুরুষদের দখলে থাকাসহ বিভিন্ন কারণে শ্রমবাজারে নারীরা আজও বৈষম্যের শিকার। এ বিষয়ে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্লাউডিয়া গোল্ডিন বিগত দুই শতকের বিশাল তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তাঁর গবেষণা দাঁড় করিয়েছেন।

নিউইয়র্কে ১৯৪৬ সালে জন্ম নেওয়া ক্লাউডিয়া গোল্ডিনের স্বামী লরেন্স এফ কাটজও একজন অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সহকর্মী। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার সংবাদে তিনি বলেছেন, ‘এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার, শুধু আমার জন্য নয়, তাঁদের জন্যও, যাঁরা এ বিষয়ে কাজ করছেন এবং বোঝার চেষ্টা করছেন, মানবসমাজের অনেক অগ্রগতির পর, আজও কেন এমন লৈঙ্গিক বিভেদ-বৈষম্যের অস্তিত্ব রয়েছে!’

লৈঙ্গিক বৈষম্য থেকে উত্তরণে অধ্যাপক গোল্ডিন কোনো সমাধানের কথা না বললেও তাঁর গবেষণা নীতিনির্ধারকদের এ সমস্যা মোকাবিলা করতে যথেষ্ট সহায়ক হবে।

অবহেলিত বিজ্ঞানীর নোবেলপ্রাপ্তি
২০২০ সাল। ভয়াবহ সংক্রামক করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক উদ্ভাবনে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটতে থাকা বিজ্ঞানীরা সে সময় আশার আলো দেখতে পান কাতালিন ক্যারিকো ও ড্রিউ ওয়েইসম্যানের ২০০৫ সালে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধে। তাঁদের সেই গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে মাত্র ১০ মাসে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করে কোটি মানুষের প্রাণ বাঁচান বিজ্ঞানীরা। অথচ এমআরএনএ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে একসময় কাতালিন হয়েছিলেন হাসির পাত্র। টেম্পল ইউনিভার্সিটিতে চার বছর চাকরির পর তা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। বিভিন্ন গবেষণাগার তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিল বহুবার। পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, এমআরএনএ-ভিত্তিক ‘অবাস্তব’ গবেষণা করে তিনি সময় নষ্ট করছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শর্ত আরোপ করে, এমন বিষয় নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যেতে চাইলে কাতালিনকে পদাবনতি মেনে নিয়ে কম বেতনে কাজ করতে হবে। শর্ত মেনে গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কাতালিন। কারণ, নিজ দেশে পিএইচডি গবেষণা শুরুর সময় থেকেই তিনি বিশ্বাস করতেন, বার্তাবাহী আরএনএ (এমআরএনএ) গবেষণা পৃথিবীতে নতুন যুগের সূচনা করবে। তাঁর সেই বিশ্বাস মিথ্যা হয়নি। এ বছর তিনি পেলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার সহকর্মী ড্রিউ ওয়েইসম্যানের সঙ্গে যৌথভাবে।

কসাই বাবা আর হিসাবরক্ষক মায়ের ঘরে ১৯৫৫ সালে হাঙ্গেরির সোলনক শহরে জন্ম নেওয়া কাতালিন স্বপ্ন দেখতেন, বিজ্ঞানী হবেন। হাঙ্গেরি থেকে ১৯৮২ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি নেন। ১৯৮৫ সালে টেম্পল ইউনিভার্সিটিতে চাকরি নিয়ে স্বামী এবং দুই বছরের কন্যাসন্তান সুজানাকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ি দেন যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু সেখানে বিভিন্ন ঘটনার সূত্রে বহুদিন কপর্দকহীন অবস্থায় কেটেছে তাঁর। হয়েছেন ক্যানসারে আক্রান্ত।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আরএনএ ভ্যাকসিন আগের সব ভ্যাকসিন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এক বিস্ময়কর বৈপ্লবিক উদ্ভাবন। এটি ক্যানসারসহ বহু জটিল, দুরারোগ্য ও বিরল রোগের চিকিৎসায় উজ্জ্বল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। আর এর মূল নায়ক কাতালিন ক্যারিকো। 

নির্যাতিতার শান্তিতে নোবেল জয়
এভিন কারাগারে কেমন কাটছে নারগিস মোহাম্মদির দিনকাল? ৬ অক্টোবরের পর এ প্রশ্নের উত্তর জানতে পৃথিবীর সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কারণ, ইরানের এভিন কারাগারে বন্দী সে দেশের মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক নারগিস মোহাম্মদি এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ইরানে নারী নিপীড়ন ও লৈঙ্গিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় তাঁকে।

মানবাধিকার ও স্বাধীনতার জন্য আপসহীন সংগ্রামে জড়িত থাকার কারণে নারগিস মোহাম্মদি ইরানি ক্ষমতাসীনদের রোষের শিকার হয়েছেন। বিভিন্ন অভিযোগে তাঁকে ১৩ বার আটক করা হয় এবং ৩১ বছরের কারাদণ্ডসহ ১৫৪টি বেত্রাঘাতের শাস্তি দেওয়া হয়। তাঁর হয়ে আইনি লড়াই করছেন ২০০৩ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী শিরিন এবাদি।

নারগিস মোহাম্মদি ইরানের জানজান শহরে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭২ সালের ২১ এপ্রিল। পদার্থবিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন এবং প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকেই বেছে নেন তিনি। সেই সঙ্গে ইরানে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিশেষ করে নারীদের প্রতি অমানবিক আচরণ, পুরুষের একাধিক বিয়ে, মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে সক্রিয় আন্দোলনে অংশ নেন এবং নেতৃত্ব দেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জননী। তাঁর স্বামী তাগি রহমানিও একজন মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিক। তাগি রহমানি দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ১০ বছর ধরে ফ্রান্সে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। ২৪ বছরের বিবাহিত জীবনে এই সংগ্রামী জুটি মাত্র ছয় বছরের কম সময় একত্রে ছিলেন।

প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী এবং অফুরন্ত জীবনীশক্তির অধিকারী নারগিস মোহাম্মদি এ বছরের জুন মাসে প্রথম সারির ফরাসি দৈনিক ‘ল্যু মন্ড’ পত্রিকায় একটি চিঠি পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেই চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা কারাপ্রাচীরের ফাটল ধরার শব্দ শুনতে পাচ্ছি, অচিরে তা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে। আমাদের বিজয় অনিবার্য’। ‘জিন-জিয়ান-আজাদি’ অর্থাৎ ‘নারী-জীবন-মুক্তি’র অগ্নিমন্ত্রে উজ্জীবিত নারগিস মোহাম্মদির নোবেল জয় কি সেই বিজয়ের সূচনাসংকেত?

বড়দিনের বিখ্যাত গানগুলোর নেপথ্যের নারীরা

উদ্যোক্তা মেলা: সংখ্যা কমলেও আশাবাদী নারী উদ্যোক্তারা

রোজের ফুটে ওঠার গল্প

আন্তর্জাতিক নারী: অন্ধকার আকাশ যাঁর ল্যাবরেটরি

অধিকারের পক্ষে মার্থার লড়াই

‘মেয়েদের ফুটবলে বাধা দিতে খোঁড়া হয়েছিল মাঠ’

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মন্ত্রণালয় ও সংসদে আসনের দাবি

জটিল প্রক্রিয়ার কারণে অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েও অভিযোগ করতে পারেন না নারীরা

ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে শাহেলীর লড়াই

১১ মাসে নির্যাতনের শিকার ২,৫৪৯ নারী ও কন্যাশিশু