এই শীতে মৌসুমী ঝড়ের যে মর্মান্তিক গল্পটি বলা হয়নি, সেটি হলো বহু গাছের মৃত্যু! ব্রিটেনে ঝড়ের দাপটে এ মৌসুমে ৪০ লাখের বেশি গাছ উপড়ে পড়েছে। আরও দুটি শীতকালীন ঝড়ের আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদেরা।
বন ব্যবস্থাপকেরা সতর্ক করেছেন, এরই মধ্যে ঝড়ে বিপর্যস্ত প্রকৃতি। আসছে ডুডলি এবং ইউনিসের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
ফরেস্ট রেঞ্জার রিচার্ড ট্যানার বলেন, যারা কখনো সত্যিকারের যুদ্ধক্ষেত্র দেখেননি, উইন্ডারমেরের পশ্চিম তীর এখন তাঁদের অভিজ্ঞতা নেওয়ার একটি ক্ষেত্র। সেখানে যান, তাহলে আপনারা যুদ্ধের দৃশ্যই দেখতে পাবেন। মনে হবে যেন বোমা ফেলা হয়েছে। চারদিকে পতিত গাছের বিশাল শিকড়ের ঝাড়, কিছু জায়গায় দুমড়ে মুচড়ে পড়ে আছে বিশাল বিশাল গাছ। কিছু গাছ মাটি থেকে উপড়ে গিয়ে পাথরের ওপর পড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। একটা জায়গাতেই আমরা হাজার হাজার গাছ হারিয়েছি।
ট্যানার এক দশক ধরে ন্যাশনাল ট্রাস্টের সাউথ লেক দেখাশোনা করছেন। সেখানে রে ক্যাসেলের ক্রেস্টেড বিচ ছিল ব্রিটেন এবং আয়ারল্যান্ডের মধ্যে সবচেয়ে বড়। আরওয়েন ঝড় ঘণ্টায় ৯০ মাইল বেগে বয়ে গেছে এই এলাকার ওপর দিয়ে।
২০২১ সালের নভেম্বরে আরওয়েন ঝড়ে এক রাতেই এক তৃতীয়াংশের বেশি গাছ তছনছ হয়ে গেছে। এর মধ্যে কয়েক ডজন বহু প্রাচীন ওক এবং ইয়ু গাছ ছিল। অবস্থা এখনো ভয়ঙ্কর। হাজার হাজার গাছ পতন্মুখ, ভারসাম্যহীন। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের এখনই ফিরে আসার অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না।
কেলভিন আর্চার স্কটিশ সীমান্ত থেকে মিডল্যান্ডস পর্যন্ত এবং উভয় উপকূল পর্যন্ত ট্রাস্টের সব বন দেখাশোনা করেন। তিনি বলেন, দাতব্য সংস্থাটির তত্ত্বাবধানে থাকা এক চতুর্থাংশ—হাজার হাজার—গাছ উপড়ে পড়ে গেছে।
ঝড়গুলো সর্বাধিক শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়েছিল মূলত স্কটল্যান্ডের ওপর। নভেম্বরের আরওয়েন ৪ হাজার হেক্টর বনভূমি বলতে গেলে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে আনুমানিক 8০ লাখ গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এরপর মালিক এবং কোরি ঝড়ের আঘাতে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্কটিশ বনায়নের অপারেশনাল ডেলিভারির প্রধান ডগ হাউইসন হলেন বলছেন, এই শীতে ঝড়ের সংখ্যা ‘নজিরবিহীন’। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকেই এর জন্য দায়ী মনে করা হচ্ছে।
তবে এখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, বন্যপ্রাণীর আবাস্থলের সংকট তৈরি হবে। ফলে পতিত গাছগুলোই যত্ন করে রাখার চিন্তাভাবনাও চলছে। বন আগের অবস্থায় ফিরতে ৪০ থেকে ৫০ বছর লেগে যেতে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।