হোম > মতামত > সম্পাদকীয়

বাউলদের ওপর হামলা কেন

সম্পাদকীয়

কয়েক দিন আগে একটি অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনের সময় ধর্ম অবমাননা ও কটূক্তির অভিযোগ করা মামলায় বাউলশিল্পী আবুল সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর মুক্তির দাবিতে মানিকগঞ্জ শহরে তাঁর অনুসারীরা মানববন্ধনের আয়োজন করেন। এখানে ২৩ নভেম্বর সকালের দিকে তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছে ‘তৌহিদি জনতা’। হামলায় চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

যুগ যুগ ধরে বাউলরা স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের জন্য গানকে বেছে নিয়েছেন। ধর্ম পালনের পদ্ধতি নিয়ে ধর্মের নানা ধারা আছে। একেক ধারা একেকভাবে স্রষ্টার কাছে পৌঁছাতে চায়। বাউলরা গানের মাধ্যমে স্রষ্টার দীক্ষা পেতে চান। কিন্তু ইসলামের ওয়াহাবি এবং সালাফিবাদী ধারার লোকজন গানকে বিদয়াত হিসেবে ফতোয়া দিয়ে আসছে। বাউলরা গানকে আধ্যাত্মিকবোধ জাগ্রত করার পাশাপাশি গানের মাধ্যমে ধর্মের কঠিন বিষয়গুলো মানুষের সামনে সহজভাবে উপস্থাপন করেন।

পালাকার-বয়াতি-বাউলরা কখনোই ধর্মবিরোধী মানুষ নন। তাঁরা কখনো নিজেদের ‘নাস্তিক’ বলে দাবি করেননি, কিংবা নাস্তিকতা প্রচার করেন না। বরং ধর্মকে মহিমান্বিত করার কাজগুলো গানের মাধ্যমে করে থাকেন। কথিত কাগুজে সনদের শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে এই মানুষগুলো জীবনের প্রায়োগিক শিক্ষায় শিক্ষিত, যা সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে ইতিবাচকতার পথ দেখায়। বাউলরা অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে বাউল সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার জন্য কথিত তৌহিদি জনতার ব্যানারে ধারাবাহিকভাবে দেশের নানা জায়গায় নানা ঘটনা ঘটছে। বাউলদের ওপর হামলার পাশাপাশি মাজার ভাঙার অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘটনায় জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে দুঃখজনক ঘটনাগুলো থামছে না। অভিযোগ আছে, ঘটনাগুলো তৌহিদি জনতার ব্যানারে হলেও, এর পেছনের কুশীলব ছিলেন স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্রসহ কোনো কোনো ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা।

আমাদের দেশে ‘মব’ বা ‘বিচারবহির্ভূত বিচার’ সংস্কৃতির যে বিস্তার লাভ করেছে, এ ঘটনাটি তারই নতুন সম্প্রসারণ। প্রতিটি ঘটনায় স্থানীয় পুলিশ হামলাগুলো বন্ধ করতে কোনো চেষ্টা করেনি, এ এক বিস্ময়কর ব্যাপার।

শুধু আবুল সরকার নন, এর আগে ২০২০ সালে বিগত সরকারের আমলে একইভাবে পালাগানের আসরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বাউলশিল্পী রিতা দেওয়ান। সে সময় শরিয়ত সরকার নামের আরেক বয়াতিকে ইসলাম ধর্মের কটূক্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এ সরকারের আমলে গত বছরের ২৫ নভেম্বর যশোরে বাউলশিল্পীদের দুই দিনব্যাপী সাধুসংঘের বাউলগানের আসর ভন্ডুল করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বাউলগানের আসর বন্ধ করে সেখান থেকে বাদ্যযন্ত্র জব্দ করেছিল পুলিশ। এরপর মানিকগঞ্জের সিংগাইরে প্রয়াত বাউলশিল্পী রশিদ সরকারের ‘সাধুর মেলা’ স্থানীয় লোকজনের বাধায় পণ্ড করা হয়।

মানিকগঞ্জের ঘটনায় কোনো পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হয়নি। তাই পুলিশ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বলে পুলিশ সুপার বলেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব যাঁদের, তাঁরাই যদি এ ধরনের কথা বলেন, তাহলে ঘটনাগুলো কীভাবে রোধ করা যাবে?

ইমরান খান

শাপলাপাতা মাছ

ছাদে মানুষ

উচ্চ রক্তচাপ

তফসিল, নির্বাচন ও জনগণ

ঢাকা শহর যখন মুমূর্ষু

মোবাইল কোম্পানির বাণিজ্য

চালের বস্তা

এটা কি গণতন্ত্রের ভাষা!

ভূমিকম্প ও ঢাকা