জাতীয় স্টেডিয়ামে স্নায়ুক্ষয়ী উত্তেজনা। ১-১ স্কোরলাইনে খেলা চলছে সাডেন ডেথে। ঠিক তখনই বাঁ পায়ের দুর্দান্ত এক শটে হিম বাতাসে সোনালি সুবাস ছড়ালেন মতিউর মুন্না। গ্যালারি ফেটে পড়ল আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। ২২ বছর পেরিয়ে গেলেও তেমন উপলক্ষ আর পায়নি বাংলাদেশ। হারাতে পারেনি ভারতকে।
সেই আক্ষেপ নিয়ে নতুন করে বুনতে হচ্ছে স্বপ্ন। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে কাল বাংলাদেশ-ভারত দ্বৈরথের আরও একটি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় স্টেডিয়াম। এই স্টেডিয়ামেই মতিউর রহমানের গোল্ডেন গোলে ২০০৩ সাফের সেমিফাইনালে শেষবার ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
এর পর থেকে প্রতিবার ভারত ম্যাচ এলেই মনে পড়ে মুন্নাকে। গতকাল আজকের পত্রিকার সঙ্গে আলাপে সাবেক এই ফুটবলারও খুলে দিলেন স্মৃতির ঝাঁপি। বাংলাদেশের হয়ে অর্ধশত ম্যাচ খেলে তাঁর গোল দুটি; যার একটিতে রয়েছে সোনালি প্রলেপ, ‘আমার ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত এটি। ওদের প্রেস করে বলটা নিয়ে সলো রান নিয়েছিলাম। সেখান থেকে বাঁ পায়ের শটে গোল। এমন গোল যদি আমাকে হাজারবার চেষ্টা করতে বলে, তারপরও আর সম্ভব না। দর্শক সমর্থন ছিল, নিজের ভেতর একটা তাড়না ছিল। তাতেই হয়ে গেছে। কিছু কিছু বিষয় এ রকম থাকে। এটাই শেষ গোল্ডেন গোল। এরপর তো সেটা বন্ধই হয়ে গেছে। হয়তো আমার ভাগ্যেই ছিল।’
বাংলাদেশ আর ভাগ্যের সহায়তা পায়নি। ঘরের মাঠ হোক কিংবা বাইরে—ভারতের বিপক্ষে মাঠ ছাড়তে হয়েছে হার কিংবা ড্র নিয়ে। জয়ের হাসি আর হাসেনি বাংলাদেশ। ২২ বছর পর সেই দুঃখ এবার ঘুচবে বলে মনে করেন মুন্না। আর অন্য সবার মতো তাঁর মনেও আত্মবিশ্বাসের বারুদ জমিয়ে দিয়েছেন হামজা চৌধুরী। মুন্না বলেন, ‘আমরা সৌভাগ্যবান, হামজা আমাদের হয়ে খেলছে। এটা আমাদের অনেক বড় পাওনা। তাকে দেখে আরও অনেকে আসছে খেলতে। ম্যাচটা তার জন্য হলেও জিততে হবে।’
ঘরের মাঠ বলেই ভারতের বিপক্ষে জেতা কঠিন হবে না বলে মনে করেন মুন্না। তাঁর চোখে, ‘ভারতের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা আমি দেখেছি। সেটা দেখার পর মনে হয়েছে, জেতা তেমন একটা কঠিন হওয়ার কথা না। যেহেতু ঘরের মাঠে খেলা, গ্যালারি পূর্ণ থাকবে।’
হামজার কাঁধে নেতৃত্বের ভার দেখতে চান মুন্না, ‘আমার মনে হয়, অধিনায়কত্বের আর্মব্যান্ড হামজার হাতে দিলে ভালো হয়। তাতে হামজা আরও দায়িত্ব নেবে, সবাই তার কথা শুনবে। এটা তো কোচের সিদ্ধান্ত, কোচ কীভাবে কী করবেন, সেটা তিনিই বলতে পারবেন।’
প্রবাসী ফুটবলাররা প্রশংসায় ভাসলেও মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখছেন স্থানীয় ফুটবলাররা। মুন্না মনে করেন, জিততে হলে হামজাকে কেন্দ্র করেই খেলতে হবে। বললেন, ‘আমাদের স্থানীয় যারা এখানে আছে, যদিও সবাই বাংলাদেশি, তবু তারা যদি হামজাকে সহায়তা করে, এই ম্যাচ জেতা তেমন একটা কঠিন হবে না। হামজা আসায় ধরে নিচ্ছে, আমরা ওই মানের হয়ে গেছি। হামজাকে সহায়তা করে শুধু নিজের দায়িত্বটা পালন করলেই হয়।’
ভারত ম্যাচের প্রস্তুতিতে নেপালের বিপক্ষে ঘরের মাঠে শেষ মুহূর্তের গোলে ২-২ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ। এমন ভুল করলে ফিরে আসার সুযোগ থাকবে না। মুন্না বলেন, ‘হামজা-শমিত দুজনে মিলে তো আর ১১ জনের খেলা খেলে দেবে না। এটা ডিফেন্স লাইনের দুর্বলতা। ওরা অমনোযোগী হয়ে যায় কিছু কিছু সময়। শেষ বাঁশি না বাজা পর্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।’
ফুটবল ছাড়ার পর ফুটবল অঙ্গনে আর নিয়মিত দেখা যায় না মুন্নাকে। নিজের ব্যবসায় কাটাচ্ছেন ব্যস্ত সময়। এর মধ্যেও কাল মাঠে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। হয়তো তাঁর মতো আরেক মুন্নাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য।