হোম > স্বাস্থ্য

চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার

ডা. কাকলী হালদার

চিকুনগুনিয়া ভাইরাস একটি মশাবাহিত রোগ, যা প্রচণ্ড জ্বর ও জয়েন্টে ব্যথা সৃষ্টি করে। এই রোগ প্রথম ১৯৫২ সালে তানজানিয়ায় শনাক্ত করা হয়েছিল এবং এর নাম কিমাকোন্ডে ভাষার ‘চিকুনগুন্যা’ শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ বিকৃত হয়ে যাওয়া। এই রোগ এখন বিশ্বের অনেক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে; বিশেষ করে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে।

বাংলাদেশে চিকুনগুনিয়া প্রথম শনাক্ত হয় ২০০৮ সালে। তখন এটি সীমিত আকারে ছিল। সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাব ঘটে ২০১৭ সালে। তখন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়।

চিকিৎসা

চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। ওষুধ সাধারণত লক্ষণগুলো উপশমের জন্য ব্যবহার করা হয়।

জ্বর কমাতে ওষুধ, ব্যথা উপশমের জন্য ওষুধ, পর্যাপ্ত তরল পান করা এবং পরিমিত বিশ্রাম নিলে ৫-১০ দিনে আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত সুস্থ হয়ে যায়। তবে তীব্র রোগের লক্ষণ এবং গুরুতর কোনো সমস্যা হলে, অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।

চিকুনগুনিয়া ভাইরাস প্রতিরোধ

চিকুনগুনিয়া ভাইরাস প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো মশার কামড় এড়িয়ে চলা। মশারি ব্যবহার করে ঘুমানো, দীর্ঘ হাতার জামা এবং লম্বা প্যান্ট পরা, বাড়িতে ঘুমানোর সময় এবং প্রয়োজনে কাজের জায়গায় মশারি ব্যবহার করা, মশাপ্রতিরোধী স্প্রে ও লোশন ব্যবহার করে মশার কামড় এড়ানো যায়।

  • বাড়ির চারপাশে পানি জমতে না দেওয়া এবং যেখানে-সেখানে যাতে মশা ডিম পাড়তে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • চিকুনগুনিয়ার কোনো টিকা নেই। তবে গবেষকেরা টিকা আবিষ্কারের জন্য কাজ করছেন।
  • বাংলাদেশে ২০২৫-এর জুন মাসে চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে সংক্রমণের প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। তবে সরকারি পর্যায়ে কোভিড এবং ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অনেক প্রস্তুতি নেওয়া হলেও চিকুনগুনিয়ার জন্য তেমন কোনো প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না।
  • বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষার শেষ দিকে মশা বাড়ার মধ্য দিয়ে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে ডেঙ্গু ও করোনার সঙ্গে এটি একটি ‘ত্রিমুখী চাপ’ সৃষ্টি করতে পারে। তাই সচেতন হয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়।

চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের লক্ষণ

চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে সাধারণত দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয়। এ রোগে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর, জয়েন্টে প্রচণ্ড ব্যথা (বিশেষ করে হাত, কবজি, গোড়ালি, কাঁধ ও হাঁটু), মাথাব্যথা, পেশিব্যথা, ক্লান্তি, ত্বকে ফুসকুড়ির মতো লক্ষণ দেখা যায়। অস্থিসন্ধিতে ব্যথা থাকে, যা কয়েক সপ্তাহ, মাস বা বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

কখনো কখনো এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও কোনো রোগ-উপসর্গ প্রকাশ পায় না। রোগটি সাধারণত আকস্মিক উচ্চমাত্রার জ্বর, জয়েন্টে ব্যথা ও চামড়ায় ফুসকুড়ি দিয়ে শুরু হয়। ফুসকুড়ি রোগের শুরুতে দেখা দিতে পারে। তবে অনেক সময় রোগ শুরু হওয়ার দুই থেকে তিন দিন পর জ্বর কমতে শুরু করলে ফুসকুড়ি দেখা দেয়।

চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের সঙ্গে ডেঙ্গু জ্বর ও জিকা ভাইরাসের লক্ষণের প্রায় মিল থাকায় বিভ্রান্তি হয়। তবে চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণে সাধারণত জয়েন্টে তীব্র ব্যথা হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি এবার বাচ্চাদের মধ্যেও চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ বাড়ছে।

চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সাধারণত গুরুতর রোগ নয়; তবে বয়স্ক ব্যক্তিরা, গর্ভবতী নারী এবং এরই মধ্যে অন্য স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে (ক্যানসার, ডায়াবেটিস, লিভার ও কিডনিজনিত সমস্যা ইত্যাদি) এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আরও গুরুতর লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

লেখক: ডা. কাকলী হালদার, এমবিবিএস, এমডি (মাইক্রোবায়োলজি) সহকারী অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।

৬ দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা

টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতিতে দিনভর দুর্ভোগ

শৌচাগার সুবিধা: হাসপাতালে বিড়ম্বনায় প্রতিবন্ধীরা

ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৫৬৫

এইডস দিবসের আলোচনা: চলতি বছর দেশে সর্বোচ্চ এইডস রোগী শনাক্ত

ডেঙ্গুতে আরও ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৬১০

ডেঙ্গু: এক দিনে মারা গেল আরও ৫ জন, নভেম্বরে সর্বোচ্চ মৃত্যু

গলা ও বুক জ্বালাপোড়া সমস্যা: কেন হয় এবং প্রতিরোধে করণীয়

শীতে ত্বকের যত্ন ও চর্মরোগ থেকে পরিত্রাণের উপায়

শীতকালীন বিষণ্নতা কাটাতে যা করবেন