হোম > পরিবেশ

সমুদ্রের গ্রাস থেকে বাঁচতে একাই ‘সুন্দরবন’ গড়ছেন ইন্দোনেশিয়ার নারী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

নৌকায় করে নিজের লাগানো ম্যানগ্রোভ গাছের বনে ঘুরছেন পাসিজাহ। ছবি: সংগৃহীত

পাসিজা, ইন্দোনেশিয়ার সেন্ট্রাল জাভা প্রদেশের ৫৫ বছর বয়সী এক নারী। প্রতিদিন সকালে তাঁর ঘুম ভাঙে সমুদ্রের শব্দে। বিষয়টি শুনতে রোমান্টিক মনে হলেও পরিস্থিতি ঠিক উল্টো। সমুদ্র উপকূলে রেজোসারি সেনিক নামের এই ছোট গ্রামে তাঁর বাড়িটিই এখন একমাত্র টিকে থাকা ঘর। জাভার উত্তর উপকূলে একসময় গ্রামটি শুষ্ক ভূমিতে থাকলেও এখন পুরোটাই জলমগ্ন।

গত কয়েক বছরে পাসিজার প্রতিবেশীরা তাঁদের ঘরবাড়ি, খেত-খামার ছেড়ে চলে গেছেন। কারণ সমুদ্র ক্রমশ এগিয়ে আসছে। কিন্তু পাসিজা ও তাঁর পরিবারের এখনই চলে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। ৩৫ বছর ধরে যে বাড়িতে পাসিজা থাকছেন, তার দেওয়ালের চারপাশ দিয়ে পানি বয়ে যায়। বাইরে পা রাখলেই পা ভিজে যায় পানিতে। বাঁশ এবং একটি ভাঙা বিদ্যুতের খুঁটি দিয়ে বাড়ির চারপাশে বেড়া দেওয়া হয়েছে। বাড়ির ভেতরের মেঝে উঁচু করা হয়েছে, যাতে পানি না ঢোকে।

সবচেয়ে কাছের শুকনো জমি প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। আর নিকটতম শহর ডেমাকের দূরত্ব ১৯ কিলোমিটার। সেখানে যাওয়ার একমাত্র উপায় নৌকা। ইন্দোনেশিয়া হাজার হাজার দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি দ্বীপপুঞ্জ। দেশটির উপকূলরেখার দৈর্ঘ্য প্রায় ৮১ হাজার কিলোমিটার। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ভাঙনের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া, জলবায়ুবিদ্যা ও ভূপদার্থবিদ্যা সংস্থার জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক কর্মকর্তা কাদারসাহ রয়টার্সকে জানান, ১৯৯২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশটির উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বছরে গড়ে ৪ দশমিক ২৫ মিলিমিটার হারে বেড়েছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই হার আরও বেড়েছে।

কাদারসাহ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের একটি লক্ষণ হলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি।’ তিনি আরও জানান, কিছু ছোট দ্বীপ ইতিমধ্যেই হারিয়ে গেছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভূগর্ভস্থ পানি অতিরিক্ত মাত্রায় তোলার কারণে জাভার উত্তর উপকূলে ভূমি দেবে গেছে। রাজধানী জাকার্তায় এই সমস্যা বিশেষভাবে প্রকট। প্রায় ১ কোটি মানুষ এই শহরে বাস করে।

ইন্দোনেশীয় কর্তৃপক্ষ এই সমস্যা সমাধানে মেগা প্রকল্পের দিকে ঝুঁকছে। এর মধ্যে একটি হলো ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রপ্রাচীর। এটি বান্তেন ও পূর্ব জাভা প্রদেশের মধ্যে উত্তর উপকূল বরাবর নির্মিত হবে।

এদিকে, পাসিজা এবং তাঁর পরিবার সমুদ্রের করাল গ্রাস থেকে বাঁচতে প্রকৃতির ওপরই নির্ভর করছেন। গত ২০ বছর ধরে তিনি প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের প্রায় ১৫ হাজার ম্যানগ্রোভ গাছ লাগিয়েছেন। বিষয়টি অনেকটা যেন বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলে অবস্থিত প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন গড়ে তোলার কাজ।

পাসিজা প্রতিবছর যদি গড়ে ১৫ হাজার গাছ লাগিয়ে থাকেন, তাহলে ২০ বছরে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখে। অর্থাৎ, ছোটখাটো একটি ম্যানগ্রোভ বনই গড়ে তোলার কাজ করেছেন তিনি। ২০২৩ সালের আগের ১৬ বছরে বাংলাদেশে অন্তত ১৬টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত করেছে। এর অন্তত অর্ধেক ঝড় বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনকে আঘাত করে বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়েছে। ঝোড়ো হাওয়া আর জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতায় সুন্দরবনের গাছপালা, প্রাণী আর অবকাঠামো বারবার ক্ষতির মুখে পড়েছে। কিন্তু প্রতিবার সুন্দরবন যেন বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অধিবাসীদের রক্ষায় নিজের ক্ষতি পুষিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যাই হোক, পাসিজা যেন ইন্দোনেশিয়ায় নিজ গ্রামের আশপাশে আরেকটি সুন্দরবন গড়ে তোলার কাজ করে চলেছেন। প্রতিদিন তিনি নীল প্লাস্টিকের ড্রাম দিয়ে তৈরি একটি নৌকায় করে ম্যানগ্রোভ চারা পরিচর্যা করতে এবং নতুন চারা লাগাতে যান। বুক-সমান নীলচে-ধূসর পানিতে নেমে তিনি এই কাজ করেন।

পাসিজা বলেন, ‘বন্যার পানি ঢেউয়ের মতো আসে, ধীরে ধীরে, একবারে নয়। পানি বাড়তে শুরু করার পর আমি বুঝতে পারলাম যে, আমার ম্যানগ্রোভ গাছ লাগানো দরকার, যাতে সেগুলো ছড়িয়ে পড়ে এবং বাড়িটিকে বাতাস ও ঢেউ থেকে রক্ষা করতে পারে।’

পাসিজা ও তাঁর পরিবার ছেলেদের ধরা মাছ নিকটতম বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাঁরা বলেন, যত দিন ঢেউ আটকে রাখতে পারবেন, তত দিন তাঁরা সেখানেই থাকবেন। পাসিজাহ বলেন, ‘এখানে বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন নিয়ে আমার এখন আর কোনো উদ্বেগ নেই, যেহেতু আমি থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই আমরা একবারে একটি প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করব।’

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

ঢাকায় আজ ছুটির দিনে আবহাওয়া কেমন থাকবে জানা গেল পূর্বাভাসে

২১ নভেম্বরের পর ভূমিকম্পে কতবার কাঁপল বাংলাদেশ

বায়ুদূষণে দিল্লিকে হারিয়ে শীর্ষে ঢাকা, খুব অস্বাস্থ্যকর বাতাসে যা করতে হবে

ঢাকার তাপমাত্রা আজও ১৭ ডিগ্রির ঘরে

এবার ৪.১ মাত্রার ভূমিকম্পে কাঁপল দেশ

শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল, দিনাজপুরে তাপমাত্রা নামল ১১ ডিগ্রিতে

বায়ুদূষণের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ঢাকা, দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা দক্ষিণ পল্লবীর

ঢাকার তাপমাত্রা ১৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস

বঙ্গোপসাগরে ফের ভূমিকম্প, উৎপত্তি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণে

রাজধানীর বাতাসে বাড়ছে দূষণ, সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ইস্টার্ন হাউজিংয়ে