বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ও উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক তাঁর প্রতিষ্ঠান টেসলা ছেড়ে যেতে পারেন, যদি না তাঁকে তাঁর কাঙ্ক্ষিত প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বেতন–ভাতা না দেওয়া হয়। এমনটাই জানিয়েছেন টেসলার পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান রবিন ডেনহম। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস এই খবর জানিয়েছে।
ডেনহম টেসলার শেয়ারহোল্ডারদের আহ্বান জানিয়েছেন, কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্কের প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো অনুমোদন করতে, নইলে তিনি কোম্পানি ছেড়ে যেতে পারেন। গত সপ্তাহে কোম্পানির ত্রৈমাসিক আয় সংক্রান্ত বৈঠকে মাস্ক ইঙ্গিত দেন, কোম্পানির ওপর তার পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা না হলে তিনি ‘বৃহৎ এক রোবট বাহিনী’ গড়ে তোলার কাজে সময় দিতে চান না।
গতকাল সোমবার এক্সে প্রকাশিত এক চিঠিতে টেসলার চেয়ারম্যান রবিন ডেনহম আসন্ন শেয়ারহোল্ডার ভোটকে বিনিয়োগকারীদের জন্য এক ‘মৌলিক প্রশ্ন’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি লিখেন, ‘আপনারা কি ইলনকে টেসলার সিইও হিসেবে ধরে রাখতে চান এবং তাঁকে অনুপ্রাণিত করতে চান টেসলাকে বিশ্বের শীর্ষ স্বচালিত সমাধান প্রদানকারী ও সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিতে পরিণত করার জন্য?’
সাধারণত প্রচারবিমুখ ডেনহম বলেন, ইলনের মাস্কের জন্য প্রেরণাদায়ক পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হলে, তিনি কোম্পানি ছেড়ে যেতে পারেন। তাঁর ভাষায়, ‘তাহলে টেসলা হারাতে পারে ইলনের সময়, মেধা ও দূরদর্শিতা—যা কোম্পানির অসাধারণ শেয়ারমূল্য বৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি ছিল।’
তবে শর্ত হলো, আগামী সাড়ে ৭ বছর টেলসা যে একাধিক উচ্চাভিলাষী প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে পূরণ করতে পারেন মাস্ক তবেই তাঁকে এই সুবিধা দেওয়া হবে। গত বুধবার বিশ্লেষকদের সঙ্গে আলোচনায় মাস্ক আবারও উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, টেসলার মানবাকৃতি রোবট প্রকল্পে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিপুল পরিশ্রম করার পরও ‘কোনো একসময় তাঁকে কোম্পানি থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে।’
তিনি বলেন, এটাই আমার সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা। এই তথাকথিত ‘বেতন কাঠামো’ আসলে সেটাই সমাধান করার চেষ্টা। তিনি আরও বলেন, ‘যদি কোম্পানিতে আমার যথেষ্ট প্রভাব না থাকে, আমি সেই রোবট বাহিনী গড়তে স্বস্তি বোধ করব না।’
বর্তমানে মাস্কের হাতে টেসলার প্রায় ১৫ শতাংশ শেয়ার আছে। এরই মধ্যে শেয়ারহোল্ডার পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান আইএসএস ও গ্লাস লুইস শেয়ারহোল্ডারদের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পরামর্শ দিয়েছে, কারণ তাদের মতে প্যাকেজটির অঙ্ক অতি বিশাল এবং তা বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের অংশীদারত্বকে ক্ষীণ করবে।
কয়েকটি মার্কিন অঙ্গরাজ্যের কোষাধ্যক্ষসহ আরও কয়েকজন বিনিয়োগকারী, যেমন এসওসি ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপ প্রস্তাবটির বিরোধিতা করেছে। তারা বলেছে, বোর্ডের ওপর তাদের আস্থা নেই যে, তারা ইলনের কর্মকাণ্ড যথাযথভাবে তদারকি করতে পারবে কিংবা দীর্ঘমেয়াদি টেকসই মুনাফা নিশ্চিত করতে পারবে।
উল্লেখ্য, শেয়ারহোল্ডারদের ভোট গ্রহণ শেষ হবে আগামী ৫ নভেম্বর, আর কোম্পানি ৬ নভেম্বর বার্ষিক সভায় প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করবে বলে জানানো হয়েছে।