হোম > রাজনীতি

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ভয়ংকর: নোয়াবের সভায় বক্তারা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও আগুন দেওয়া এবং সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তার প্রতিবাদে মানববন্ধন। প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের সামনে আজ সোমবার দুপুরে। ছবি: সংগৃহীত

দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই সংবাদপত্রের কার্যালয়ে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা শুধু গণমাধ্যম নয়; গণতন্ত্র, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত। যারা ‘মব’-এর নামে নৈরাজ্য করছে, তাদের ঠেকাতে সরকার কেন তৎপর হয় না, সেই প্রশ্নের জবাব পাওয়া দরকার। আজ সোমবার রাজধানীতে সংবাদপত্রের মালিক ও সম্পাদকদের দুটি সংগঠন নিউজপেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) ও সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তাদের কথার মূল সুর ছিল এটাই। সমাবেশে বলা হয়, এই হামলার ঘটনায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ছিল ‘ভয়ংকর’।

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা অফিসে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা করার প্রতিবাদে ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শিরোনামে এই যৌথ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। সভা থেকে স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষার লক্ষ্যে ‘ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের’ ডাক দিয়েছেন সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, লেখক, ব্যবসায়ী, নাগরিক ও পেশাজীবী সমাজের প্রতিনিধিরা।

সদ্য প্রয়াত জুলাই যোদ্ধা শহীদ শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকারী এবং গণমাধ্যমে হামলা ও অগ্নিসংযোগে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় প্রতিবাদ সভায়। সভা পরিচালনা করেন দৈনিক বণিক বার্তা সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।

রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত সভার সূচনা বক্তব্য দেন ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নূরুল কবীর। তিনি বলেন, বিশ্বের সব জায়গায় সংবাদমাধ্যমের নিজস্ব সম্পাদকীয় নীতি থাকে। সে নীতি পছন্দ না হলে গণমাধ্যম অফিসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়। তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে।

প্রতিবাদ সভায় সংহতি জানাতে এসে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে ডেইলি স্টার নয়, প্রথম আলো নয়, আজকে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত এসেছে। আমার স্বাধীনভাবে চিন্তা করার যে অধিকার, আমার কথা বলার যে অধিকার, তার ওপর আবার আঘাত এসেছে। জুলাই যুদ্ধের ওপর আঘাত এসেছে।’

ফখরুল আরও বলেন, ‘...আমরা যারা বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটা স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে দেখতে চাই, আজকে তাদের শুধু সচেতন হওয়া নয়, রুখে দাঁড়ানোর সময় এসে গেছে। আমি আহ্বান জানাব, শুধু একাত্মতা ও সংহতি নয়, সর্বশক্তি দিয়ে আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন, এই অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে।’

বৃহস্পতিবারের হামলার ঘটনার প্রসঙ্গে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর সাংবাদিকদের হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওই দিন ২৬-২৭ জন কর্মী ভবনের ভেতরে আটকে ছিলেন। ফায়ার সার্ভিসকে যেতে দেওয়া হয়নি। তাদের উদ্দেশ্য শুধু ভবনে আগুন দেওয়া ছিল না, হত্যা করার উদ্দেশ্যও ছিল।...মতপ্রকাশ তো অনেক দূর হয়ে গেছে, এখন বেঁচে থাকার ব্যাপার এসে গেছে। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি, আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন।’

রাষ্ট্রকাঠামোর অভ্যন্তরেই ‘মবতন্ত্র’ শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রকাঠামোর দায়িত্বে যাঁরা অধিষ্ঠিত, তাঁরা মব ভায়োলেন্সের পেছনের শক্তিকে তাঁদের ক্ষমতার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করেন।...আজকে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, আমাদের সবার, দেশবাসীর দায় এটা প্রতিহত করা, কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু মূল দায়িত্ব সরকারের।’

সহিংস ঘটনাগুলো ঠেকাতে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘নিষ্ক্রিয়তার’ সমালোচনা করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় বলেন, ‘তাদের মনে রাখা উচিত, তারা কোনো নির্বাচিত সরকার না। বৈধ সরকার হয়তো, কিন্তু তারা নির্বাচিত সরকার না। একটি অনির্বাচিত সরকারের শাসন করার যোগ্যতা, ক্ষমতা থাকে ততক্ষণ, যখন তার নৈতিক বৈধতা থাকে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বর্তমান সরকার তার নৈতিক বৈধতা অনেক ক্ষেত্রেই হ্রাস করে ফেলেছে।’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘এই হামলা আমরা মেনে নিতে পারি না। এটাই যাতে ফুল স্টপ হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সরকারের রহস্যজনক নীরবতার জবাব দিতে হবে।...বিচার যদি করতে না পারেন, আপনাদের ব্যর্থতাই আমাদের রায় হবে।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম রূপকার নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা আজকে যে পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছি, এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। কারণ, এই পুরো পরিস্থিতির সঙ্গে আমাদের জুলাই অভ্যুত্থান এবং তার পরবর্তী সময়ে যে বাংলাদেশ আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, সেটা মিলছে না।’

নাহিদ বলেন, ‘এ ঘটনার পরে আমরা বলেছি, এ ঘটনার সঙ্গে সরকারের ভেতরের একটা অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এটার পক্ষে সম্মতি তৈরি করা হয়েছিল অনেক দিন ধরেই। এটার সঙ্গে রাজনৈতিক ব্যাকআপও আছে। এই তিনটা ঘটনা একসঙ্গে না ঘটলে এত বড় সাহস...সেই রাতে কারও পক্ষে করা সম্ভব হতো না।’

বক্তব্য দিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। ছবি: সংগৃহীত

হামলার শিকার প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের ওপর হামলা মানেই রাষ্ট্রের অস্তিত্বের ওপর হামলা করা।

সমাপনী বক্তব্যে নোয়াব সভাপতি ও সমকাল প্রকাশক এ কে আজাদ বলেন, ‘সবাই একটা কথা বলেছেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে এটা প্রতিরোধ করতে হবে। যত দিন পর্যন্ত না ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, ছায়ানট, উদীচীসহ সব হামলার বিচার না হবে, তত দিন আমাদের আন্দোলন চলবে।’

এ কে আজাদ সাংবাদিকদের মতামতের ভিত্তিতে আগামী জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি বড় আকারের সাংবাদিক মহাসম্মেলন করারও ঘোষণা দেন।

প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, আজকের পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কামরুল হাসান, সমকাল সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী, ডেইলি সান সম্পাদক রেজাউল করিম লোটাস, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সম্পাদক ইনাম আহমেদ, ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক রিয়াজ আহমেদসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, মানবাধিকারকর্মী আইরিন খান, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক, আইনজীবী সারা হোসেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, ছায়ানট সভাপতি সারওয়ার আলী, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, এফআইসিসির সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান কুতুব উদ্দিন আহমেদ, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান মাসরুর আরেফিন প্রমুখ। সভায় সংহতি জানাতে উপস্থিত হয়ে তাঁরা ‘মব সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি দেন।

সভা শেষে হোটেল সোনারগাঁওয়ের সামনের সড়কে মানববন্ধন করেন সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াবের সদস্যরা। অন্যান্য ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনদের কেউ কেউ এতে অংশ নেন।

ঢাকা-১৭ আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন এনসিপির তাজনূভা, ১৮-তে নাসীর

মব সহিংসতা গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলছে: রিজভী

নির্বাচন বানচালের চেষ্টা জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করবে: জোনায়েদ সাকি

সরকারের দেওয়া গানম্যান প্রত্যাখ্যান করলেন নুরুল হক নুর

জিয়াউর রহমান সমঝোতার রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন: মির্জা ফখরুল

গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় সর্বাধিক সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল জিয়াউর রহমানের সময়: মাহদী আমিন

প্রথম আলো–ডেইলি স্টারে হামলার সঙ্গে গভীর ষড়যন্ত্র জড়িত: জামায়াত

দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলেন এহসানুল হুদা

২৭ ডিসেম্বর ভোটার হওয়ার আবেদন করবেন তারেক রহমান

নির্বাচনের আগে ওসমান হাদি হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে: ইনকিলাব মঞ্চ