হোম > ইসলাম

কোরআনে আস্থা রেখে আল্লাহর মেহমান হয়েছিলেন যাঁরা

ইসলাম ডেস্ক 

ছবি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি

পৃথিবীর সবকিছুই আল্লাহ রব্বুল আলামিন সৃষ্টি করেছেন মানুষের উপকারের জন্য। এ প্রকৃতি, নদী, সাগর, ফুল-ফল, মাছ, পশুপাখি সবকিছুই করে দিয়েছেন মানুষের অধীন। কিন্তু মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। তাঁর দাসত্ব ও গোলামি করার জন্য। সুতরাং বান্দার রিজিকের ব্যবস্থা করা আল্লাহরই দায়িত্ব।

আর রিজিক বলা হয় এমন বস্তুকে—যা কোনো প্রাণী আহার্য রূপে গ্রহণ করে; যা তার দৈহিক শক্তি সঞ্চার করে, প্রবৃদ্ধি সাধন করে এবং জীবন রক্ষা করে। এই প্রাণীকুলের রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপর ন্যস্ত। এ দায়িত্ব আল্লাহর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। আল্লাহকে কোনো কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ার মতো কোনো শক্তি মহাবিশ্বে নেই। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে প্রাণীকুলকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের রিজিকের জিম্মাদারি স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছেন।

আল্লাহ তাআলা যতটুকু সময়ের জন্য যাকে সৃষ্টি করেছেন তার আয়ুষ্কাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি তাকে অবশ্যই রিজিক দেবেন। এটা তার ওয়াদা। পবিত্র কোরআনে এসেছে ‘ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই। তিনি তাদের স্থায়ী-অস্থায়ী অবস্থিতি সম্বন্ধে অবহিত। সুস্পষ্ট কিতাবে সবকিছুই আছে।’ (সুরা হুদ: ৬)

ইমাম কুরতুবি (রহ.) আলোচ্য আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। একবার হজরত আবু মুসা আশআরি ও আবু মালিক আশআরি (রা.)-এর নেতৃত্বে একদল মুসলমান ইয়েমেন থেকে হিজরত করে মদিনায় পৌঁছলেন। তাদের সঙ্গে পাথেয়স্বরূপ আহার্য-পানীয় যা ছিল তা নিঃশেষ হয়ে গেলে।

তারা নিজেদের পক্ষ হতে একজন মুখপাত্র রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সমীপে প্রেরণ করলেন; যেন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের জন্য খাবারের সুব্যবস্থা করেন। ওই প্রতিনিধি যখন নবীজির ঘরের সামনে হাজির হলো তখন ঘর থেকে রাসুল (সা.)-এর কোরআন তিলাওয়াতের সুমধুর আওয়াজ ভেসে এল—‘পৃথিবীতে বিচরণ করে এমন কোনো প্রাণী নেই যার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহ গ্রহণ করেননি।’

সাহাবি এ আয়াত শুনে মনে করলেন—আল্লাহ তাআলা স্বয়ং যখন যাবতীয় প্রাণীকুলের রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন এবং আমরা আশআরি গোত্রের লোকেরা আল্লাহ তাআলার নিকট অন্যান্য জন্তু জানোয়ারের চেয়ে নিকৃষ্ট নই; অতএব নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের জন্য রিজিকের ব্যবস্থা করবেন। এ ধারণা করে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে নিজেদের অসুবিধার কথা না বলেই সেখান থেকে চলে এলেন। এসে সঙ্গীদের বললেন, ‘শুভ সংবাদ, তোমাদের জন্য আল্লাহর সাহায্য আসছে।’ তারা এ কথার অর্থ বুঝলেন, তাদের মুখপাত্র নিজেদের দুরবস্থার কথা রাসুলুল্লাহ (সা.) -কে অবহিত করার পর তিনি তাদের আহার্য ও পানির ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন। তাই তারা নিশ্চিন্ত মনে বসে থাকলেন।

তারা বসেই ছিলেন, এমন সময় দুই ব্যক্তি গোশত-রুটিপূর্ণ একটি বড় পাত্র নিয়ে উপস্থিত হলো। আশআরি গোত্রের লোকেরা সানন্দে তা গ্রহণ করে আহার করার পর প্রচুর গোশত ও রুটি রয়ে গেল। তারা অবশিষ্ট খাবার রাসুলুল্লাহ (সা.) -এর সমীপে প্রেরণ করা প্রয়োজন মনে করলেন; যেন তিনি সেই খাবার অন্যদের মাঝে বিলিয়ে দিতে পারেন। তাই তারা দুই ব্যক্তির মাধ্যমে অবশিষ্ট খাবার রাসুল (সা.)-এর খেদমতে পাঠিয়ে দিলেন।

তারা খাবারের পাত্র নিয়ে রাসুল (সা.) -এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনার প্রেরিত গোশত অত্যন্ত সুস্বাদু এবং প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত হয়েছে।’ এ কথা শুনে প্রিয় নবী (সা.) বললেন, ‘আমি তো কোনো খাদ্য প্রেরণ করিনি!’ তখন তারা পুরো ঘটনা বর্ণনা করে বললেন, ‘আমাদের অসুবিধার কথা আপনার কাছে ব্যক্ত করার জন্য অমুক ব্যক্তিকে প্রেরণ করেছিলাম, তিনি ফিরে গিয়ে বলেছিলেন—আমাদের আতিথেয়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফলে আমরা মনে করেছি আপনি আমাদের জন্য খানা-দানা প্রেরণ করেছেন।’

এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আমি নই বরং ওই পবিত্র সত্তা প্রেরণ করেছেন; যিনি সকল প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন।’

এভাবে আল্লাহ তাআলা আকাশ থেকে রান্না করা খাবার সরবরাহ করে প্রমাণ করেছেন—তিনিই একমাত্র রিজিকের মালিক। যে কোনো ধরনের উপকরণ ছাড়াই তিনি রিজিক দিতে পারেন।

নবী মুসা (আ.)-এর উম্মত বনি ইসরায়েলকে আল্লাহ তাআলা চল্লিশ বছর যাবৎ আসমান থেকে খাবার সরবরাহ করেছেন। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তার কুদরতের বহিঃপ্রকাশ করেছেন। তবে এটা মহান আল্লাহর স্বাভাবিক নিয়ম নয়। পার্থিব জীবনকে তিনি কিছু নিয়ম-নীতির অধীন করে দিয়েছেন। দুনিয়াজুড়ে বিপুল কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন এবং প্রত্যেককে নিজ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে রিজিক অন্বেষণের বিধান জারি করেছেন।

এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করবে; যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা জুমা: ১০)

লেখক: খালিদ হাসান বিন শহীদ, গণমাধ্যমকর্মী ও ইসলামবিষয়ক গবেষক

আজকের নামাজের সময়সূচি: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

খালেদা জিয়ার জানাজা পড়াবেন বায়তুল মোকাররমের খতিব

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক পালনে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়ার অনন্য কিছু উদ্যোগ

কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে যে দোয়া পড়বেন

শীতকালে কখন তায়াম্মুম করা যাবে, কখন যাবে না

আজকের নামাজের সময়সূচি: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫

মক্কা-মদিনায় এক মাসে প্রায় ৭ কোটি মুসল্লির সমাগম

যাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের সতর্কবার্তা

আজকের নামাজের সময়সূচি: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫