নানা বিতর্কিত ঘটনা শেষে বিসিবি নির্বাচনের পর এখন মনোযোগ শুধুই খেলার মাঠে থাকার কথা। আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশে আসছে আগামীকাল। আইরিশদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশ ১০ নভেম্বর উদ্যাপন করবে ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে পা রাখার রজতজয়ন্তী। এ সিরিজেই বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে শততম টেস্ট খেলবেন মুশফিকুর রহিম।
তবে এ সময়ে মাঠের খেলার চেয়ে অভ্যন্তরীণ নানা বিষয় যেন বেশি আলোচিত। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, পছন্দ-অপছন্দের বিষয়ে প্রকাশ্যে বলছেন ক্রিকেটাররা। অকপটে সাবেক সতীর্থকে আক্রমণ করছেন। গতকাল সারা দিন আলোচনায় জাতীয় দলের সহকারী কোচ সালাহ উদ্দীন। দুপুরে বিসিবিতে এসেছিলেন পদত্যাগপত্র জমা দিতে। আইসিসির সভায় যোগ দিতে বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী দুবাইয়ে থাকায় পদত্যাগপত্র সশরীরে না দিতে পারলেও ই-মেইল করেছেন। সালাহ উদ্দীনের পদত্যাগপত্র নিয়ে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেছেন, ‘আয়ারল্যান্ড সিরিজের পর সে (সালাহ উদ্দিন) পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। কোনো মন্তব্য করার আগে নিজেদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।’
সালাহ উদ্দীন নিজে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে না বললেও তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, যেভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে দলে ‘সিন্ডিকেট কিংবা কোরাম’ করার অভিযোগ উঠেছে, এ সময়ে বোর্ডের সমর্থন না পাওয়ায় তিনি নিদারুণ হতাশ। তাঁকে যাঁরা এত বছর ভালোভাবে চেনেন, তাঁদের নীরবতাও হতাশ করেছে সালাহ উদ্দীনকে। কাজে মানসিক স্বস্তি না থাকায় তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত বছর অক্টোবর থেকে দলের সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে জাতীয় দলে যোগ দেওয়া সালাহ উদ্দীন বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং বিভাগ দেখতেন। যেহেতু বেশির ভাগ খেলোয়াড়কে তাঁদের শৈশব থেকে চেনেন, তাই দল নির্বাচনে সালাহ উদ্দীনের মতামত বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
রাসেল ডমিঙ্গো কিংবা চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সময়ে দর্শকেরা প্রবল দাবি তুলতেন, সালাহ উদ্দীনকে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ দিতে। গত বছর অক্টোবরে বিসিবি তাঁকে সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর বাংলাদেশ ৫টি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে। টেস্ট পারফরম্যান্স অম্ল-মধুর থাকলেও ওয়ানডে একেবারেই ভালো যায়নি। দলের টানা ব্যাটিং ব্যর্থতায় সমালোচনার তির ছুটে গেছে সালাহ উদ্দীনের দিকে। দলীয় ব্যর্থতার সমালোচনা মেনে নিলেও সালাহ উদ্দীন বেশি ধাক্কা খেয়েছেন তাঁর উদ্দেশে ব্যক্তিগত আক্রমণ করায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে যে সমালোচনার ঢেউ, সেটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়নি ক্রিকেট বোর্ড। এ পরিস্থিতিতে ব্যাটিং কোচ হিসেবে দলে যুক্ত করা হয়েছে মোহাম্মদ আশরাফুলকে। যেহেতু নিজের কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে গেছে, সালাহ উদ্দীন জাতীয় দল থেকে সরে যাওয়াই শ্রেয় মনে করেছেন।
ব্যাটিং কোচ হিসেবে জাতীয় দলে আশরাফুলের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সাবেক পেসার রুবেল হোসেন তির্যক মন্তব্য করেছেন ফেসবুকে। তিনি লিখেছেন, ‘দায়মুক্ত হলো ক্রিকেট বোর্ড। বাংলাদেশ ও ব্যাটিং কোচ।’ অতীত নিয়ে রুবেলের খোঁচাখুঁচি নিয়ে আশরাফুল গুরুত্ব না দিলেও দলের খেলোয়াড়েরা তাঁকে কীভাবে গ্রহণ করে, সেটা দেখার বিষয়। যদিও আশরাফুল আত্মবিশ্বাসী, বাংলাদেশ দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটারের সঙ্গেই ঘরোয়া ক্রিকেটে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকায় চ্যালেঞ্জ উতরে যাওয়া কঠিন কিছু হবে না। তবে দেশের যে ক্রিকেট সংস্কৃতি, তাতে জাতীয় দলের ব্যর্থতায় আশরাফুলও যে সামনে সমালোচিত হবেন না, সে নিশ্চয়তা নেই।
আশরাফুলের অন্তর্ভুক্তিতে জাতীয় দল থেকে সালাহ উদ্দীনের প্রস্থান যেমন নিশ্চিত, বাংলাদেশ দলে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীন ফাহিমের আধিপত্যও কিছুটা কমার ইঙ্গিত মিলেছে আবদুর রাজ্জাককে জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টর হিসেবে যোগ করায়।
ছেলেদের ক্রিকেটের নানা ঘটনাপ্রবাহে আরেক মাত্রা যোগ করেছেন নারী দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম। একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি যেভাবে নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দলের কোচ, নির্বাচক ও অধিনায়কের ওপর, বিসিবি সেটির জবাব দিয়েছে বিবৃতি দিয়ে। জাহানারার অভিযোগকে বিসিবি পুরোপুরি ভিত্তিহীন, মনগড়া ও অসত্য বলে দাবি করছে। মেয়েদের বর্তমান অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি কাল জাহানারার উদ্দেশে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কিছু বলছি তার মানে এই না, বলতে পারি না...।’
দেশের ক্রিকেটে প্রতিদিন যা ঘটছে, তাতে মাঠের ক্রিকেট যেন আড়ালে চলে গেছে!