চার মাসের প্রস্তুতিতে জুনিয়র হকি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ যে ট্রফি নিয়ে ফিরবে, এমন ভাবাটাও বাড়াবাড়ি। প্রথমবারের মতো হকির যেকোনো পর্যায়ে বিশ্বকাপ খেলাই ছিল বাংলাদেশের কাছে বড় কিছু। সেখানে নিজেদের শুধু অংশগ্রহণেই সীমাবদ্ধ রাখেনি বাংলাদেশ। ছিল লড়াকু মানসিকতা, সেটিই এনে দিয়েছে সাফল্য।
১৭ তম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে আজ মাদুরাই আন্তর্জাতিক হকি স্টেডিয়ামে অস্ট্রিয়ার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। জিতলেই মিলবে চ্যালেঞ্জার্স কাপের নামক এক শিরোপা। কোচ সিগফ্রাইড আইকম্যান দলের প্রস্তুতি নিয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মূলত আমরা এখন পর্যন্ত যেভাবে খেলেছি, সেভাবেই খেলতে চাই, তবে পারফরম্যান্স আরও উন্নত করা এবং ভুল কমানোই লক্ষ্য। আগের ম্যাচগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে যেন আরও ভালো খেলতে পারি, সেটাই চেষ্টা।’
গ্রুপপর্বে বাংলাদেশ পেয়েছিল একবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও গতবারের রানার্সআপ ফ্রান্স। দুই দলে কাছে হারলেও ব্যবধান বড় রাখেনি। এমন ম্যাচে ফেরার জন্য লড়াই করেছে প্রাণপণ। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ৩ গোলে পিছিয়ে থাকার পরও ম্যাচ শেষ করে ৩-৩ গোলের ড্রয়ে। সেই কোরিয়াকে স্থান নির্ধারণী ম্যাচে উড়িয়ে দিয়েছে ৫-৩ গোলে। এর আগে ওমানকে তো পাত্তাই দেয়নি। আদায় করে নেয় ১৩-০ গোলের জয়।
অনূর্ধ্ব-২১ দলের এমন পারফরম্যান্স দেশের হকির পালে নতুন হাওয়া এনে দিয়েছে। সাবেকরাও দেখতে পাচ্ছেন সম্ভাবনার জোয়ার। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক রফিকুল ইসলাম কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশ দলের এমন পারফরম্যান্স মনে হয় না কেউ প্রত্যাশা করেছে। গ্রুপে যে ধরনের শক্তিশালী দল পড়েছে, একটু সহজ গ্রুপে পড়লে হয়তো কোয়ার্টার ফাইনালে আমরা চলে যেতে পারতাম।’
৫ ম্যাচে ৪ হ্যাটট্রিকসহ ১৫ গোল করে আলো ছড়িয়েছেন পেনাল্টি কর্নার বিশেষজ্ঞ আমিরুল ইসলাম। তাঁকে নিয়ে সাবেক অধিনায়ক মাহমুদুর রহমান চয়ন বলেন, ‘পেনাল্টি কর্নার বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রথাটা আমি শুরু করেছিলাম। এখন আশরাফুল-সবুজ আছে। আমিরুল আসায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়ে যাবে।’
আমিরুলদের এমন পারফরম্যান্সের পরও ভবিষ্যৎ নিয়ে আছে অনিশ্চয়তা। অবশ্য দেশের হকির চিত্রটা এমনই, মাঝেমধ্যে আলোড়ন তুলে লম্বা সময়ের জন্য ঝিমিয়ে পড়া। আন্তর্জাতিক ম্যাচ তো দূরের কথা, ঘরোয়া লিগও হচ্ছে না নিয়মিত।
আমিরুল-রকিদের উন্নতির রাস্তায় বাধা তাই প্রতিনিয়ত। চয়ন বলেন, ‘আমরা যখন খেলেছি, সে সময় এ রকম বেশ কয়েকটা রেজাল্ট করেছি, যেটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু হকি ওই আগের জায়গায় থেকে গেছে। এই দলকে সুযোগ-সুবিধা দিলে মনে হয়, ভালো একটা সম্ভাবনা আছে। কিন্তু ওই যে টুর্নামেন্ট খেলে আসার পরে যেন আবার সবাই হারিয়ে না যায়।’
কামালও অনেকটা একই সুরে বলেন, ‘আমাদের কাঠামো দুর্বল। তো বিশেষ করে ঘরোয়া লিগ তো হয়ই না; আন্তর্জাতিক ম্যাচের বাইরে আমরা সেভাবে খেলি না। এই দলটা বছরে ৩০ থেকে ৪০ ম্যাচ যেন খেলতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।’
হকির উন্নতিতে পৃষ্ঠপোষকদের এগিয়ে আসা দরকার—মনে করেন কোচ। তিনি বলেন, ‘তাদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক খেলা চালিয়ে যেতে হবে এবং আরও উন্নয়ন ঘটাতে হবে। হকির জন্য এমন স্পনসর দরকার, যারা এই প্রতিভাগুলোকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে না পারলে অল্প সময়ে তাদের অগ্রগতি নষ্ট হয়ে যাবে।’