সাক্ষাৎকার

৫ বছরে সিনিয়র বিশ্বকাপে খেলা সম্ভব

প্রথমবার জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কিছু করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ। আর এই সাফল্যের পেছনে অন্যতম নায়ক আমিরুল ইসলাম। ৬ ম্যাচে ১৮ গোল করে এখনো টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা। তরুণ এই ডিফেন্ডার এবার স্বপ্ন বুনছেন জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলার। আজকের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি শুনিয়েছেন সেই গল্প। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনোয়ার সোহাগ

প্রশ্ন: প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে ভালো একটা অর্জন নিয়ে ফিরছে বাংলাদেশ। ২৪ দলের মধ্যে ১৭তম হয়ে জিতেছে চ্যালেঞ্জার ট্রফি। কেমন লাগছে?

আমিরুল ইসলাম: অবশ্যই ভালো লাগছে। বিশ্বকাপের মতো একটা মঞ্চে আমরা সাফল্যের সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা ওড়াতে পেরেছি। একটা ট্রফি নিয়ে ফিরতে পারছি। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন। অবশ্যই আমাদের গর্ব হচ্ছে। দেশের মানুষ এখন আমাদের সামর্থ্য নিয়ে ভরসা করতে পারবে।

প্রশ্ন: অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে আপনি হ্যাটট্রিক করলেও ম্যাচের শেষ দিকটায় খুবই নাটকীয়তা দেখা গেছে। ওই ম্যাচে স্নায়ুচাপ উতরে যাওয়া কোন মন্ত্রে?

আমিরুল: শেষ ৫ মিনিট খুব চাপের ছিল। ছোট ছোট ভুলগুলো আসলে বড় সমস্যা তৈরি করে। এর কারণে গোল হজম করতে হতে পারে এবং সেটাই হয়েছে। চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব ঠান্ডা মাথায় খেলার। গোলকিপারের ওপর চাপ কম রাখার। আলহামদুলিল্লাহ আমরা জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছি। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে টিম হোটেলে গিয়েছি আমরা।

প্রশ্ন: ৬ ম্যাচে ৫ হ্যাটট্রিক, ১৮ গোল। টুর্নামেন্টটা নিশ্চয়ই আপনার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে?

আমিরুল: আমি আমার কাজটা করে যাব। সেটার ফল পেয়েছি। হ্যাটট্রিক করাটা অভ্যাস বলব না। আমার কাছে সুযোগ এসেছে, যে করেই হোক সুযোগ কাজে লাগাতেই হবে। নিজের প্রতি বিশ্বাস ছিল, আমি পারব।

প্রশ্ন: ১৫ দিন আগেও হকির এই টুর্নামেন্টে আপনাদের অংশগ্রহণ নিয়ে খুব একটা আলোচনা ছিল না। এটি কি নিজেদের চাপমুক্ত হয়ে খেলতে বেশি সহায়তা করেছে?

আমিরুল: আসলে পরিকল্পনা করে তো সবকিছু হয় না। পেনাল্টি কর্নার আমার শক্তির জায়গা। কোচের সঙ্গে আমি বেশি আলোচনা করেছি এ নিয়ে। শক্তির একেকটা জায়গা ধরে আমি অনুশীলন করেছি। কোচ আমাকে অনেক সহায়তা করেছেন। ধন্যবাদ দেব সতীর্থদেরও। বিশেষ করে ফরোয়ার্ডদের। তারা পেনাল্টি কর্নার আদায় করার কারণেই আমি আজকের আমিরুল কিংবা পরিচিতি পাচ্ছি। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা সব সময়ই থাকবে।

প্রশ্ন: হকিতে খুব একটা ভালো সুযোগ-সুবিধা নেই, কাঠামো নেই। তবু বড় মঞ্চে সাফল্য এসেছে কোন সূত্র ধরে?

আমিরুল: সাফল্যের পেছনে খেলোয়াড়দের অবদান সবচেয়ে বেশি। তারা দেশের হয়ে নিজের আত্মবিশ্বাসটুকু সম্বল করে হকি নিয়ে এগোচ্ছে। কিন্তু দেখুন, আমরা সব সময় ভালো পৃষ্ঠপোষক পাই না। সরকার থেকে খুব একটা আর্থিক সাপোর্ট পাই না। বা ন্যূনতম যে সম্মানী, সেটাও পাই না। আমরা দেশের জন্য খেলি। সব সময় এটাই হয়ে আসছে। তো ভবিষ্যতে যদি কিছু পাই আলহামদুলিল্লাহ, না পেলেও আর কী করার থাকতে পারে।

প্রশ্ন: ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক ঘটনায় সংবাদ শিরোনাম হয় হকি। আপনাদের এই সাফল্যে দেশের হকির ভাবমূর্তি কতটা বদলাবে বলে মনে হয়?

আমিরুল: বিষয়টা খেলোয়াড় হিসেবে আমারও খারাপ লাগে। আমাদের এই পারফরম্যান্স অনেক কিছু বদলে দিতে পারবে। যদি বিষয়টা ইতিবাচকভাবে নেওয়া হয় এবং দলটা যদি কাজ করে।

প্রশ্ন: বড় মঞ্চে ভালো করেও দলকে ঘিরে একটা অনিশ্চয়তা ভর করেছে। আপনারা জানেন না যে এরপর আপনাদের পরের টুর্নামেন্টটা কী হবে।

​আমিরুল: প্রথমত, আমরা এত কিছু চিন্তা করছি না। আমাদের লক্ষ্য ছিল ভালো একটা ফল নিয়ে আসা। তো আলহামদুলিল্লাহ, করতে পেরেছি। এখন বাকিটা ফেডারেশনের হাতে। আমরা এই বিষয়ে আশা করছি। আমরা চাই যেন খেলাটা মাঠে থাকে। ফেডারেশনে আবার বড় ফান্ডও নেই। সব সময় শুনছি যে টাকা নেই, টাকা নেই! এটা একটা সমস্যা। তো আমি বলব যে যেন যারা পৃষ্ঠপোষক আছে, তারা যদি এখানে থাকে, তাহলে আমি মনে করি, তারা এই মিশনে আরও কাজ করবে এবং তারা এই বিষয় আরও গুরুত্বের সঙ্গে নেবে।

প্রশ্ন: এখন কি স্বপ্ন দেখেন যে হকির সিনিয়র বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের খেলা সম্ভব?

​আমিরুল: আমি বলব যে যদি দলটার পরিচর্যা করা হয় এবং সঙ্গে যদি কিছু খেলোয়াড় যোগ করা হয়; তাহলে দলটা শিগগির ভালো অবস্থায় যাবে। সঙ্গে যদি একজন ভালো মানের কোচ থাকেন, তাহলে ৫-৭ বছরের মধ্যে বিশ্বকাপে পৌঁছানো সম্ভব।

প্রশ্ন: হকিতে ফ্র‍্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের ছোঁয়া লাগলেও সেটা স্থায়ী হয়নি। এ রকম টুর্নামেন্ট নিশ্চয়ই খেলতে চান নিয়মিত?

আমিরুল: এমন টুর্নামেন্ট হলে অবশ্যই আমাদের জন্য ভালো। আমরা চাই যেন এই লিগ প্রতিবছর হয়। এতে আরও খেলোয়াড় উঠে আসবে। সেখানে বিদেশি কোচরাও আসবেন, আমরা তাঁদের কাছ থেকে শিখতে পারব। আমি বলব, এটা যদি নিয়মিত হয়, তাহলে দেশের হকি আরও ভালো পথে যাবে।

প্রশ্ন: ভারতে হকির সংস্কৃতি কেমন দেখলেন?

আমিরুল: প্রথমত হচ্ছে, ওদের অবকাঠামোটা আসলে খুব শক্তিশালী। সরকার থেকে খেলোয়াড়েরা অনেক সাপোর্ট পায়। জুনিয়র লেভেল থেকে সিনিয়র লেভেল পর্যন্ত ওদের পরিচর্যা করা হচ্ছে। স্পোর্টস ইনস্টিটিউট সারা বছরই ওদের সাপোর্ট দেয় এবং ট্রেনিং করতে পারে। ওদের মধ্যে লড়াই করার চেতনা আছে, যে কারণে অনেক উন্নত। আমাদের তো বিকেএসপির পর অনেকে ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে, ওখানে (ভারতে) এ রকম না।

প্রশ্ন: অনেকে তারকাখ্যাতি পাওয়ার পর পথ হারিয়ে ফেলেন। নিজেকে নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

আমিরুল: কে কী বলল না বলল, এসবে কান দিই না। চেষ্টা করব সব সময় মাটিতে পা রাখার। আমি পরিশ্রমে বিশ্বাসী। খারাপ পারফরম্যান্স যখন হয়, তখন চেষ্টা করি স্বাভাবিক থাকতে। কোচের সঙ্গে পরামর্শ করি, কীভাবে খারাপ সময়টা কাটিয়ে উঠতে পারি।

সবাই কথা বলার অভ্যাসটা গড়ে তুলছে

‘একটু ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল, ঠিক হয়ে গেছে’

আমাকে হকির হামজা ডাকলে গর্বিত হই

সামনে আরও অনেক কিছু আসছে: ভারতকে হারানোর নায়ক মোরসালিন

আমার কি স্ত্রী-মেয়ে-বোন নেই, জাহানারার অভিযোগ নিয়ে মঞ্জু

‘জাহানারা মুখ খুলেছে, জুনিয়ররা অ্যাবিউজ হলে কি মুখ খুলতে পারবে’

‘এক বছরে ক্রীড়াঙ্গনে খুব বেশি পরিবর্তন চোখে পড়েনি’

‘সাইকেলটা নিয়ে মারামারি হচ্ছে!’

ওয়াসিম আকরামের কাছে বাংলাদেশের মানুষ, খাবার—সবই দারুণ

বাংলাদেশে প্রবাসী ফুটবলার আরও বেশি আসা উচিত