ভারতের মধ্যপ্রদেশের ভোপালে এক অদ্ভুত বিবাহবিচ্ছেদের মামলা নিয়ে সরগরম আদালত। মাত্র ৯ মাস আগে বিয়ের পিঁড়িতে বসা এক দম্পতি এখন আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ, তাঁদের পোষা কুকুর ও বিড়াল একে অপরের সঙ্গে মোটেও মানিয়ে নিতে পারছে না।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির বরাতে আজ শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বিয়ে হয় ওই যুগলের। বিয়ের শুরুর দিকে মূলত প্রাণীর প্রতি ভালোবাসাই তাঁদের একসঙ্গে এনেছিল। কিন্তু সেই ভালোবাসাই আজ বিবাদের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদালতের বাধ্যতামূলক কাউন্সেলিং সম্পন্ন করার পর তাঁরা আইনি বিচ্ছেদের আবেদন করেছেন।
এই দম্পতির মধ্যে স্বামী ছিলেন ভোপালের বাসিন্দা। বাড়ি থেকেই তিনি আইটি সেক্টরে কাজ করেন। আর স্ত্রী উত্তর প্রদেশ থেকে এসেছেন এবং ভোপালে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। স্ত্রীর অভিযোগ, স্বামীর পোষা কুকুরটি বারবার তাঁর বিড়ালকে বিরক্ত করে, এমনকি কয়েকবার আক্রমণও করেছে। এতে বিড়ালের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তাঁর ভাষায়—‘পরিস্থিতি এখন অসহ্য’।
স্ত্রীর দাবি অনুযায়ী, কুকুরটি সারাক্ষণ বিড়ালের দিকে ঘেউ ঘেউ করে, ফলে বিড়ালটি আতঙ্কিত থাকে এবং খাওয়াদাওয়াও কমে গেছে।
এদিকে স্বামী জানিয়েছেন, বিয়ের আগে তাঁদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছিল যে, স্ত্রী তাঁর সব পোষা প্রাণী সঙ্গে আনবেন না। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তিনি পৈতৃক বাড়ি থেকে বিড়াল নিয়ে এসেছেন। স্বামীর অভিযোগ, ওই বিড়াল এখন শুধু কুকুরকেই নয়, বাড়ির অ্যাকুয়ারিয়ামের আশপাশেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তিনি দাবি করেছেন, বিড়ালটি অনেক সময় তাঁর কুকুরের দিকেও তেড়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে দুই পরিবার ও আদালতের পক্ষ থেকে একাধিকবার মধ্যস্থতার চেষ্টা করা হলেও সমাধান আসেনি। দুজনের কেউই তাঁদের প্রিয় প্রাণীকে ছাড়তে রাজি নন।
আদালতের কাউন্সেলর শৈল অবস্থি বলেন, ‘আমরা বারবার পরামর্শ দিয়েছি, কিন্তু স্ত্রী তাঁর বিড়াল ছাড়তে রাজি নন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি তাঁদের সংসার টিকিয়ে রাখার।’
শৈল অবস্থি মত দিয়েছেন—মামলাটি সমাজে একটি গভীর প্রবণতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। মানুষের মধ্যে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পোষা প্রাণীর ওপর আবেগগত নির্ভরশীলতা বাড়ছে। অনেক সময় মানুষ পোষা প্রাণীকেই মানুষের সম্পর্কের বিকল্প হিসেবে দেখতে শুরু করেন। কিন্তু উভয় পক্ষ যদি কোনো সমঝোতায় না পৌঁছায়, তখন এমন দাম্পত্যজীবনও ভেঙে যায়।