ইউক্রেন সংকট নিয়ে বহু দিন ধরেই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। কূটনৈতিকভাবে সংকট সমাধানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ইউক্রেনে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান শুরু করেছে রাশিয়া। উভয় পক্ষেই হতাহতের খবর জানানো হচ্ছে। রাজধানী কিয়েভ ছাড়ছে আতঙ্কিত মানুষ। পশ্চিমা দেশগুলো অবশ্য আগেই তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিয়েছে।
স্থানীয় সময় বুধবার সামরিক অভিযান শুরুর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীকে অস্ত্রসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া তাঁর দেশের ‘সামরিক অবকাঠামো’ এবং সীমান্তরক্ষীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। জাতির উদ্দেশে একটি সংক্ষিপ্ত টেলিভিশন ভাষণে তিনি সামরিক আইন জারি করার আহ্বান জানান এবং বিজয়ের অঙ্গীকার করেন। আজ বৃহস্পতিবার তিনি নাগরিকদের উদ্দেশে বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে ইচ্ছুক প্রত্যেক নাগরিকের হাতে অস্ত্র তুলে দেবে কিয়েভ। অপরদিকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, ইউক্রেনের বিজয় সন্নিকটে। রুশ বাহিনী সুবিধা করে উঠতে পারছে না।
ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট নিয়ে উত্তেজনা কয়েক মাস ধরেই চলছে। এখানে সাম্প্রতিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার একটি টাইমলাইন তুলে ধরা হলো:
নভেম্বর, ২০২১
স্যাটেলাইট চিত্রগুলোতে দেখা যায়, ইউক্রেনের সীমান্তে রাশিয়ার সেনাদের একটি নতুন অবকাঠামো। কিয়েভ জানায়, মস্কো ট্যাংক এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামসহ ১ লাখ সেনা মোতায়েন করেছে।
৭ ডিসেম্বর, ২০২১
ইউক্রেনে আগ্রাসন চালালে রাশিয়াকে পশ্চিমা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার হুঁশিয়ারি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
রাশিয়া পশ্চিমের কাছে ব্যাপকভিত্তিক নিরাপত্তার দাবি পেশ করে। এর মধ্যে ন্যাটো পূর্ব ইউরোপ এবং ইউক্রেনে সব সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করবে এবং সামরিক জোটটি কখনই ইউক্রেন বা অন্য সাবেক সোভিয়েত দেশগুলোকে সদস্য হিসেবে গ্রহণ করবে না-এমন দাবি রাখা হয়।
৩ জানুয়ারি, ২০২২
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে আশ্বস্ত করেন, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র ‘চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া জানাবে’। সংকট মোকাবিলায় আসন্ন কূটনৈতিক বৈঠকের একটি সিরিজের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করতে দুজন ফোনে কথা বলেন।
১০ জানুয়ারি, ২০২২
মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তারা কূটনৈতিক আলোচনার জন্য জেনেভায় মিলিত হন। কিন্তু বিরোধ অমীমাংসিত রেখেই বৈঠক শেষ হয়। কারণ মস্কো নিরাপত্তার দাবির পুনরাবৃত্তি করে। জবাবে ওয়াশিংটন বলে, এটি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
২৪ জানুয়ারি, ২০২২
ন্যাটো জোট তার বাহিনীকে স্ট্যান্ডবাই রেখে আরও জাহাজ ও যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে পূর্ব ইউরোপে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করে। কিছু পশ্চিমা দেশ কিয়েভ থেকে দূতাবাসের ‘অপরিহার্য’ কর্মীদের রেখে বাকিদের সরিয়ে নেওয়া শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র ৮ হাজার ৫০০ সেনা প্রস্তুত রাখার ঘোষণা দেয়।
ওয়াশিংটন রাশিয়ার নিরাপত্তা দাবির একটি লিখিত প্রতিক্রিয়া জানায় করে। মস্কোর উদ্বেগের একটি ‘নীতিগত এবং বাস্তবসম্মত মূল্যায়ন’ করার বিষয়ে ন্যাটোর ‘খোলা দরজা’ নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি করা হয়।
২৭ জানুয়ারি, ২০২২
বাইডেন ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের বিষয়ে সতর্ক করেন। চীন তার রাজনৈতিক সমর্থনের পাল্লা রাশিয়ার দিকেই হেলে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রকে বলে, মস্কোর ‘বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগ’ ‘গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত’।
পুতিন বলেন, রাশিয়ার নিরাপত্তার বিষয়ে প্রধান দাবিগুলোর কোনো সুরাহা করা হয়নি। তবে মস্কো আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। জেলেনস্কি পশ্চিমাদের সতর্ক করেন যাতে ‘আতঙ্ক’ সৃষ্টি না হয় যা তাঁর দেশের অর্থনীতিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।
৩১ জানুয়ারি, ২০২২
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ রুদ্ধদ্বার অধিবেশনে ইউক্রেন সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড কাউন্সিলকে বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বিশ্ব নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলবে।
জাতিসংঘে রাশিয়ার দূত ভাসিলি নেবেনজিয়া অভিযোগ করেন, ওয়াশিংটন এবং তার মিত্ররা বারবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে যে, মস্কো আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। মস্কো এটি অস্বীকার করা সত্ত্বেও পশ্চিমারা যুদ্ধের হুমকির ঢাক বাজাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
পুতিন আক্রমণের পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাঁর দেশের নিরাপত্তা দাবি উপেক্ষা করার অভিযোগ করেন পুতিন। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটি এরই মধ্যে স্পষ্ট যে, রাশিয়ার মৌলিক উদ্বেগগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে।’
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন চালানোর জন্য রাশিয়ার ৭০ শতাংশ সামরিক শক্তি প্রস্তুত করা হয়। মার্কিন গণমাধ্যমগুলো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এমন খবর প্রকাশ করে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে দেখা করেন। ম্যারাথন বৈঠক করেন তাঁরা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়া আর ইউক্রেন সংকটকে না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তবে মাখোঁ এবং পুতিন সংকট কমানোর বিষয়ে সম্মত হয়ে একটি চুক্তিতে উপনীত হয়েছেন এ ধরনের খবর পরবর্তীতে অস্বীকার করে ক্রেমলিন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মস্কো এবং প্যারিস কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে না।
১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বৈঠক করেন। বৈঠকের ফল শূন্য। একটি উত্তাপহীন সুনসান সংবাদ সম্মেলনে লাভরভ বৈঠকটিকে ‘একজন বোবা এবং বধির ব্যক্তির মধ্যে কথোপকথন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে মস্কো কঠোর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়বে বলে সতর্ক করেন ট্রাস। এ প্রসঙ্গে লাভরভ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, রাশিয়ার সৈন্য ও অস্ত্র কারও জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে না।
১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বলেন, মার্কিন গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছে, ২০ ফেব্রুয়ারি বেইজিং অলিম্পিক শেষ হওয়ার আগের কয়েক দিনের মধ্যে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে।
পেন্টাগন মিত্রদের আশ্বস্ত করতে পোল্যান্ডে অতিরিক্ত ৩ হাজার সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এর আগেই বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়ার পরামর্শ দেয়।
বাইডেন এবং পুতিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ ‘বিস্তৃত মানবিক দুর্ভোগের’ কারণ হবে এবং পশ্চিমারা এই সংকটের অবসান ঘটাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু অন্য পরিস্থিতির জন্যও তাঁরা সমানভাবে প্রস্তুত রয়েছেন।
পুতিন এই আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো রাশিয়ার দাবির প্রতি সন্তোষজনকভাবে সাড়া দেয়নি। ইউক্রেনকে সামরিক জোটে যোগ দিতে দেওয়া হবে না এবং ন্যাটো পূর্ব ইউরোপ থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে—রাশিয়ার এ দাবির প্রতি পশ্চিমারা উদাসীন।
পুতিনের শীর্ষ পররাষ্ট্র নীতি সহকারী ইউরি উশাকভ বলেন, কয়েক মাস ধরে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ‘পরিস্থিতিকে কেবল অযৌক্তিক সাড়া প্রদানের’ পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাইডেন রাশিয়ার ওপর আরোপিত সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করেছেন। পুতিনের সঙ্গে মোটামুটি দীর্ঘ কথোপকথনের সময় এ বিষয়টি ফোকাসে ছিল না।
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি সতর্ক করেন যে, পুতিন প্রতিদিনই ইউক্রেন সীমান্তে সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছেন। এমএসএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের কিরবি বলেন, ‘সামরিক শক্তি বাড়িয়েই চলেছে। দিনে দিনে আরও প্রস্তুত হচ্ছে। তারা সেখানে মহড়া দিচ্ছে। তাই আমরা বিশ্বাস করি, পুতিন সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে চাইলে আমাদের কাছে প্রচুর সক্ষমতা এবং বিকল্প পথ রয়েছে।’
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
পুতিন বলেন, তিনি ইউক্রেন উত্তেজনা কমাতে নিরাপত্তা ইস্যুতে পশ্চিমাদের সঙ্গে ‘আরও কাজ করতে প্রস্তুত’। কিন্তু রাশিয়ার প্রধান দাবিগুলো মেনে নেওয়া পশ্চিমের জন্যই প্রয়োজন বলেও জোর দিয়ে উল্লেখ করেন তিনি।
মস্কোতে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ একটি ব্রিফিংয়ে বলেন, তিনি রাশিয়ার মূল্যায়নের সঙ্গে একমত যে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এড়ানোর একটি সুযোগ এখনো রয়েছে। ‘কূটনৈতিক বিকল্পগুলো এখনো শেষ হয়ে যায়নি’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ন্যাটো বলে, রাশিয়ার পিছু হটার কোনো লক্ষণ নেই। জোটের দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রন্টকে মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে কমান্ডারদের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে রাশিয়া।
ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘মন্ত্রীরা মধ্য ও পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে নতুন ন্যাটো সম্মুখ সমর দল গঠনের বিবেচনাসহ ন্যাটোর প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষাকে আরও শক্তিশালী করার বিকল্পগুলো আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো ইউক্রেন সীমান্তের কাছ থেকে রুশ সেনা সরিয়ে নেওয়ার উল্লেখযোগ্য কোনো প্রমাণ পায়নি। যদিও মস্কো দাবি করছে, সেনা প্রত্যাহার চলছে।
১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
বাইডেন এবং ব্লিঙ্কেন সতর্ক করেন, সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারে স্পষ্ট ব্যর্থতার মধ্যে ইউক্রেন আক্রমণের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে রাশিয়া। এর মধ্যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়া একটি প্রক্সি সামরিক অভিযান চালাতে পারে।
ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ইউক্রেনের সংঘাতময় পূর্বাঞ্চলের গোলাবর্ষণের প্রতিবেদনের পরে এটিকেই রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে পারে।
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
বাইডেন বলেন, তিনি নিশ্চিত পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি মস্কোকে সতর্ক করেন যে, এটি হবে বিপর্যয়কর। এরপরও কূটনীতির দরজা খোলা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। যুদ্ধ শুরু না হওয়া পর্যন্ত ‘কূটনীতি সর্বদাই একটি সম্ভাবনা’, সাংবাদিকদের এ কথা বলেন বাইডেন।
১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
ইউক্রেনের দুটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চলের রুশ-সমর্থিত বিদ্রোহী নেতারা সাধারণ সংহতি ঘোষণা করেন। উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা জোরালো হয়।
রাশিয়াপন্থী বিদ্রোহী এবং ইউক্রেন সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাতের খবর আসার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। কিয়েভ বলে যে, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গোলাগুলিতে দুইজন ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছে।
২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
পুতিন পূর্ব ইউক্রেনের দুটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চল, দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এরপর সেখানে ‘শান্তি বজায় রাখার’ জন্য রুশ সেনাদের নির্দেশ দেন। পুতিনের ঘোষণা মস্কো-সমর্থিত বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার পথ প্রশস্ত করে।
বাইডেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ‘প্রথম ধাপ’ ঘোষণা করেন। বাইডেন বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার সার্বভৌম ঋণের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করছি। তার মানে আমরা পশ্চিমা অর্থায়ন থেকে রাশিয়ার সরকারকে বিচ্ছিন্ন করছি। এই পদক্ষেপগুলো রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং রুশ ‘অভিজাতদের’ লক্ষ্য করেই ঘোষণা করেন বাইডেন।
এর আগে পূর্ব ইউক্রেনে দুটি মস্কো-সমর্থিত স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্রে রাশিয়ার সেনা মোতায়েনকে ‘আক্রমণের সূচনা’ বলে বর্ণনা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
ইউক্রেনের পার্লামেন্ট রাশিয়ার আগ্রাসনের হুমকির প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় জরুরি অবস্থা অনুমোদনের জন্য ভোটাভুটি হয়। যেদিন মস্কো কিয়েভ দূতাবাস খালি করতে শুরু করে এবং ওয়াশিংটন রাশিয়ার সর্বাত্মক আক্রমণের সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্কতা জারি করে সেই দিনই এ উদ্যোগ ব্যাপকভাবে অনুমোদিত হয়।
এর মধ্যে বাইডেন রাশিয়া থেকে জার্মানি পর্যন্ত ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণকারী কোম্পানির বিরুদ্ধে এবং কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেন।
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
রুশ বাহিনী ইউক্রেনের ওপর আক্রমণ চালায়। এর আগে প্রতিবেশী ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে অস্ত্রসমর্পণের আহ্বান জানান পুতিন। সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করার পরই রাশিয়া সামরিক অভিযান শুরু করে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে পুতিন বলেন, ‘আমরা আপনাদের অবিলম্বে অস্ত্রসমর্পণ করে বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। আমি বলব: ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর সমস্ত সামরিক কর্তারা যারা এই প্রয়োজনীয়তাকে মেনে চলবেন, তাঁরা অবাধে নিশ্চিন্তে এলাকা ছেড়ে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবেন।’
পুতিন অন্যান্য দেশকেও হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান জানান। পুতিন বলেন, ‘যে কেউ আমাদের থামানোর চেষ্টা করবে এবং আমাদের দেশের জন্য, আমাদের জনগণের জন্য আরও হুমকি সৃষ্টি করবে, তাদের জানা উচিত যে, রাশিয়া অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখাবে এবং তা আপনাকে এমন পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে যা আপনি ইতিহাসে কখনো সম্মুখীন হননি। আমরা যেকোনো ফলাফলের জন্য প্রস্তুত।’