হোম > বিজ্ঞান

বিড়াল মনিবকে কেন মৃত প্রাণী ‘উপহার’ দেয়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

বিড়ালের ভেতরের শিকার প্রবৃত্তি আজও বজায় রয়েছে। ছবি: অ্যানিমেল পিডিয়া

অনেক সময় দেখা যায়, আপনার আদরের বিড়ালটি হঠাৎ করে মুখে করে মৃত পাখি বা ইঁদুর নিয়ে ঘরে ফিরে এসেছে। অনেকেই এই আচরণে অবাক হন। খাবারের অভাব নেই, তবুও কেন এই শিকার! আশ্চর্যজনকভাবে, সেই শিকারটি আবার মনিবের সামনে এনে ফেলে, যেন একটি ‘উপহার’!

বিড়ালের এই আচরণের কারণ জানিয়েছেন নিউ ইয়র্ক সিটির পিওর পজ ভেটেরিনারি কেয়ারের চিকিৎসা পরিচালক ডা. স্টেফানি লিফ। তিনি বলেন, বিড়াল স্বভাবতই শিকারি। ১০ হাজার বছর আগে গৃহপালিত হলেও, বিড়ালের ভেতরের শিকার প্রবৃত্তি আজও বজায় রয়েছে।

প্যারিস-স্যাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহর প্রকৃতিবিদ এমানুয়েল বোদ্রি বলেন, মৃত প্রাণী এনে দেওয়ার অন্যতম ব্যাখ্যা ‘মাতৃত্বজনিত আচরণ’। বন্য বিড়াল মায়েরা যেমন তাদের ছানাদের জন্য শিকার করে বাড়ি ফেরে—তেমনি আমাদের বিড়ালরাও হয়তো তাদের মনিবকে একরকম ‘অদক্ষ ছানা’ ভেবে শিকার করে আনে, যেন মনিব শিখতে পারেন কীভাবে শিকার করতে হয়!

তবে এটি অবজ্ঞা নয়। বরং, এটি এক ধরনের ভালোবাসা ও আস্থার প্রকাশ। ডা. লিফ বলেন, ‘ওরা আপনাকে পরিবারের একজন ভাবে’ আরেকটি ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, বিড়ালরা বাইরে নয়, নিরাপদ আশ্রয়ে তাদের শিকার খেতে পছন্দ করে। বাড়িকেই তারা সেই নিরাপদ স্থান হিসেবে দেখে, যেখানে আরামে খাওয়া যায় কিংবা শিকারের সম্ভার লুকিয়ে রাখা যায়।

যে ধরনের বিড়াল বেশি শিকার করে

২০২৩ সালে ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, আক্রমণাত্মক ও চঞ্চল প্রকৃতির বিড়ালরাই বেশি মৃত প্রাণী ঘরে ফেরে। অন্যদিকে, লাজুক ও মালিকের সঙ্গে বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ বিড়ালদের মধ্যে এ প্রবণতা কম।

শুধু স্বভাব নয়, বিড়ালের চারপাশের পরিবেশ এবং তারা কতটা সময় বাইরে কাটায়—এসব বিষয়ও প্রভাব ফেলে। শহুরে বিড়ালের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের বিড়ালদের শিকারের সুযোগ বেশি থাকে।

শিকার প্রতিরোধের উপায়

লিফ বলেন, বিড়ালকে ঘরে রাখাই সবচেয়ে কার্যকর শিকার প্রতিরোধের উপায় বলেন। এ ছাড়া, বাড়ির আশেপাশে পাখির খাবারের পাত্র না রাখার পরামর্শ দেন তিনি। তবে শিকার প্রবৃত্তি মেটানোর জন্য খেলনা দিতে হবে, যাতে তারা কিছু ধাওয়া করতে ও আক্রমণ করতে পারে।

বিড়ালদের এই শিকারের ফলে প্রকৃতির ওপরও প্রভাব পড়ছে। প্রতিবছর পৃথিবীজুড়ে লাখ-কোটি পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণী মারা যায় বিড়ালের কারণে। অনেক দ্বীপে স্থানীয় প্রাণী বিলুপ্তির কারণ হয়ে উঠেছে তারা।

তাই, বিড়ালের সুস্থতা ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্যই তাদের ঘরে রাখাই শ্রেয়। বাইরে শিকার করা প্রাণী অনেক সময় পরজীবী, রেবিস কিংবা বার্ড ফ্লুর মতো রোগ বহন করতে পারে। তাই বিড়ালকে টিকা দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স

আরও খবর পড়ুন:

মঙ্গল গ্রহে প্রথমবারের মতো বজ্রপাত শনাক্তের দাবি

কৈশোর থামে বত্রিশে, বার্ধক্যের শুরু ছেষট্টির পর—চিহ্নিত হলো মস্তিষ্কের ৫ পর্যায়

ভূমিকম্পের পর্যায়ক্রম: ফোরশক, মেইনশক ও আফটারশক কী

প্রাণীদের প্রথম চুম্বন ২ কোটি ১০ লাখ বছর পুরোনো

১২ হাজার বছর পুরোনো মূর্তিতে বিশ্বের প্রাচীনতম পৌরাণিক গল্পের চিত্রায়ণ

৪০ হাজার বছর আগে একটি ম্যামথের জীবনের শেষ মুহূর্তের কথা জানলেন বিজ্ঞানীরা

মহাকাশে প্রস্রাব থেকে তৈরি প্রোটিন পাউডার হবে নভোচারীদের খাবার

ডিএনএর গঠন আবিষ্কারক ওয়াটসনের মৃত্যু, বর্ণবিদ্বেষ যাঁকে খ্যাতির শীর্ষ থেকে ডুবিয়েছে

প্রথম কবে মানুষের বন্ধু হলো কুকুর—একটি খুলি ঘিরে নতুন বিতর্ক

মহাকাশে বিশেষ চুলায় রান্নাবান্না, বারবিকিউ পার্টি করলেন চীনা নভোচারীরা