দেশের ৪৮ শতাংশের বেশি বিদ্যালয়ে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই। ৯৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানেরও একই অবস্থা। ৭১ দশমিক ৪ শতাংশ স্কুলে কোনো উন্নত শৌচাগারও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবন মিলনায়তনে গতকাল রোববার আয়োজিত ‘ওয়াশ ইন এডুকেশন অ্যান্ড হেলথকেয়ার ফ্যাসিলিটিজ সার্ভে ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে বিবিএসের এসডিজি সেলের ফোকাল পয়েন্ট মো. আলমগীর হোসেন প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন। দেশের আটটি বিভাগের ৬৪টি সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের তথ্যের ভিত্তিতে এই জরিপ করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি (ওআইসি) ফারুক আদরিয়ান ডুমন।
জরিপের তথ্য বলছে, দেশের মাত্র ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ বিদ্যালয়ে প্রতি ৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি উন্নত শৌচাগার রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় শৌচাগার থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেগুলোর মান ও ব্যবহারযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। দেশের ৯০ দশমিক ৬ শতাংশ বিদ্যালয়ে অন্তত একটি করে শৌচাগার রয়েছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।
নিরাপদভাবে মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে, এমন বিদ্যালয়ের হার ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়; মাত্র ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান নিরাপদ মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনার মানদণ্ড পূরণ করছে।
জরিপে বলা হয়, উন্নত পানির উৎসে প্রবেশগম্যতার দিক থেকে দেশের বিদ্যালয় ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে। ৯৫ দশমিক ৪ শতাংশ বিদ্যালয় এবং ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে উন্নত পানির উৎসে প্রবেশাধিকার আছে। মৌলিক পানি সেবার মানদণ্ড; অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণের ভেতরে উন্নত পানির উৎস থাকতে হবে—এই শর্ত পূরণ করতে পেরেছে এমন বিদ্যালয়ের হার ৮৬ দশমিক ১ শতাংশ। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই হার ৭০ দশমিক ৫ শতাংশ।
তবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য উপযোগী পানির সুবিধার চিত্র হতাশাজনক। দেশের ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধীবান্ধব উন্নত পানির পয়েন্ট রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে এই হার ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ। জরিপে উঠে এসেছে, ওয়াশ (পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি) অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আর্থিক বরাদ্দ অত্যন্ত সীমিত। মাত্র ১১ দশমিক ১ শতাংশ বিদ্যালয় এবং ৩৪ দশমিক ৯ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ওয়াশ খাতে নির্দিষ্ট বাজেট রয়েছে।
হাত ধোয়ার সুবিধা অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে থাকলেও পানি ও সাবানের অভাবে মৌলিক সেবার মানদণ্ড পূরণ করছে ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ বিদ্যালয় এবং মাত্র ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান। এর ফলে সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
নারীদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও বড় ঘাটতির চিত্র পাওয়া গেছে। মাত্র ২০ দশমিক ৭ শতাংশ বিদ্যালয়ে কিশোরীদের জন্য পৃথক, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার রয়েছে। আর মাসিককালীন মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়, এমন বিদ্যালয়ের হার মাত্র ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। এই ঘাটতি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষায় লৈঙ্গিকভিত্তিক বৈষম্য আরও তীব্র করে তুলছে।
জরিপে বলা হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য–উভয় খাতের ওয়াশ অবকাঠামোই ঝুঁকিপূর্ণ। গত এক বছরে ২৪ শতাংশ বিদ্যালয় এবং ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ জলবায়ু সহনশীল ওয়াশ ব্যবস্থার বিষয়ে সচেতনতা ও বাস্তবায়ন অত্যন্ত সীমিত।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার বলেন, বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হিসেবে সীমিত সম্পদের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশন নিশ্চিত করা বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’–এসডিজির এই মূলমন্ত্র বাস্তবায়নে পরিসংখ্যানের কোনো বিকল্প নেই।
বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিতে বাংলাদেশের অর্জন অনেক দেশের তুলনায় ভালো। এই জরিপ থেকে পাওয়া তথ্য রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।