ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা স্টারলিংকের ভারতে পরিষেবা মূল্য নির্ধারণ নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সোমবার সংস্থার স্থানীয় ওয়েবসাইটে কিছু ডেটা দৃশ্যমান হওয়ায় ভারতীয় গ্রাহকদের জন্য পরিষেবা মূল্য প্রকাশিত হয়ে যায়। কিন্তু এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সংস্থাটি দ্রুত সংশোধন করে জানিয়েছে, প্রদর্শিত সংখ্যাগুলো ভারতে স্টারলিংক পরিষেবার প্রকৃত মূল্য নয়।
দিনের শুরুতে স্টারলিংকের ভারতীয় ওয়েবসাইটে গ্রাহকদের জন্য মাসিক পরিষেবা মূল্য ৮ হাজার ৬০০ রুপি এবং হার্ডওয়্যার কিটের দাম ৩৪ হাজার রুপি দেখানো হয়েছিল।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রাথমিকভাবে স্টারলিংক দুটি প্যাকেজ নিয়ে সেবা চালু করেছে। প্যাকেজ দুটি হলো, স্টারলিংক রেসিডেন্স এবং রেসিডেন্স লাইট। এর মধ্যে স্টারলিংক রেসিডেনসিয়াল প্যাকেজের মাসিক খরচ ধরা হয়েছে ৬ হাজার টাকা এবং রেসিডেনসিয়াল লাইট প্যাকেজের মাসিক খরচ ৪ হাজার ২০০ টাকা। তবে উভয় প্যাকেজের জন্যই গ্রাহকদের ৪৭ হাজার টাকা এককালীন যন্ত্রপাতির খরচ বহন করতে হবে। এই প্যাকেজগুলোতে কোনো প্রকার স্পিড অথবা ডেটা ব্যবহারের সীমা থাকছে না। গ্রাহকেরা ৩০০ এমবিপিএস পর্যন্ত গতির আনলিমিটেড ডেটা ব্যবহার করতে পারছেন।
ভারতে ওই ঘটনার বিষয়ে স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সিনিয়র ডিরেক্টর-স্টারলিংক বিজনেস অপারেশনস, লরেন ড্রেয়ার এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্টে বলেন, ‘স্টারলিংকের ভারতীয় ওয়েবসাইট এখনো চালু হয়নি, গ্রাহকদের জন্য পরিষেবা মূল্য এখনো ঘোষণা করা হয়নি এবং আমরা ভারত থেকে কোনো অর্ডার নিচ্ছি না।’
তিনি আরও স্পষ্ট করে জানান, একটি কনফিগারেশন ত্রুটির কারণে পরীক্ষামূলক ডামি ডেটা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দৃশ্যমান হয়েছিল, কিন্তু এই সংখ্যাগুলো ভারতে স্টারলিংক পরিষেবার প্রকৃত খরচ প্রতিফলিত করে না। ত্রুটিটি দ্রুত ঠিক করা হয়েছে।
ড্রেয়ার আশা প্রকাশ করে বলেন, তাঁরা দ্রুতগতিতে ভারতের মানুষের কাছে স্টারলিংকের উচ্চ গতির ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দিতে আগ্রহী। তাঁরা বর্তমানে সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে মনোযোগ দিচ্ছেন, যাতে পরিষেবা (এবং ওয়েবসাইট) চালু করা যায়।
ভারতে পরিষেবা শুরু করার প্রস্তুতি হিসেবে কোম্পানিটি সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই পদগুলোর মধ্যে রয়েছে পেমেন্টস ম্যানেজার, অ্যাকাউন্টিং ম্যানেজার, সিনিয়র ট্রেজারি অ্যানালিস্ট এবং ট্যাক্স ম্যানেজার।
স্টারলিংক বিশেষত প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর প্লাগ অ্যান্ড প্লে ইনস্টলেশন, ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশের বেশি আপটাইম, চরম বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও কার্যকর থাকা এবং ডেটা ক্যাপ না থাকার মতো বৈশিষ্ট্যগুলোর ওপর জোর দিচ্ছে।
এর আগে মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার স্টারলিংক স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনস প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে একটি লেটার অব ইন্টেন্ট স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল মহারাষ্ট্রের গডচিরোলি, নন্দুরবার, ধারশিব এবং ওয়াশিমের মতো প্রত্যন্ত ও অনুন্নত অঞ্চলে সরকারি প্রতিষ্ঠান, গ্রামীণ বাসিন্দা এবং গুরুত্বপূর্ণ জন পরিকাঠামোতে স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা স্থাপন করা।
তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস এবং রাজ্য তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী আশীষ শেলারের উপস্থিতিতে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মুখ্যমন্ত্রী ফড়নবিস তাঁর এক্স হ্যান্ডলে এই অংশীদারত্বকে ভারতের প্রথম রাজ্য হিসেবে উল্লেখ করে স্টারলিংককে স্বাগত জানিয়েছিলেন।