দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং ইনিংস শেষেই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল। জিততে হলে বিশ্বকাপে রান তাড়ার রেকর্ড গড়তে হবে নিউজিল্যান্ডকে। সেই চাপেই যেন আজ পিষ্ট হলো কিউইরা। ৩৫৮ রানের লক্ষ্যে তাড়া করতে নেমে ১৬৭ রানেই অলআউট তারা।
অবশ্য নিজেদের সর্বশেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রায় ৪০০ ছুঁই ছুঁই স্কোর তাড়া করে জিতেই যাচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৫ রানের আক্ষেপে পুড়তে হয় তাদের। আজ প্রোটিয়াদের দেওয়া লক্ষ্যের অর্ধেকের কাছেও যেতে পারেনি তারা।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই ধাক্কা খায় নিউজিল্যান্ড। দলীয় ৮ রানে ওপেনার ডেভন কনওয়েকে হারিয়ে বসে কিউইরা। ২ রানে মার্কো ইয়ানসেনের শিকার হন বাঁহাতি ব্যাটার। তিনে নামা রাচিন রবীন্দ্রকে নিয়ে সঙ্গীকে হারানো ধাক্কা বেশ ভালোভাবে সামলানোর চেষ্টা করছিলেন আরেক ওপেনার উইল ইয়ং। কিন্তু তাঁর চেষ্টাকে বেশি দূর এগিয়ে নিতে দেননি প্রথম উইকেট নেওয়া ইয়ানসেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি পাওয়া রাচিনকে ৯ রানে ফেরান বাঁহাতি পেসার। দ্বিতীয় উইকেটে ৩৭ রানের জুটি গড়েন দুজনে।
দুই সতীর্থর দেখানো পথে পরে নিজেও দ্রুত ফেরেন ইয়ং। ৩৩ রানে জেরাল্ড কোয়েৎজির বলে কুইন্টন ডি ককে ক্যাচ দিতে বাধ্য হন তিনি। তাঁর বিদায়ের সময়ে কিউইদের রান দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৫৬। এরপর একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে নিউজিল্যান্ড। ব্যাটারদের এমন ব্যর্থতায় ১৬৭ রানে অলআউট হয় সর্বশেষ বিশ্বকাপের রানার্সআপরা। এতে করে ১৯০ রানের রেকর্ড জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। কিউদের বিপক্ষে আগের সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয় ছিল ১৫৯ রানের, ২০১৭ সালে ওয়েলিংটনে।
এর আগে পুনেতে যেন রানের নেশা পেয়ে বসেছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। আগে ব্যাট করে সর্বশেষ টানা ৭ ম্যাচেই তিন শোর বেশি স্কোর করেছে প্রোটিয়ারা। আজও তাঁর ব্যতিক্রম হয়নি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে নেমে ডি কক ও রাসি ফন ডার ডুসেনের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৩৫৭ রান করেছে।
বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে তেমন ভালো শুরু না পেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের জাত চেনাচ্ছিল। ২৪ রানে টেম্বা বাভুমা আউট হওয়ায় ওপেনিং জুটি ভাঙেন ৩৮ রানে। ট্রেন্ট বোল্ট শুরুতেই নিউজিল্যান্ডকে সাফল্য এনে দিলেও এর পরের গল্পটা শুধুই হতাশার।
তিনে নামা ডুসেনকে নিয়ে শুধু ম্যাচেই ঘুঁরে দাঁড়াননি ডি কক প্রতিপক্ষের বোলারদের নিয়ে ছিনিমিনিও যেন খেলেছেন দুজনে। দ্বিতীয় উইকেটে কাটায় কাটায় ২০০ রানের জুটি গড়েছেন। সেঞ্চুরিও তুলে নিয়েছেন দুজনে। ১১৪ রানে ডি কককে আউট করে দুজনের জুটি ভাঙেন কিউই পেসার টিম সাউদি। ১০ চারে বিপরীতে ৩ ছক্কায় ইনিংসটি সাজিয়েছেন প্রোটিয়া উইকেটরক্ষক।
এবারের বিশ্বকাপে এটি চতুর্থ সেঞ্চুরি ডি ককের। বিশ্বকাপের এক আসরে চার সেঞ্চুরি করা তৃতীয় ব্যাটার তিনি। তাঁর আগে এই কীর্তি গড়েছেন কুমার সাঙ্গাকারা ও রোহিত শর্মা। সর্বশেষ বিশ্বকাপে তো রোহিত রেকর্ড ৫ সেঞ্চুরি করেছেন। ভারতীয় ব্যাটারের রেকর্ড স্পর্শ করার সুযোগ থাকছে ডি ককেরও।
ডি ককের মতো রানের ফোয়ার ছোটাচ্ছেন ডুসেনও। সতীর্থের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে ২০০ রানের রেকর্ড জুটি গড়ার পথে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ডুসেন। তাঁর ১১৮ বলে ১৩৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটি থামান সাউদি। ড্রেসিংরুমে ফেরার আগে ইনিংসে ৯ চার ও ৫ ছক্কা হাঁকিয়েছেন।
ডি কক ও ডুসেনকে আউট করার পরও দক্ষিণ আফ্রিকার রানের চাকা থামেনি। চারে নেমে ডেভিড মিলারও খুনে ব্যাটিং করেছেন ৩০ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলেছেন। তাঁর ইনিংসে চারের বিপরীতে ছক্কা ছিল বেশি। ৪ ছক্কার সঙ্গে মেরেছেন ২ চার। এমনকি ইনিংসের শেষ বলে ব্যাটিংয়ে নেমে ছক্কা হাঁকিয়েছেন এইডেন মার্করামও। তাঁর সঙ্গে ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন হেনরিখ ক্লাসেন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে প্রত্যেক ব্যাটারই আজ কমপক্ষে একটি করে ছক্কা হাঁকিয়েছেন। ১৫ ছক্কার ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার মোট রান দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ৩৫৭। ৭৭ রানে ২ উইকেট নিয়ে কিউইদের সেরা বোলার সাউদি।